ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে আজকের দিনটি বাংলাদেশেরও হতে পারে
এখন পর্যন্ত যা দেখছি, তাতে এ বিশ্বকাপে খেলোয়াড়ের স্কিলের চেয়েও বড় চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে পিচের আচরণ। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ওয়ানডেতেও প্রতিটি দেশ হোম কন্ডিশনের একটু সুবিধা নেয়। তবে তা যেন অতিমাত্রায় না হয়ে যায়, এ কারণে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করতে আইসিসির রেটিং পদ্ধতি আছে। ডিমেরিট পয়েন্টও দেওয়া হয়।
আইসিসির কর্তৃত্ব আছে, এমন একটি টুর্নামেন্টে আরও ভালো পিচ আশা করেছিলাম। ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের পিচ দেখে বড় একটা ধাক্কা খেয়েছি—টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা দেখছি, নাকি বিশ্বকাপের! পিচ কোনো একটা দলকে বেশি সহায়তা করছে। পিচের আচরণের কারণে টসটাও হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত শুধু দিল্লিতেই দুই ইনিংসে পিচের আচরণ একই থাকতে দেখেছি। তার ওপর আছে আউটফিল্ড নিয়ে ভাবনা। ভারতে তো ইন্দোর, মোহালির মতো ভেন্যু ছিল। এরপরও আইসিসি বা বিসিসিআই কেন ধর্মশালার মতো এমন অপ্রস্তুত আউটফিল্ডের ভেন্যুকে বেছে নিল, সেটি বিস্ময়কর।
ধর্মশালার পিচও সুবিধার নয় বলেই মনে হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এরই মধ্যে এ মাঠে খেলেছে বলে একটা সুবিধা পাবে। আবার ঠিক পরের ম্যাচই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে, যে মাঠের উইকেট বাংলাদেশের খেলার ধরনের সঙ্গে যায়। হয়তো এ ম্যাচের আগে সেটিও দলকে উজ্জীবিত করবে।
প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ওইভাবে হারার পর ইংল্যান্ড মনস্তাত্ত্বিক চাপে আছে। ঘুরে দাঁড়াতে বাংলাদেশ সহজ প্রতিপক্ষ হতে পারত তাদের কাছে, তবে পিচের আচরণ তাদের ভাবনায় ফেলতে পারে। এ উইকেট নতুন বলে ব্যাটিংয়ের জন্য কিছুটা সহায়ক হলেও বল একটু পুরোনো হলেই স্পিনাররা সহায়তা পায়। স্পিনাররাই বড় হুমকি এখানে, সেদিক থেকে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশই এগিয়ে। তবে স্পিন আক্রমণ সাজানোটা গুরুত্বপূর্ণ, কমপক্ষে তিন স্পিনার লাগবে
শক্তিমত্তার পার্থক্যের কারণে দুই দল আগে থেকেই ভিন্ন অবস্থানে। অবশ্য প্রথম ম্যাচে ও রকম হারের পর ইংল্যান্ডের লক্ষ্য এখন একটু থিতু হওয়া, অন্যদিকে বাংলাদেশ চাইবে উড়ন্ত শুরুটা ধরে রাখতে। ইংল্যান্ড হয়তো তাদের আক্রমণাত্মক খেলার ধারা ধরে রাখতে চাইবে, তবে আগের ম্যাচের শিক্ষা নিয়ে সেটি নিয়ন্ত্রণের ভাবনাও থাকতে পারে। ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ যদি নিজেদের খেলার ধরন নিয়ে ভাবে, সেটিও একটা বাড়তি সুবিধা
বাংলাদেশ দলে অবশ্য কিছু সমস্যা থেকেই গেছে। বেশ কয়েকটি জায়গা আছে, যেগুলোর প্রথম ও বড় পরীক্ষা হবে আজ। প্রস্তুতি ম্যাচে কিছুটা ভালো করলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে টপ অর্ডার ভালো শুরু দিতে পারেনি। এ নিয়ে দল চাপে থাকবে। এরপরও আমার মনে হয়, ওপেনিং কম্বিনেশনটা ধরে রাখা উচিত। মিরাজকে ওপরে নিয়ে আসার ব্যাপারটি মনে হয় না বিশ্বকাপের আগে থেকে ভাবা ছিল। ইংল্যান্ডের মতো প্রতিপক্ষের সঙ্গে তার ওপরের দিকে খেলা কতটা বাস্তবসম্মত হবে, সেটিও ভাবনার বিষয়।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে অমন জয়ে আরও কিছু ব্যাপার আড়ালে পড়ে গেছে। মিডল অর্ডারের নিয়মিত ব্যাটসম্যান সাকিব বা মুশফিক ক্রিজে বেশিক্ষণ থাকেনি, ফর্ম নিয়ে চিন্তা থাকা হৃদয় সুযোগই পায়নি। মাহমুদউল্লাহও তা–ই। বোলিংয়ে পেস আক্রমণ পরে ঘুরে দাঁড়ালেও শুরুটা ভালো ছিল না। ইংল্যান্ড পাল্টা আক্রমণ করলে জবাব কীভাবে দেওয়া হবে, সেটি অনিশ্চিত
আফগানিস্তানকে হারানোর পর প্রত্যাশার চাপও তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ওপর। সামনে এখনো লম্বা পথ। ফলে অতি উৎসাহী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। দলে সে অর্থে ব্যাকআপ ব্যাটসম্যান নেই। যারা আছে, তাদের আত্মবিশ্বাস যাতে নড়বড়ে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে আজকের দিনটি বাংলাদেশেরও হতে পারে। তবে মাথায় রাখতে হবে, প্রতিপক্ষে ইংল্যান্ড
গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক