‘এটিই অ্যাশেজ’, ‘৫–০’: অ্যাশেজের আগে কথার যত লড়াই
এবারের অ্যাশেজ হতে পারে সবচেয়ে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’—ইংলিশ ফাস্ট বোলার জেমস অ্যান্ডারসন অন্তত এটাই মনে করেন। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট লড়াই যখন থেকে ‘অ্যাশেজ’ নাম নিয়েছে, তখন থেকেই এ দুই দলের জন্য এটি যেন প্রাণ পাত করা লড়াই। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই। এখানে কেউ কারও দিকে তাকিয়ে হাসবে না, লক্ষ্য থাকবে কেবল একে অন্যকে ঘায়েলের। মাঠের লড়াইয়ের আগেই অ্যাশেজ দুই শিবিরের মধ্যে শুরু হয়ে যায় কথার লড়াই। কথা দিয়েই প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে ধাক্কা দেওয়ার সেই প্রতিযোগিতা এবারের অ্যাশেজে তুলামূলক কম বলেই কি অ্যান্ডারসনের এমন কথা!
তবু অ্যাশেজ বলে কথা! ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়া টেস্টের লড়াইয়ে নামবে আর বচনামৃতের জন্ম হবে না, এমনটা হয় নাকি! ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ এই অ্যাশেজেও মাঝেমধ্যেই দুই দলের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা মেতে উঠছেন কথার লড়াইয়ে। আজ এজবাস্টনে অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার আগে চলুন নজর ফেরানো যাক এমন কথামালায়...
কোনো বন্ধুত্ব নয়
তাদের ক্রিকেটের বাইরে না জানাটাই আমার ভালো লাগে। হ্যাঁ, আমি তাদের বন্ধু হতে চাই না। প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখতে চাই, লড়াইয়ে নামতে চাই।
হালে আইপিএল বা অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের বদৌলতে ক্রিকেটাররা একে অন্যের খুব কাছাকাছি অবস্থান করেন। সারা বছরই দেখা হচ্ছে সবার মধ্যে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটাও এখন হয় খুব আঁটসাঁট সূচির মধ্যে। অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা একই দলে সতীর্থ হিসেবে খেলছেন, এমন উদাহরণও কম নয়। তবে ইংলিশ পেসার জেমস অ্যান্ডারসন অস্ট্রেলীয়দের চেয়ে একটু দূরেই থাকতে চান।
রোমাঞ্চের নাম অ্যাশেজ
এটি এমনই রোমাঞ্চকর, যা দেখলে মনে হয়, এরপর আর কখনো এমন কিছুর দেখা মিলবে না। এটিই খেলা। এটিই অ্যাশেজ
অ্যাশেজ মানেই রোমাঞ্চ, অ্যাশেজ মানেই ক্রিকেটে ভিন্ন কিছু। এটা মনেপ্রাণেই বিশ্বাস করেন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া দলের ক্রিকেটাররা। দ্য প্লেয়ার্স ট্রিবিউনে লেখা এক কলামে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস অ্যাশেজ কী, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে।
ব্রড-ওয়ার্নার দ্বৈরথ
সত্যি কথা বলতে, এ নিয়ে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই। আগে সে (ব্রড) দলে জায়গা পাক। এরপর মাঠে নেমে দেখব কীভাবে সামাল দেওয়া যায়
২০১৯ সালের অ্যাশেজে ডেভিড ওয়ার্নারের জন্য রীতিমতো বিভীষিকা হয়ে হাজির হয়েছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড। ইংল্যান্ডের মাটিতে হওয়া সেই সিরিজে ৫ টেস্টে ৭ বার ব্রডের শিকারে পরিণত হন ওয়ার্নার। সব মিলিয়ে ইংলিশ পেসারের বলে ১৪ বার আউট হয়েছেন ওয়ার্নার, যা অস্ট্রেলিয়ান এই বাঁহাতির এ ক্যারিয়ারে নির্দিষ্ট একজন বোলারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বাজে রেকর্ড। ব্রড এবারও তাঁর অপেক্ষায়। তবে ওয়ার্নার এ নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। উল্টো খোঁচাই দিয়েছেন ব্রডকে।
তাহলে সেটি কী ছিল
সত্যিই কি জৈব সুরক্ষাবলয় ছিল সেটি? তাদের তো গলফও খেলতে দেওয়া হয়েছিল। ৪-০-এর অজুহাত হতে পারে নাকি এটি? সিরিজটি দারুণ ছিল।
২০২০-২১ সালের অ্যাশেজ অস্ট্রেলিয়ায় হয়েছিল করোনা মহামারির রেশ থাকতেই। দুই দলকেই থাকতে হয়েছিল জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে। প্রায় ‘বন্দী’ অবস্থায় খেলা সেই সিরিজকে সত্যিকারের অ্যাশেজ বলতে নারাজ ইংলিশ ফাস্ট বোলার স্টুয়ার্ট ব্রড। তাঁর কথার চরম বিরোধিতাই করেন অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক। ইংল্যান্ড সে সিরিজ ৪-০ ব্যবধানে হেরেছিল বলেই ব্রডকে স্টার্কের এই খোঁচা।
এবং ব্রডের জবাব...
