চ্যাম্পিয়ন হয়েও কেন কাঁদলেন পান্ডিয়া

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন হার্দিক পান্ডিয়াএক্স

কদিন আগেও দুয়োধ্বনি হার্দিক পান্ডিয়ার পিছু ছাড়ছিল না। আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস দলের অধিনায়ক হিসেবে দলটির বিশাল সমর্থকেরা তাঁকে গ্রহণ করে নিতে পারেননি। দলটিতে পাঁচবার শিরোপা এনে দেওয়া রোহিত শর্মার জায়গায় অন্য কাউকে যেন কল্পনাই করতে পারেননি তাঁরা! পান্ডিয়ার দুর্ভাগ্য, দলের পারফরম্যান্সও ভালো ছিল না। ১০ দলের আইপিএলের পয়েন্ট তালিকার ১০ নম্বর দল হিসেবে টুর্নামেন্ট শেষ করে মুম্বাই।

সেই পান্ডিয়াই কাল ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রাখলেন। চাপের মুখে ৪ ওভার বল করে ২০ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট, যার ২টি আবার হাইনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলারের। শেষ ওভারে জয়ের জন্য যখন দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ১৬ রান, তখন অধিনায়ক রোহিত বল তুলে দেন পান্ডিয়ার হাতে। তিনি মাত্র ৮ রান দিলে ৭ রানের জয় পায় ভারত। তাতে ১৭ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে তোলে ভারত।

মহাগুরুত্বপূর্ণ সেই ওভারের পর বার্বাডোজের ২২ গজে কান্নায় ভেঙে পড়েন পান্ডিয়া। কিছুক্ষণ পর তাঁকে টেনে তুলে বুকে নেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত। তবে পান্ডিয়ার কান্না এতটাই বেশি ছিল যে কারও কোনো সান্ত্বনাতেই থামছিল না। বোঝাই যাচ্ছিল, ভেতর থেকে বাঁধভাঙা কান্না উঠে আসছে তাঁর। শেষ পর্যন্ত মাঠের বাইরে গিয়ে মুখ ধুয়ে নেন পান্ডিয়া। এরপর তো শিরোপা জয়ের উদ্‌যাপনে ঢুকে পড়ে পুরো ভারতীয় দল।

হার্দিক পান্ডিয়া এখন সুখী মানুষ
রয়টার্স

আনন্দঘন সেই মুহূর্তেই টিভি সম্প্রচারকদের সঙ্গে কথা বলেন পান্ডিয়া, ‘এটা আমার জন্য খুবই আবেগঘন একটা মুহূর্ত, পুরো ভারত এমন কিছুর অপেক্ষায় ছিল।’
পান্ডিয়া নিজের কথাটা বললেন এরপর, ‘বিশেষ করে আমার জন্য। বিশেষ করে গত ছয় মাস, আমি একটা কথাও বলিনি। আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা ঠিক ছিল না। কিন্তু আমি জানতাম, এমন একটা সময় আসবে, যখন আমি জ্বলে উঠব। আজকের মতো এমন সুযোগ পাওয়া এবং সেটিকে কাজে লাগাতে পারায় মুহূর্তটা আরও স্মরণীয় হয়ে উঠেছে।’

আরও পড়ুন

কাল রান তাড়ার একটা পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩০ বলে ৩০ রান। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা শুনিয়েছেন পান্ডিয়া, ‘আমরা সব সময়ই বিশ্বাস করেছি, শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি যেন চাপটা ওদের ওপর ফিরিয়ে দেওয়া যায়। শেষ ওভারে আমি জানতাম আমাকে পরিকল্পনাটা ঠিকমতো বাস্তবায়ন করতে হবে। আমি এর আগেও এমন পরিস্থিতিতে ছিলাম, এ ধরনের চাপের মুহূর্ত আমি বরং উপভোগ করি।’

পান্ডিয়া কথাটা শেষ করতে পারেননি। পাশ থেকে তাঁর অধিনায়ক রোহিত এসে সাক্ষাৎকারের মাঝেই তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর আবারও ভারতীয়দের হইচই শুরু। অনুমান করাই যায়, লম্বা সময় পর আইসিসি ট্রফি জেতা ভারতীয়দের উদ্‌যাপন চলেছে গভীর রাত পর্যন্ত। আজ সকালে আবার পান্ডিয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রফি কোলে নিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘শুভ সকাল ভারত। এটা স্বপ্ন নয়, সত্যি। আমরা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন।’

বুঝতেই পারছেন, ২০২৪ সালের শুরু থেকে সমালোচনায় পিষ্ট পান্ডিয়া এখন শিরোপা জয়ের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছেন।