টেস্টের ব্যর্থতা নিয়ে প্রধান নির্বাচকের দুই দুঃখ
মধুচন্দ্রিমার পর্ব ওয়ানডে সিরিজেই শেষ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে সিরিজের দল যদিও মিনহাজুল আবেদীনের নির্বাচক কমিটি করে দিয়ে গেছে, এই দুই দলেই গাজী আশরাফ হোসেনের নতুন নির্বাচক কমিটির আনা দুটো সিদ্ধান্ত বেশ প্রশংসিত হয়েছে। টি–টোয়েন্টি দল জাকের আলীকে ডাকা এবং তৃতীয় ওয়ানডের দল থেকে লিটন দাসকে বাদ দেওয়া।
সেই হাততালির রেশ মিলিয়ে না যেতেই শুরু হয়ে গেল টেস্ট সিরিজ। গাজী আশরাফ হোসেনের নির্বাচক কমিটি ঘোষিত দল দুই সিরিজেই হলো চরম ব্যর্থ। দায়টা অবশ্যই নির্বাচক কমিটির নয়, তবে তাঁদের নির্বাচিত দল কেন দুই টেস্টেই এত খারাপ খেলল, সেই প্রশ্নের উত্তর অন্তত তাঁদের জানাটা জরুরি।
এ নিয়েই কাল মুঠোফোনের কথোপকথনে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ শুরুতেই বলে দিলেন, ‘টি–টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলেও দুটো টেস্টে আমরা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারিনি। চট্টগ্রামের উইকেট অত ভাঙে না। অথচ সেখানেই এক বোলিং ছাড়া বাকি দুই বিভাগে আমরা প্রত্যাশার কাছাকাছিও যেতে পারিনি। টেস্টে মাত্র এক বিভাগে ভালো করলে যে রকম ফলাফল করার কথা, সে রকম ফলাফলই হয়েছে।’
গাজী আশরাফ জানান, সিলেট ও চট্টগ্রাম দুই টেস্টের কোনোটিতেই বাংলাদেশ হোম কন্ডিশনের সুবিধা নেয়নি। সিলেটে উইকেট ছিল সবুজ, স্পোর্টিং। চট্টগ্রামে ব্যাটিং সহায়ক। দুই দলের জন্যই সমান সুবিধা। কিন্তু এ রকম উইকেটে ঘরের মাঠেও যে বাংলাদেশের জন্য খেলাটা কঠিন হয়ে পড়ে, তার প্রমাণ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গতকাল শেষ হওয়া টেস্ট সিরিজ। এ নিয়ে একবাক্যে প্রধান নির্বাচকের মন্তব্য, ‘আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক রেখে সিরিজ খেললাম, যেখানে কোনো বাড়তি সুবিধা নেওয়া হয়নি। আর তাতেই দেশের ক্রিকেটের প্রকৃত চিত্রটা উঠে এল।’
সিলেট টেস্ট থেকে নেওয়া কোনো শিক্ষা আমরা চট্টগ্রামে কাজে লাগাতে পারিনি। এটাই আমার দুঃখের কারণ।
গাজী আশরাফের চোখে এর একটা কারণ হতে পারে যথাযথ প্রস্তুতির অভাব। এ রকম সিরিজের আগে সফরকারী দলকে প্রস্তুতি ম্যাচের সুযোগ দেওয়ার জন্য হলেও নিজেদের দলের কিছু ক্রিকেটার ম্যাচ অনুশীলনের সুযোগ পান। অনেক সময় নিজেরাও নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন। এবার সেসবের কিছুই ছিল না—সাদা বলের ক্রিকেট থেকে সরাসরি লাল বলের ক্রিকেট। তবে গাজী আশরাফ নিজেই পরে এই যুক্তি খণ্ডন করে বলেছেন, ‘আমি মনে করি যে সংস্করণ সামনে আসবে, খেলোয়াড়দের তখন সেই সংস্করণের খেলাটাই মাথায় ঢোকানো উচিত। অন্য চিন্তা বাদ দেওয়া উচিত। এখানেই বেশি গোলমাল হয়ে গেছে।’
জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়কের পর্যবেক্ষণ টেস্ট ক্রিকেটের টেম্পারামেন্ট বা মেজাজ, মনোযোগ, দক্ষতা এবং পরিস্থিতি সঠকভাবে বুঝতে পারা—বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাটসম্যনরা ব্যর্থ হয়েছেন, ‘সিলেট টেস্ট থেকে নেওয়া কোনো শিক্ষা আমরা চট্টগ্রামে কাজে লাগাতে পারিনি। এটাই আমার দুঃখের কারণ।’
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং উইকেটে শ্রীলঙ্কার বোলিংয়ের ধার তুলনামূলক কম থাকলেও ব্যাটসম্যানরা থিতু হয়েও পারেননি ইনিংস বড় করতে। এটাকে বলতে পারেন গাজী আশরাফের আরেকটি দুঃখ, ‘এক–দুটি ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে মুমিনুল, সাকিব ও লিটন প্রত্যেকেই তাদের রানটা তিন অঙ্কে নেওয়ার মতো অবস্থা তৈরি করে ফেলেছিল। নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিতে অন্তত দুটো ইনিংস তো তিন অঙ্কে যেতেই পারত। এটা না হওয়ায়ও আমার আক্ষেপ আছে।’
পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া সাদা বলের ক্রিকেট থেকে এসে লাল বলের ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়াটা যে কঠিন, সেটা জানেন তিনিও। তবে বলেছেন, ‘প্রস্তুতি কম থাকলেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বেশি করে করতে হবে।’
টেস্ট ক্রিকেট থেকে আপাতত চার মাসের মতো বিরতি। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর আগস্টের পাকিস্তান সফর দিয়ে আবার লাল বলের ক্রিকেটে ফেরার কথা বাংলাদেশের। তবে তার আগে কিছু বিষয় নিয়ে ভাবার অবকাশ আছে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচক, ‘একই সিরিজে তিন সংস্করণের ক্রিকেট আমাদের ভবিষ্যতেও খেলতে হবে। সেসব সিরিজের প্রস্তুতি কেমন হবে, কোচদের সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনার দরকার আছে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ নিশ্চয়ই এটা করবে। মাঝের সময়টায় জাতীয় দলের সঙ্গে যারা থাকবে না, তাদের প্রস্তুতিটাকেও যথাযথ নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’
জানা গেছে, ঈদের পরপরই এ নিয়ে জাতীয় দলের বাইরের ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ টাইগার্সের সঙ্গে আলোচনা করবে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ। তা ছাড়া জাতীয় দলের পাকিস্তান সফরের আগে বাংলাদেশ ‘এ’ দলেরও পাকিস্তান সফরের কথা আছে। এর বাইরেও চেষ্টা চলছে ‘এ’ দলের আরেকটি সফর আয়োজনের।
গাজী আশরাফের আশা, দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে উন্নতির জন্য ক্রিকেটারদের যত বেশি সম্ভব লাল বলে খেলার সুযোগ করে দেবে বিসিবি। তখন নির্বাচকদেরও সুযোগ বাড়বে ক্রিকেটারদের সামর্থ্য জানার, ‘আমরা চাই যত বেশি সময় সম্ভব যেন ওরা খেলতে পারে। বাইরে না যেতে পারলে নিজেদের মধ্যে প্রাণবন্ত উইকেটে খেলানোর চেষ্টা করতে হবে।’