স্টার্কি (স্টার্ক) কোভিডের সময়ে দেশের বাইরে কয়টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে? এই হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছি। একটাও তো খেলেনি, নাকি
স্টার্কের কথা সহজে হজম করে যাননি ব্রডও।
ইংল্যান্ডে মাটিতে অ্যাশেজ জেতার আকুতি
শেষ ইচ্ছা পূরণের তালিকাগুলোর মধ্যে এটায় (ইংল্যান্ডে অ্যাশেজ জয়) টিকচিহ্ন দিতে পারা বিশাল ব্যাপার হবে। আগেরবার আমরা খুব কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু সীমানা অতিক্রম করতে পারিনি
২০০১ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে সর্বশেষ অ্যাশেজ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ ওয়াহর নেতৃত্বাধীন শক্তিশালী সেই দলের পর আরও পাঁচবার ইংল্যান্ডে অ্যাশেজ খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সিরিজ জেতা হয়নি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে টিম পেইনের নেতৃত্বে গৌরবময় ‘ছাইদানি’ (অ্যাশেজ) নিয়ে ফিরতে পারলেও সিরিজ শেষ হয়েছিল ২-২ সমতায়। ইংল্যান্ডে তিনবার অ্যাশেজ খেলেছেন স্টিভেন স্মিথও। সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ওই তিন অ্যাশেজ মিলিয়ে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেও সিরিজ জিততে না পারার আক্ষেপ রয়েই গেছে তাঁর। এবার আর হতাশ হয়ে ফিরতে চান না তিনি। ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ জেতাকে নিজের শেষ ইচ্ছাই বলেছেন স্মিথ।
মিস হিটে ছক্কা, ইংল্যান্ড পাক ‘অক্কা’
ভাবার মতো বিষয়ের মধ্যে বাউন্ডারি ছোটখাটো ব্যাপার। এ নিয়ে মাথা ঘামানোর কী আছে? কোনো দরকার নেই। (বাউন্ডারি ছোট হলে) মিস হিটে ছক্কা হবে, হোক। আধুনিক ক্রিকেটে মিস হিটে প্রচুর ছক্কা হয়। এটা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। তারা জানে, আমরা বাউন্সার দেব। ওদের বাহু আর বুক তাক করে বোলিং করব। সুতরাং চেস্ট গার্ড (বুকের ওপর পরিহিত বিশেষ নিরাপত্তা সরঞ্জাম) ঠিকমতো পরে রেখো
এবারের অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড মাঠের বাউন্ডারি ছোট করবে বলে খবর বেরিয়েছে। নিজেদের ‘বাজবল’ স্টাইলকে সাফল্যের মুখ দেখাতেই মূলত এমন উদ্যোগ। ব্যাপারটাকে বাঁকা চোখেই দেখছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ইয়ান হিলি। একই সঙ্গে নিজেদের পেস আক্রমণের হুমকিটাও দিয়ে রেখেছেন তিনি।
ইংল্যান্ডের সামনেই বিপদ!
ইংল্যান্ড এখন যে স্টাইলে খেলে, সেটিতে ফ্ল্যাট উইকেট প্রয়োজন। আমরা শুনেছি, ইংল্যান্ড ফ্ল্যাট উইকেট চায়। শুনছি, তারা বাউন্ডারিও ছোট রাখতে চায়। কিন্তু আমার মনে হয়, তারা যদি এমন উইকেটে খেলে, তাহলে তাদের পক্ষে অস্ট্রেলিয়ার ২০ উইকেট নেওয়া কঠিনই হবে
এবারের অ্যাশেজ সিরিজে জফরা আর্চার নেই। নেই স্পিনার জ্যাক লিচ। শুধু স্টুয়ার্ট ব্রড, জেমস অ্যান্ডারসন, ওলি রবিনসনরা কতটা প্রভাব রাখতে পারবেন অস্ট্রেলিয়া দলের ওপর? তার ওপর রিকি পন্টিং মনে করেন, নিজেদের ‘বাজবল’ স্টাইলের কারণে ইংলিশ উইকেট হবে কিছুটা ফ্ল্যাট। ব্যাটিং উপযোগী, যা ইংলিশ বোলারদের অসুবিধা আরও বাড়াবে।
৫-০
আমি দেখতে পাচ্ছি, প্রতিটি টেস্টে শেষ পর্যন্ত দারুণ লড়াই হবে। তবে অস্ট্রেলিয়া প্রতিটি ম্যাচই জিতবে। আমি নিশ্চিত, লোকে আমার কাছে ৫-০ শুনতে চায়। আমিও তাদের হতাশ করতে চাই না
নিজের বিখ্যাত ৫-০-এর ভবিষ্যদ্বাণী ঠিকই করেছেন গ্লেন ম্যাকগ্রা।