বাংলাদেশ দলের নিরাপত্তায় ১ হাজার পুলিশ ও ১০০ ক্যামেরা
চেন্নাই থেকে দিল্লি হয়ে কানপুর—পুরো যাত্রাপথে ভারত সিরিজ কাভার করতে আসা বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল অখিল হিন্দু মহাসভার হুমকি। কানপুরে বাংলাদেশ–ভারত টেস্ট হতে দেবে না বলেছে সংগঠনটি।
গত পরশু গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামের রাস্তায় তাদের আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদের খবর যাত্রাপথেই জেনেছেন অনেকে। শঙ্কাটা আরও বাড়ে কানপুরে পৌঁছানোর পর। আগে থেকে বুকিং করে রাখা হোটেলেও বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী কাউকে রুম দিচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে অনেকে কানপুরের মুসলিম মালিকানাধীন হোটেলে উঠেছেন।
বাংলাদেশ দলের ভারত সিরিজের সূচি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই আলোচনায় অখিল হিন্দু মহাসভা। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন হচ্ছে বলে তাদের দাবি। সেটারই প্রতিবাদে কানপুরে বাংলাদেশের ম্যাচ হতে দেবে না বলে হুমকি দিয়ে আসছে সংগঠনটি। একই হুমকি তারা দিয়েছে মধ্যপ্রদেশের শহর গোয়ালিয়রে দুই দলের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ নিয়েও। এমন পরিস্থিতিতে আজ গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামের সামনে কঠোর নিরাপত্তাই চোখে পড়ল। মাঠের ভেতরেও পুলিশের ভিড়।
সিরিজ কাভার করতে আসা ভারতীয় সাংবাদিকেরাও নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে বেশ কৌতূহলী। তাঁরা পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। শুক্রবার থেকে শুরু টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের জন্য কী নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চাইছেন। তবে হিন্দু মহাসভা কোনো হামলা করতে পারে, এমন শঙ্কা উড়িয়েই দিচ্ছে স্থানীয় পুলিশ বিভাগ। এ নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিককে এক পুলিশ কর্মকর্তা হিন্দিতে যা বললেন তাঁর অনুবাদ, ‘দুটি লাঠি পড়লেই দেখবেন সব ঠিক।’
গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামের নেটে তখন অনুশীলন করছিল বাংলাদেশ দল। দূর থেকে নেট তিনটির দিকে তাকিয়ে অবশ্য খেলোয়াড়দের খুঁজে পেতে কষ্টই হচ্ছিল। শুধু নেট বোলার আর পুলিশই চোখে পড়ছিল। জানা গেছে, নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন মাঠ এবং হোটেল ছাড়া আর কোথাও না যান।
তিন ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। একটি হচ্ছে আইসোলেশন কর্ডন—যেটি মাঠ, পিচ ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা দিচ্ছে। বাকি দুটি মাধ্যমে প্যাভিলিয়ন এ স্টেডিয়ামের রাস্তাসহ আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।রাজেশ শ্রীবাস্তব, অতিরিক্ত ডিসিপি, উত্তর প্রদেশ পুলিশ
উত্তর প্রদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিসিপি রাজেশ শ্রীবাস্তব পুরো মাঠ পরিদর্শন করে টেস্ট ম্যাচের জন্য নেওয়া নিরাপত্তাব্যবস্থার একটা ব্যাখ্যা দিলেন, ‘তিন ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। একটি হচ্ছে আইসোলেশন কর্ডন—যেটি মাঠ, পিচ ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা দিচ্ছে। বাকি দুটি মাধ্যমে প্যাভিলিয়ন এ স্টেডিয়ামের রাস্তাসহ আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কর্ডনই তিন-চারটি ভাগে বিভক্ত। কাজ করছে ১ হাজার পুলিশ, ক্যামেরা রয়েছে ১০০–এর মতো।’
অখিল হিন্দু মহাসভার হুমকি নিয়ে তাঁকে খুব একটা উদ্বিগ্ন মনে হলো না, ‘হুমকি নিয়ে অনেক ধরনের তথ্য আছে। এগুলো কিছু বলা যাচ্ছে না। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। উত্তর প্রদেশ পুলিশের নিজস্ব মানে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো ফাঁকি দিয়ে কিছু করা অসম্ভব। তাই বলতে পারি কোনো উদ্বেগ নেই।’
অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে অন্যান্য প্রশ্নের সঙ্গে করা হয়েছে নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রশ্নও। অবশ্য এ ব্যাপারে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) ওপর পূর্ণ আস্থা আছে তাঁর, ‘নিরাপত্তা নিয়ে আমরা বিসিসিআইয়ের ওপরই আস্থা রাখছি। আমরা চিন্তিত নই।’