বিপিএলেও ‘ফিনিশার’ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না নুরুল, ইয়াসির, আকবররা
ঘরোয়া ক্রিকেটে টি–টোয়েন্টি বলতে বিপিএল। ম্যাচ খেলে নিজেদের সামর্থ্য যাচাইয়ের খুব বেশি সুযোগ পাচ্ছেন না বাংলাদেশের ফিনিশাররা।
অনুশীলনের সময় নেটে ব্যাটিং করা পছন্দ নয় আকবর আলীর। বদ্ধ জায়গায় ব্যাটিং করে মাঠের আবহটা ঠিক পাওয়া যায় না। আসলে তাঁর অনুশীলনটাকে ঠিক ব্যাটিংও বলা যায় না। হিটিং বলাই শ্রেয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁকে বেশির ভাগ সময় নামতে হয় ইনিংসের শেষের দিকে। তখন চাহিদাই থাকে চার-ছক্কার। সে জন্য যে অনুশীলন দরকার, সেটা নেটের চেয়ে খোলা মাঠে করতে পারলেই ভালো। উড়িয়ে মারা বলটা কত দূর গেল, সেটা দেখেও তো কিছুটা আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায়!
যদি কেউ দুটি ম্যাচ জেতাতে পারেন, তাহলেই তিনি খুশি হতে পারেন। দুটি থেকে তিনি তিনটি ম্যাচ শেষ করে আসার স্বপ্ন দেখবেন, এরপর চারটি। এভাবে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বাড়বেনুরুল হাসান, জাতীয় দলের ক্রিকেটার
আকবরের আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্য ওই অনুশীলনই ভরসা। শুধু আকবর নন, বিশ ওভারের খেলায় যাঁদের স্বপ্ন ফিনিশার হওয়ার, তাঁদের সবারই একই অবস্থা। ঘরোয়া পর্যায়ে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ হয় শুধু বিপিএলে। সেখানে লিগ পর্বের ১২টি ম্যাচের মধ্যে ফিনিশারের দায়িত্বে থাকা খেলোয়ারদের ম্যাচ শেষ করে আসার সুযোগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেলে না। যে কয়টা ম্যাচে সুযোগ পান, তার মধ্যেই সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে হয়।
জাতীয় দলে দায়িত্বটা নুরুল হাসানের। বিপিএলে যেহেতু ফিনিশারদের ম্যাচ শেষ করে আসার সুযোগ কম, কেউ অন্তত দুইটি ম্যাচ জেতাতে পারলেও সে ক্রিকেটার তাঁর কাজটা ঠিকঠাকমতো করছেন বলে মনে করেন তিনি, ‘যদি কেউ দুটি ম্যাচ জেতাতে পারেন,তাহলেই তিনি খুশি হতে পারেন। দুটি থেকে তিনি তিনটি ম্যাচ শেষ করে আসার স্বপ্ন দেখবেন, এরপর চারটি। এভাবে ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস বাড়বে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক বেশি কাজে দেবে।’
টি-টোয়েন্টিতে ফিনিশার হিসেবে দক্ষ হতে ম্যাচ খেলার বিকল্প নেই। কারণ, ইনিংসের শেষ দিকে নামলে থিতু হওয়ার সুযোগ কম, এসেই মারতে হয়। সেটা করতে গিয়ে কখনো সফল হবেন, কখনো ব্যর্থ। ছক্কা মারতে গিয়ে কখনো ক্যাচ উঠবে, কখনো হবেন বোল্ড। আবার ওই মেরে খেলার মানসিকতাই দলকে ম্যাচ জেতাতে সাহায্য করে। সেটাও যে বড় কিছু হতে হবে, তা নয়। কখনো ১০ বলে ২৫ রানের ইনিংসও কার্যকর হতে পারে। টুর্নামেন্ট শেষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় হয়তো তাঁদের নাম থাকবে না। ফিনিশারদের ব্যাটিংটাই এমন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে ফিনিশার তৈরির কাজ অনেকটা অনুশীলনেই সীমাবদ্ধ। বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো মোটা অঙ্কের টাকায় বিদেশ থেকে ফিনিশার খুঁজে আনে। তার মধ্যেও এবারের বিপিএলে কিছু ইনিংস খেলার সুযোগ পেয়েছেন শামীম হোসেন, ইয়াসির আলী ও নুরুলরা।
