দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের পথে ‘ট্রাফিক জ্যাম’ মাহমুদউল্লাহর সর্বোচ্চটা কি নিতে পারছে বাংলাদেশ
‘মনে করুন, আপনার বাসা মাত্র ১৫ মিনিট দূরের পথ। কিন্তু ট্রাফিক জ্যামের কারণে আপনি প্রায় আড়াই ঘণ্টা আটকে রইলেন। ইনিংসটি দেখে তেমনই মনে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা জয় থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্বে ছিল, তবু অনেকটা সময় লেগে গেছে। শেষ পর্যন্ত তারা ১৪৯ রানে জিতেছে ঠিকই, একজন ব্যক্তি ট্রাফিক জ্যামের মতো বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ১১১ রানের ইনিংস খেলে আউট হওয়া মাহমুদউল্লাহ। হ্যাঁ, (দক্ষিণ আফ্রিকার) জয়টা একপেশে। কারণ, ব্যবধান ১৪৯ রানের, কিন্তু সেটি পেতে অনেক অনেক দেরি হয়েছে।’
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে গতকাল বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যম ‘ক্রিকবাজ’-এর সঞ্চালক এসব কথা বলেই ‘পোস্ট ম্যাচ শো’ অনুষ্ঠান শুরু করেন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার চিরায়ত ট্রাফিক জ্যামকে রূপক উদাহরণ হিসেবে টেনে তিনি এ কথা বলেছেন কি না, তা কে জানে! তবে উদাহরণটি কিন্তু মোক্ষম।
দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৮২ রান তাড়া করতে নেমে ৪২ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিণত হয় ৫ উইকেটে ৫৮। তখন মনে হয়েছিল, খুব দ্রুতই গুটিয়ে যাবে বাংলাদেশের ইনিংস। কিন্তু ছয়ে নামা মাহমুদউল্লাহ ১১১ বলে ১১১ রানের ইনিংসে বাংলাদেশের হার ঠেকাতে না পারলেও দক্ষিণ আফ্রিকার জয় যতটা সম্ভব বিলম্বিত করেছেন।
ক্রিকবাজের এ অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ মতামত রাখা ভারতের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরির প্রশংসা করেন। হার্শার সঙ্গে অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারতীয় লেখক ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের সাবেক টিম ডিরেক্টর জয় ভট্টাচার্য। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের একটু সমালোচনাই করেছেন। ২২ ওভার শেষে বাংলাদেশ ৮১ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও ইনিংসটি কীভাবে ৪৬.৪ ওভার পর্যন্ত এগিয়ে গেল, সেই প্রশ্ন রেখেছেন জয় ভট্টাচার্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা তেমন ‘সিরিয়াস ছিলেন না’ বলে একমত হন দুই বিশেষজ্ঞ।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রসঙ্গে শেষে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে কথা উঠতেই হার্শা সবার আগে লিটন দাসের স্কোর সামনে টেনে আনেন, ‘তাদের সহজাত স্ট্রোক প্লেয়ার ৪৪ বলে ২২ রান করেছে। তিন শ-র অনেক বেশি রান তাড়া করতে নেমে ৪৪ বলে ২২ আপনাকে কোথাও নিয়ে যাবে না। এটা অনেকটাই রেসিং ট্র্যাকে হাঁটার মতো।’
মাহমুদউল্লাহর প্রসঙ্গে হার্শা বলেছেন, ‘মাহমুদউল্লাহ ছয়ে যখন এসেছে, তখন ম্যাচ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তার ব্যাটিং দেখে সেটি মনে হয়নি। দেখুন, সে বিশ্বকাপে এর আগেও দুটি শতক পেয়েছে, কয়েকটি ফিফটিও আছে। সত্যি বলতে শুরুতে (বিশ্বকাপ) স্কোয়াডে তাকে বিবেচনা না করা আমাকে বিস্মিত করেছিল। কিন্তু এখন সে নিজের সামর্থ্যটা দেখাচ্ছে।’
হার্শা এরপর বলেন, ‘তাকে ব্যাটিং অর্ডারে ওপরেও তোলা হয়েছে।’ ‘আগে যেন কোন পজিশনে ব্যাট করেছে’—এ কথা বলে হার্শা জয় ভট্টাচার্যের দিকে তাকাতেই অনেকটা কৌতুকপূর্ণ চাহনিতে ভারতীয় লেখক উত্তর দেন, ‘আটে।’
সঞ্চালক এরপর জয় ভট্টাচার্যের কাছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাপারে জানতে চান। এশিয়া কাপের স্কোয়াডে তাঁকে না রাখা, বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও শুরুতে বিবেচনা না করা—এসব বিষয় সঞ্চালক তুলে ধরার পর জয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নেই, সেটা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল...কিন্তু তার বিশ্বকাপ রেকর্ড দেখুন, যদি তাকে দলে নেওয়াই হবে, তাহলে আটে কেন ব্যাটিং করাবে, এটা আমি বুঝি না।’
হার্শাও জয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, ‘দলে না নিলে অন্য কথা, কিন্তু যখন দলে নিলেন, তখন তাকে এমন জায়গা দেওয়া উচিত, যেখান থেকে তার সর্বোচ্চটা নেওয়া যায়। তার ছয়ে খেলাটা আমার ভালোই লাগে। কারণ, মুশফিকুর রহিম আছে ওপরে। আবার মেহেদী হাসান মিরাজও আছে। সে কিছু টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ওপেনও করেছে। আবার চার-পাঁচেও ব্যাট করেছে। সে এখন আবার সাতে নেমে গেছে। আমি জানি না, আজকের (গতকাল) ম্যাচের পর বাংলাদেশ জানে কি না, কোনটা তাদের সেরা ব্যাটিং অর্ডার।’
বাংলাদেশের হারের পর অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, টপ অর্ডারের বাকিরা যখন রান করছেন না, তখন মাহমুদউল্লাহকে টপ অর্ডারে নিয়ে এলেই তো হয়! কিন্তু এ নিয়ে সাকিব ও টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনা একটু অন্য রকমই। সাকিবের মুখেই শুনুন, ‘মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহকে ওপরে খেলানো নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু তাঁদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেই দায়িত্বে তাঁরা খুব ভালো করছেন।’