পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের দুষে বাটও স্বীকার করলেন বাংলাদেশের অর্জন অনেক বড়
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর নিজেদের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু দেশটির ক্রিকেটে সুদিন ফেরা দূরে থাক, বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে।
এমন বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ও খেলোয়াড়দের সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করছেন সাবেকেরা। সমালোচকদের তালিকায় আছেন জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়াসিম আকরাম, ইনজামাম–উল–হক, রমিজ রাজা, বাসিত আলী, রশিদ লতিফ।
তালিকাটা এবার আরও লম্বা করলেন সালমান বাট। পাকিস্তানের সাবেক এই অধিনায়ক বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ব্যর্থতার দায় ব্যাটসম্যানদের দিয়েছেন। একই সঙ্গে যাঁরা টেস্টে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদের মূর্খও বলেছেন।
পাকিস্তানের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৩৫ ম্যাচ খেলা বাট নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সবুজ পিচ তৈরি করেছিলাম। সেখানে বাংলাদেশের তরুণ দুই পেসার হাসান (মাহমুদ) ও (নাহিদ) রানা অসাধারণ বোলিং করল। পেস সহায়ক পিচে ওদের স্পিনাররাও দারুণ বল করেছে। ওদের ব্যাটসম্যানরা আমাদের স্পিনারদের খুব ভালোভাবে সামলেছে। কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরা ওদের স্পিনারদের বিপক্ষে ভালো খেলতে পারেনি।’
৩৯ বছর বয়সী বাট আরও বলেছেন, ‘শুরু থেকে চিন্তা করে দেখুন। পিচ কেমন হবে, পরিকল্পনা অনুযায়ী একাদশ কেমন হবে, টস জিতে কী করতে হবে, কয়জন পেসার রাখতে হবে, স্পিনার থাকবে কি না, স্পিনার থাকলেও কাকে একাদশে রাখতে হবে—এগুলো কোনো কিছুই আমরা ঠিকঠাক করতে পারিনি। ব্যাটসম্যানদের শট খেলার ধরন ও কৌশলও ঠিক ছিল না। তারা পরিস্থিতি বুঝতে ব্যাট করেনি।’
সম্প্রতি টেস্টে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁদেরকে একরকম ধুঁয়ে দিয়েছেন বাট, ‘স্ট্রাইক রেট মাফিয়া ও ইনটেন্ট মাফিয়ারা আসলে মূর্খ। দল কোন সংস্করণের ক্রিকেট খেলছে, এ ব্যাপারে তাদের কোনো ধারণা নেই। আপনি চার দিনেই টেস্ট ম্যাচ হেরে যাচ্ছেন। তাহলে আরও দ্রুত ব্যাটিং করে কী হবে? আপনি (দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে) মাত্র ৪৬ ওভারে অলআউট হয়ে যাচ্ছেন। এরপরও এত তাড়া দেখানোর কথা বলছেন কেন? আপনারা কেন বুঝতে পারেন না, ব্যাটসম্যানদের কাজ হলো যতটা সম্ভব দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা।’
বর্তমানে বিশ্বের সেরা কজন ব্যাটসম্যানের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘বড় মাপের খেলোয়াড়েরা কি (টেস্টে) এমনভাবে ব্যাট করে যে দেখে মনে হয় হাইলাইটস চলছে? জো রুট, বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মারা কি (টেস্টে) এত দ্রুততার সঙ্গে রান তোলে?’
বাংলাদেশের বিপক্ষে ২–০ ব্যবধানে হারের পর আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের আটে নেমে গেছে পাকিস্তান, যা ১৯৬৫ সালের পর তাদের সর্বনিম্ন অবস্থান। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৩–২০২৫ চক্রের পয়েন্ট তালিকাতেও আটে নেমে গেছে পাকিস্তান। আগের দুই চক্রের মতো এই চক্রেও বাবর–রিজওয়ান–আফ্রিদিদের ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বিপরীতে পাকিস্তানকে তাদেরই মাটিতে ধবলধোলাই করে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট তালিকার চারে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের নায়কদের প্রায় সবাই র্যাঙ্কিংয়ে বড় লাফ দিয়েছিলেন। অথচ পাকিস্তানে যাওয়ার আগে দেশে অনেক কঠিন সময় পার করেছে বাংলাদেশ দল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মাঠের অনুশীলন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল নাজমুল হোসেনের দলের।
এমন পরিস্থিতি একপাশে রেখে পুরোপুরি খেলায় মনোনিবেশ করায় বাংলাদেশ দলের প্রশংসা করেছেন বাট, ‘ওরা আমাদের আঙ্গিনায় এসে অনায়াসে জিতে গেল। ওরা অবিশ্বাস্য খেলেছে। (দ্বিতীয় টেস্টে) ওরা ২৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। খুব কম দলই এভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টেস্ট জিততে পেরেছে। এখানে আসার আগে ওদের দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না। সেখানে অনেক কিছুই ঘটছিল। এ ধরনের ঘটনা ক্রিকেটারদের ওপরও মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। এরপরও তারা সব বিভাগে যেভাবে আধিপত্য বিস্তার করল, তা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় অর্জন।’
পাকিস্তানের সামনে আরও বড় পরীক্ষা। আগামী অক্টোবরে নিজেদের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে তারা। বেন স্টোকস–জো রুটদের বিপক্ষেই ২০২২ সালে ৩–০ ব্যবধানে হেরেছিল পাকিস্তান, যা দেশের মাটিতে তাদের প্রথমবার ধবলধোলাই হওয়ার ঘটনা।