অভিজ্ঞদের মধ্যে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, শুভাগত হোম চৌধুরীদের দেখা গেছে লোয়ার অর্ডারে হিটারের ভূমিকায়। তবে বিপিএলের বাইরে দেশে আর কোনো টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট না থাকায় অভিজ্ঞ–অনভিজ্ঞ সবার জন্যই নিজেকে সেভাবে তৈরি করাটা কঠিন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে ফিনিশার তৈরির কাজ অনেকটা অনুশীলনেই সীমাবদ্ধ। বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো মোটা অঙ্কের টাকায় বিদেশ থেকে ফিনিশার খুঁজে আনে। তার মধ্যেও এবারের বিপিএলে কিছু ইনিংস খেলার সুযোগ পেয়েছেন শামীম হোসেন, ইয়াসির আলী ও নুরুলরা।
ঘরোয়া মৌসুমে টি–টোয়েন্টি খেলার সুযোগ বলতে বিপিএলের হাতে গোনা কয়েকটি ম্যাচ। ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব বেশি ম্যাচ খেলা হয় না বলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টি–টোয়েন্টি বোঝাটাই একটা সমস্যা। তার মধ্যে ফিনিশারদের কথা আলাদা করে বলতে হচ্ছে কারণ, যে কয়টা ম্যাচ হয়, সেগুলোতেও অনেক সময় ফিনিশারদের ভূমিকা রাখারই প্রয়োজন হয় না। যে কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য এই কাজে তাঁরা অপ্রস্তুতই থেকে যান। জাতীয় দলও তাই অন্য জায়গার ব্যাটসম্যানদের দিয়েই ফিনিশারের ঠেকার কাজ চালায়।
বিপিএলে যাঁরা একটু দ্রুত রান তুলতে পারেন, থিতু হতে কম সময় নেন, তাঁদের জায়গা হয়ে যায় জাতীয় দলের লোয়ার মিডল অর্ডারে। আফিফ হোসেনের কথাই ধরুন, দ্রুত রান তুলতে পারেন বলেই ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে তাঁর ভূমিকা ফিনিশারের। অথচ বিপিএলে তিনি খেলেন টপ অর্ডারে। এবার তো নুরুলও তাঁর সেরা ইনিংসটা খেলেছেন চারে নেমে। টুর্নামেন্টের শুরুতে ফিনিশার হিসেবে ব্যর্থ হওয়াতেই সর্বশেষ দুই ইনিংসে চারে খেলেছেন রংপুরের অধিনায়ক। দুই ম্যাচেই দলের জয়ে বড় অবদান তাঁর।
তাহলে ফিনিশার তৈরি হবে কী করে? আকবর যেমন তাকিয়ে থাকেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দিকে। ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টের শেষ ১০ ওভারের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে তিনি নাকি কল্পনায় টি-টোয়েন্টির শেষ ৫ ওভারের ব্যাটিংটা মিলিয়ে নেন, ‘টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট তো আমাদের বেশি নেই। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে স্লগ ওভারে সেটা মাথায় নিয়েই খেলতে হয়। ওটাই একমাত্র জায়গা, যেখানে সাদা বলে আমরা টানা অনেক ম্যাচে খেলার সুযোগ পাই।’
জাতীয় দলে যেহেতু বিশেষজ্ঞ ফিনিশারের অভাব, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দরজায় কড়া নাড়তে এই একটা সুযোগ ব্যাটসম্যানদের জন্য—নিজেকে ফিনিশার হিসেবে গড়ে তোলা। কেউ চার–ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য দেখাতে পারা মানেই তো তাঁর মধ্যে ফিনিশারের বীজ লুকিয়ে আছে। সমস্যা হলো, দেশের ক্রিকেটে সেই সুযোগ খুবই সীমিত।