দ্বিতীয় সেশনে স্টিভেন স্মিথ ও মারনাস লাবুশেন যখন ব্যাটিং করছিলেন, নাগপুর টেস্টকে মনে হচ্ছিল বক্সিং ম্যাচ—পাঞ্চ আর কাউন্টার পাঞ্চ। ২ রানে ২ উইকেট থেকে ৭৬ রানে ২ উইকেটের স্কোর নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, অপরাজিত ছিলেন মারনাস লাবুশেন ও স্টিভ স্মিথ। তবে রবীন্দ্র জাদেজা এরপরই যেন দিলেন নকআউট পাঞ্চ! অস্ট্রেলিয়া ধসে গেল তাতেই। ব্যাটিংয়ের জন্য মোটামুটি কঠিন হলেও একেবারেই খেলা যাবে না, উইকেট এমন ধরনের নয়। অথচ সেখানেই কি না প্রথম ইনিংসে ১৭৭ রানে গুটিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। লোকেশ রাহুলের উইকেট হারিয়ে দিন শেষে ভারত প্রথম ইনিংসে তুলেছে ৭৭ রান। নাগপুরের নিয়ন্ত্রণ প্রথম দিনই নিয়ে নিয়েছে স্বাগতিকেরা।
ক্রমেই ব্যাটিংয়ের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠবে, এমন উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার টস জয়কে মনে হচ্ছিল দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে যে উইকেটে প্রথম বল হওয়ার আগে থেকেই আলোচনায় স্পিন, সেখানে প্রথম দুই আঘাত করেন দুই পেসার। নিজের প্রথম বলেই উসমান খাজাকে এলবিডব্লু করেন মোহাম্মদ সিরাজ, যে বলটি হয়েছিল বেশ নিচু। ভারত সে উইকেট পায় রিভিউ নিয়ে। পরের ওভারে মোহাম্মদ শামির লেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড ওয়ার্নার।
ইনিংসের সপ্তম ওভারেই অবশ্য আসে স্পিন, জাদেজাকে আনেন রোহিত শর্মা। পরের ওভারে আসেন অক্ষর প্যাটেল। তবে শিগগির তাঁরা টলাতে পারেননি স্মিথ ও লাবুশেনকে। দুজনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ বেশি ছিল লাবুশেনেরই, তবে প্রথমে ফিরতে হয় তাঁকেই। দ্রুতগতির সোজা বল করে লাবুশেনকে ফাঁদে ফেলেন জাদেজা, এরপর গতি কমিয়ে এনে ঝুলিয়ে দেন একটি বল, যেটি বেরিয়ে যাচ্ছিল টার্ন করে। ৪৯ রানে দাঁড়িয়ে থাকা লাবুশেন দেখেছিলেন রানের সুযোগ। শট খেলতে এসে সেটিই মিস করে হন স্টাম্পিং, উইকেটের পেছনে দারুণ কাজ করেন অভিষিক্ত শ্রীকর ভরত। ঠিক পরের বলেই এলবিডব্লু ম্যাট রেনশ। এমন কন্ডিশনে স্পিনের দৃঢ় টেকনিকের কারণে যাঁকে খেলানো হচ্ছে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের ৪ নম্বর ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেডের বদলে।
স্মিথ ফেরেন এরপর। লাবুশেনকে টার্নিং ডেলিভারিতে ফিরিয়েছিলেন জাদেজা, স্মিথকে বোল্ড করেন সোজা বলে। এমন টার্নিং উইকেটে টার্ন করা বলের চেয়েও ভয়ঙ্কর লাইন ধরে রাখা বল—বলা হয় এমনই। স্মিথের ক্ষেত্রে ঘটেছে সেটিই।
স্মিথ ও লাবুশেনের ২০২ বলে ৮২ রানের জুটির পর অস্ট্রেলিয়ার বলার মতো জুটিটি আসে পিটার হ্যান্ডসকম ও অ্যালেক্স ক্যারির মধ্যে। ৩৩ বলে ৩৬ রানের ক্যামিও খেলার পর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৪৫০তম টেস্ট শিকারে পরিণত হন ক্যারি। হ্যান্ডসকম অবশ্য টেকেন আরও কিছুক্ষণ। তবে দ্বিতীয় সেশনে ৬ উইকেট হারিয়ে এলোমেলো হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
শেষ সেশনে তাদের গুটিয়ে যেতে লাগে ৩.৫ ওভার। এর মধ্যে অভিষিক্ত টড মার্ফিকে এলবিডব্লু করে পঞ্চম উইকেটটি পান এ ম্যাচ দিয়েই লম্বা চোট কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা জাদেজা। অস্ট্রেলিয়া শেষ ৫ উইকেট হারায় মাত্র ১৫ রানের মধ্যে। অশ্বিন নেন ৩ উইকেট।
ব্যাটিংয়ে নেমে প্যাট কামিন্সের করা প্রথম বলসহ প্রথম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মেরে রোহিত শর্মা বার্তা দেন—এ কন্ডিশন এখনো ব্যাটিংয়ের জন্য অসম্ভব নয়। তাঁর ওপেনিং সঙ্গী লোকেশ রাহুল অবশ্য আস্থা রাখছিলেন নিজের রক্ষণের ওপরই, প্রথম বাউন্ডারির জন্য তিনি অপেক্ষা করেন ৫৫ বল পর্যন্ত। যদিও ফিরতে হয় তাঁকেই। মার্ফির ফুল লেংথ থেকে টার্ন করা বলে ফ্লিকের মতো করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন ৭১ বলে ২০ রান করে। নাইটওয়াচম্যান অশ্বিনকে নিয়ে বাকি সময়টা অবশ্য নিরাপদেই পার করেন রোহিত, দিন শেষে ভারত অধিনায়ক অপরাজিত ৬৯ বলে ৫৬ রান করে, ৯টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১টি ছক্কা।