ব্যাটিংয়ে ‘উন্নতি’র পর রেকর্ড হারে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং শক্তি দেখল বাংলাদেশ
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ ম্যাচেই ‘সবচেয়ে ভালো’ ব্যাটিংটা করল বাংলাদেশ, তা বলাই যায়। ওয়ানডে সিরিজে যা হয়নি, এবার হলো সে সব-প্রথম ছক্কা, প্রথম কোনো ব্যাটারের ফিফটি, প্রথমবার ১০০ পেরোনো। নিগার সুলতানার ৬৪ বলে ৬৩ রানের ইনিংসে ১২৬ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং শক্তিটা দেখল তারা।
দুই ওপেনার বেথ মুনি ও অধিনায়ক অ্যালিসা হিলির জোড়া ফিফটি, ১২৭ রানের ওপেনিং জুটিতে ১০ উইকেট বাকি রেখেই প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতে সিরিজে এগিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার টি-টোয়েন্টিতে ১০ উইকেটে হারল বাংলাদেশ (আগের ঘটনা আগের সিরিজেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে)।
৩৪ বলে ফিফটি পূর্ণ করা হিলি অপরাজিত ছিলেন ৪২ বলে ৬৫ রানে। ম্যাচের শেষ ওভারে গিয়ে ৩৫ বলে ফিফটি পাওয়া মুনির রান ৩৬ বলে ৫৫। অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ১৩ ওভারের মধ্যেই। মানে বাকি ছিল ৪২টি বল। এর আগে কখনোই এত রানের সম্বল নিয়ে এত বল বাকি থাকতে হারেনি বাংলাদেশ।
১২৭ রানের সম্বল নিয়ে লড়াই করতে হলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল দ্রুত উইকেট। দ্রুত বা পরে কী, কোনো উইকেটেরই দেখা পায়নি তারা। মারুফা আক্তারের করা প্রথম ওভারে এসেছিল মাত্র ১ রান। কিন্তু নাহিদা আক্তারের করা পরের ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে দুই চার মেরে হিলি আভাস দেন-বাংলাদেশের জন্য কী অপেক্ষা করছে। দুজন মিলে বাংলাদেশ বোলারদের রীতিমতো ‘শাস্তি’ দিয়েছেন। সে অর্থে কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেননি কেউ।
টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ছিল ওয়ানডে সিরিজের মতোই। ফারজানা হকের জায়গায় সুযোগ পাওয়া দিলারা আক্তার ম্যাচের প্রথম বলেই কাভার পয়েন্টে ক্যাচ তোলেন সোফি মলিনিউকে কাট করতে গিয়ে। এ নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে তৃতীয়বার ম্যাচের প্রথম বলেই উইকেট হারাল বাংলাদেশ। দিলারা তবুও ১ বল খেলেই আউট, সোবহানা মোস্তারি তো কোনো রান না করে ফেরার আগে খেলেন ৮ বল।
২ ওভার শেষে ২ রানে ২ উইকেট-গল্পটা তো বাংলাদেশের জন্য গত কয়েক দিনে পুরোনোই। নামার পর প্রথম বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে নিগার যেভাবে মিস করেছিলেন, তাতে বাংলাদেশের ব্যাটিং দুর্দশার আরেকটি নতুন অধ্যায় লেখা হবে বলেই মনে হচ্ছিল। সেটি হয়নি নিগারের ব্যাটিংয়ের কারণেই।
তৃতীয় উইকেটে মুর্শিদা খাতুনের পর ফাহিমা খাতুনের সঙ্গে নিগারের দুটি ফিফটি জুটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ তুলেছে ৪ উইকেটে ১২৬ রান। টি-টোয়েন্টিতে মাত্র দ্বিতীয়বার একই ম্যাচে দুটি ফিফটি জুটির দেখা পেল বাংলাদেশ।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ২৮ রান তুললেও বাংলাদেশের ইনিংস গতি পায় এরপর গিয়ে। মাঝের ১০ ওভারে স্বাগতিকেরা তোলে ৭৩ রান। ১১ তম ওভারে জর্জিয়া ওয়ারেহামের বলে এলবিডব্লু হন ২৭ বলে ২০ রান করা মুর্শিদা। ফাহিমা অবশ্য থামেন একেবারে শেষ ওভারে গিয়ে। ২১ বলে ২৭ রানের ইনিংসে ২টি চারের সঙ্গে তিনি মারেন ১টি ছক্কা-১৬ তম ওভারে গ্রেস হ্যারিসকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে।
মাঝে ৩৮ রানে জীবন পাওয়া নিগার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৭ বলে। ইনিংসে বাংলাদেশ অধিনায়ক মারেন ৭টি চার। শুরুতে নড়বড়ে মনে হচ্ছিল, তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে নিগার এগিয়েছেন দারুণভাবে। কিন্তু ম্যাচশেষে বাংলাদেশ আরেকবার বুঝেছে টি-টোয়েন্টির পুরোনো সূত্রটা-টপ অর্ডারের কারও বড় ইনিংস হচ্ছে বড় স্কোরের অন্যতম পূর্বশর্ত। সেটি করতে না পারলে হয়তো ১০০-পেরোনো স্কোর গড়া যায়, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সঙ্গে লড়াই করা যায় না আর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ নারী দল: ২০ ওভারে ১২৬/৪ (নিগার ৬৩ *, ফাহিমা ২৭, মুর্শিদা ২০; মলিনিউ ২/২৫, ওয়ারেহাম ১/১৮, ভ্লাইমিঙ্ক ১/৩০)
অস্ট্রেলিয়া নারী দল: ১৩ ওভারে ১২৭/০ (হিলি ৬৫ *, মুনি ৫৫ *)
ফল: অস্ট্রেলিয়া নারী দল ১০ উইকেটে জয়ী।