রবার্টসের চোখে বুমরা নন, ভারতের সেরা বোলার অন্য কেউ
বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফির প্রথম দুই টেস্টেই প্রশ্নটি একাধিকবার উঠেছে। এ মুহূর্তে কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সেরা বোলার কে? উত্তরে উঠে আসা নামটি নিয়ে প্রায় কারোরই দ্বিমত নেই। কে আবার যশপ্রীত বুমরা!
কিন্তু ক্যারিবিয়ান পেস কিংবদন্তি অ্যান্ডি রবার্টস তা মনে করেন না। সত্তর ও আশির দশকে ভয়ংকর এ পেসার বুমরার চেয়েও এগিয়ে রাখছেন যাঁকে, সে নামটি শুনলে একটু বিস্ময়ও জাগতে পারে। তিনি যে এ মুহূর্তে ভারত জাতীয় দলেরই বাইরে!
কিন্তু রবার্টসের চোখে সেই বোলারটি আসলে ‘ফুল প্যাকেজ’। আর ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে সোনালি সময়ের এই কিংবদন্তি কাউকে এমন প্রশংসাপত্র দিলে ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণটা এর আগে বহুবার বলেছেন রবার্টসেরই একসময়ের সতীর্থ ও কিংবদন্তি পেসার মাইকেল হোল্ডিং, ‘অ্যান্ডি কিছু বললে আপনি শুনবেন। সে খেলাটা জানে।’
কতটা জানেন, তা একটি উদাহরণেই বোঝা যায়। সত্তর ও আশির দশকের ভয়ংকর ক্যারিবিয়ান পেসারদের ‘নেতা’ ছিলেন রবার্টস। হোল্ডিং নিজেও যেমন তাঁর দেখানো পথে হেঁটেছেন, তেমনি সে একই পথে হেঁটে ক্রিকেট বিশ্ব কাঁপিয়েছেন জোয়েল গার্নার, কলিন ক্রফট, ম্যালকম মার্শাল, কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ ও প্যাট্রিক প্যাটারসনরা। বয়স এখন ৭৩–এ পড়লেও রবার্টস আসলে ক্যারিবিয়ান পেসারদের ‘গডফাদার’।
সেই গডফাদারের চোখেই বুমরার চেয়ে এগিয়ে মোহাম্মদ শামি। কারণটা ভারতের সংবাদমাধ্যম মিড–ডেকে বলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুবার এই বিশ্বকাপজয়ী, ‘শামি কিছুদিন ধরেই ভারতের সেরা বোলার। সে হয়তো যশপ্রীত বুমরার মতো উইকেট পায় না, কিন্তু সে আসলে ফুল প্যাকেজ এবং বাকিদের চেয়ে বেশি ধারাবাহিক। শামি সুইং করাতে পারে, সিমও (মুভমেন্ট) পারে এবং নিয়ন্ত্রণটা বুমরার মতোই। শামির খেলা উচিত। মোহাম্মদ সিরাজও শামির ধারেকাছে নেই।’
‘শামির খেলা উচিত’—রবার্টস এ কথাটি বলেছেন আসলে শনিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ব্রিসবেন টেস্ট সামনে রেখে। পাঁচ টেস্টের বোর্ডার–গাভাস্কার ট্রফি এখন ১–১ সমতায়। পার্থে প্রথম টেস্ট জিতেছে ভারত। অ্যাডিলেডে দ্বিতীয় টেস্ট জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। রবার্টস মনে করেন, ব্রিসবেনে তৃতীয় টেস্টে শামির খেলা উচিত।
গত বছর নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি শামি পায়ের ‘অ্যাকিলিস টেন্ডন’ চোটে ভুগেছেন দীর্ঘদিন। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন প্রায় এক বছর। গত ফেব্রুয়ারিতে অস্ত্রোপচারও করান। গত মাসে রঞ্জি ট্রফি দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরে দারুণ বোলিং করেন এই ডানহাতি পেসার। মধ্যপ্রদেশের বিপক্ষে বাংলার হয়ে নেন ৭ উইকেট। ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে ৮ ম্যাচে ৯ উইকেট নেন শামি। চণ্ডীগড়ের বিপক্ষে তাঁর ১৭ বলে ৩২ রানের ইনিংসে কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠেছে বাংলা।
তবে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট একাডেমি (এনসিএ) এখনো শামিকে জাতীয় দলে ফেরার মতো পুরোপুরি ফিট হিসেবে ঘোষণা করেনি। বিসিসিআইয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও শামির ঘরোয়া পারফরম্যান্সে নজর রাখছে। ওদিকে অ্যাডিলেডে হারের পর ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা শামিকে নিয়ে বলেছেন, ‘আমরা তাকে নিয়ে এক শ ভাগের বেশি নিশ্চিত হতে চাই, কারণ (জাতীয় দলের বাইরে থাকার) সময়টা অনেক দীর্ঘ। এখানে এসে দলের জন্য অবদান রাখতে আমরা তার ওপর চাপ তৈরি করতে চাই না।’
বুমরা অনেক দিন ধরেই ভারতের পেস আক্রমণের নেতা। চোট সারিয়ে গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার পর থেকেই ধারাবাহিক পারফর্ম করছেন। গত জুনে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। বেশ কিছু টেস্টেও জয় এনে দিয়েছেন ভারতকে। এই বোর্ডার–গাভাস্কার সিরিজেও পার্থে ভারতের জয়ে ৮ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা। অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে নেন ৪ উইকেট। এ বছর টেস্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেটও বুমরার (১১ ম্যাচে ৫৩ উইকেট)।