‘অস্ট্রেলিয়া দলে নিজেদের জায়গা নিয়ে ভাবি না’, বললেন ওয়ার্নার
অস্ট্রেলিয়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে গত বছর জুনে। নভেম্বরে জিতেছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। এখন সামনে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ। ২ জুন (বাংলাদেশ সময়) থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে শুরু হবে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সামনে টানা তিনটি বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের সুযোগ। আর এই সুযোগের কাজে লাগাতে অস্ট্রেলিয়া ‘ভয়ডরহীন’ ক্রিকেট খেলতে চায় বলে জানিয়েছেন ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। ৩৭ বছর বয়সী এই বাঁহাতি নিজেও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে চলে এসেছেন। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ রাঙিয়ে দিতে চান ওয়ার্নার নিজেও।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল, ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল—এ দুটি ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, ট্রাভিস হেড ও ওয়ার্নার। ১২ মাসের মধ্যে আইসিসির তিনটি বৈশ্বিক ট্রফি জয়ের সুযোগ তাঁদের সামনে।
ত্রিনিদাদ থেকে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’কে ওয়ার্নার এ নিয়ে বলেছেন, ‘যখন সব শেষ হবে, তখনই শুধু এই সম্ভাব্য ইতিহাসের অংশ হওয়ার দিকে ফিরে তাকানো যাবে। কিছুদিন আগে আইসিসিতে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম। সেখানেও এ বিষয়ে এবং আমি যত টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছি, সেসব নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমি সব (টুর্নামেন্ট) মনে করতে না পারলেও এগুলো দারুণ ছিল।’
অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন সাফল্যের নেপথ্যে ভয়ডরহীন ক্রিকেট, মনে করেন ওয়ার্নার, ‘আমরা সব সময়ই ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলেছি এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সাফল্য পাওয়ার এটাই কারণ। আমরা দলে নিজেদের জায়গা নিয়ে ভাবি না। শুধু সেরাটা দেওয়া নিয়ে ভাবি। যা–ই করি না কেন, সবাই এটা নিশ্চিত করতে চায় যেন ম্যাচ জেতাতে পারে।’
ওয়ার্নার ব্যাপারটি আরেকটু ভেঙে বললেন এভাবে, ‘সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো, দলে এমন খেলোয়াড় অনেক আছে। একদিন হয়তো একজন পারফর্ম করছে, পরের দিন অন্য কেউ। শীর্ষ ছয়জনের মধ্যে কেউ যদি ভালো স্ট্রাইক রেটে ৬০ বা ৮০ রান করতে পারে, আমরা বুঝে নিই ভালো একটা সংগ্রহই দাঁড়াবে। নতুন বলেও একই ব্যাপার। স্টার্ক যদি সুইং পায়, দ্রুত কয়েকটি উইকেটও পড়ে যায়, তখন আক্রমণে স্পিনারদের আনা হয়।’
ওয়ার্নার এবারের আইপিএলে খেলেছেন দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে। কাছে থেকেই দেখেছেন আইপিএলের রানবন্যা। সেখানে শুধু ছক্কাই হয়েছে ১২৬০টি। আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের ৯টি নজিরের মধ্যে ৮টি-ই দেখা গেছে এবার। তবে ওয়ার্নার মনে করেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এমন কিছু দেখা যাবে না। আইপিএলে ‘ইমপ্যাক্ট বদলি’ নিয়মকে বড় স্কোরের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনিও।
বিশ্বকাপের সঙ্গে পার্থক্য বোঝাতে আইপিএল প্রসঙ্গে ওয়ার্নারের ব্যাখ্যা, ‘একদম ফ্ল্যাট উইকেটে সাত-আটজন বোলার এবং আট থেকে নয়জন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা হয়।’
ওয়ার্নার অবশ্য আইপিএলে পুরো মৌসুম খেলতে পারেননি। হাতে চোট পেয়েছিলেন দিল্লি ক্যাপিটালস ওপেনার। তবে বিশ্বকাপের আগে ত্রিনিদাদে নামিবিয়ার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ২১ বলে ৫৪ রান করে ভালো ফিটনেসের প্রমাণ দিয়েছেন। এরপর পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে ৬ বলে ১৫ রান করেন।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানিয়েছে, ৫ জুন ব্রিজটাউনে ওমানের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ম্যাচের আগ পর্যন্ত ওয়ার্নার ফিল্ডিং করবেন না।
একমাত্র অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিন সংস্করণেই ন্যূনতম ১০০ ম্যাচ খেলেছেন ওয়ার্নার। নির্বাচকেরা তাঁর অভিজ্ঞতা এবং অন্য অভিজ্ঞদের স্কোয়াডে রাখায় ধন্যবাদও দিয়েছেন ওয়ার্নার, ‘নির্বাচকদের সাধুবাদ জানাতেই হবে। তারা অভিজ্ঞদের বাছাই করেছেন, কীভাবে ম্যাচ জেতাতে হয়, সেটা তারা জানে।’
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের অস্ট্রেলিয়ার সব ম্যাচই ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সুপার এইট থেকে সব কটি ম্যাচও সেখানেই। টেস্ট থেকে আগেই অবসরে যাওয়া ওয়ার্নার এটাও বলেছেন, বিশ্বকাপ দিয়েই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকেও বিদায় বলবেন। ফলে ক্যারিবীয় অঞ্চলেই শেষ হতে পারে ওয়ার্নারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তবে আগামী বছর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি ওয়ার্নার। যদিও বলেছেন, ‘ওদের (অস্ট্রেলিয়া দল) হয়তো আমাকে প্রয়োজন হবে না।’