আসল আইপিএল তো শুরু আজ

চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস মাঠে নামবে আজ রাতেবিসিসিআই

শিরোনাম দেখে চমকে উঠবেন না। গতকাল যে ম্যাচটি দেখেছেন, ওটাও আইপিএলের ম্যাচই ছিল। বিরাট কোহলির ফিফটি, বেঙ্গালুরুর জয়—সবই হিসাবের খাতায় উঠে গেছে। বেঙ্গালুরু সমর্থকদের চিন্তার কারণ নেই! তাহলে ‘আসল’ আইপিএলটা আবার কী!

সেটা জানতে প্রথমে আজকের সূচির দিকে তাকান। আইপিএল বলতে যে দুটি দলের নাম সবার আগে আসে, সেই চেন্নাই সুপার কিংস ও মুম্বাই ইন্ডিয়ানস মাঠে নামবে আজ রাতে।

সারা দুনিয়ায় আইপিএলকে ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে এই দুটি দলের অবদান অনেক। এর আগে হওয়া আইপিএলের ১৭টি আসরের মধ্যে সমান ৫টি করে ১০টিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চেন্নাই ও মুম্বাই। এই ম্যাচে মুখোমুখি হন মহেন্দ্র সিং ধোনি ও রোহিত শর্মারা। আগে খেলতেন শচীন টেন্ডুলকার, ম্যাথু হেইডেন, কাইরন পোলার্ড, ড্যারেন ব্রাভোরা। শুধু শুধু তো ম্যাচটিকে তো আইপিএলের ‘এল ক্লাসিকো’ বলা হয় না!

আইপিএলকে সারা দুনিয়ায় যদি চেন্নাই ও মুম্বাই পৌঁছে দেয়, তাহলে আইপিএলকে নতুন করে চিনিয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। শুধু আইপিএল নয়, অনেকেই মনে করেন হায়দরাবাদ টি-টোয়েন্টি খেলার ধরনটাই বদলে দিয়েছে। সেই হায়দরাবাদও নিজেদের প্রথম ম্যাচে আজ মাঠে নামছে। তাদের ম্যাচটি রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে।

গত আসরেই পাওয়ারপ্লেতে ১২৫ রান তুলেছেন হেড-অভিষেক, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্ব রেকর্ড। দলটি পাওয়ারপ্লেতে ৮০ রানের বেশি তুলেছে চারবার।

একদিকে আইপিএলের আলোচিত দুই ফ্র্যাঞ্চাইজির ম্যাচ, অন্যদিকে চার-ছক্কার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হায়দরাবাদের খেলা—আসল আইপিএলময় দিন তো এমনই হবে!

চেন্নাই ও মুম্বাই আইপিএলের সবচেয়ে দুটি ধারাবাহিক দল। আইপিএলে সর্বোচ্চ ১২ বার প্লে-অফে খেলেছে চেন্নাই, আর মুম্বাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ বার উঠেছে প্লে-অফে। আইপিএলে চেন্নাই-মুম্বাইয়ের দাপট ১৭টি আসরের মধ্যে দুদলের ১০ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়াতেই স্পষ্ট।

হায়দরাবাদের বেলায় বিষয়টি একটু ভিন্ন। দলটি ৭ বার প্লে-অফে খেলেছে, শিরোপা জিতেছে একবারই—২০১৬ সালে। তবে এসব ছাপিয়ে হায়দরাবাদ আলোচনায় গত মৌসুমের ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ের কারণে। ফাইনালে কলকাতার কাছে হেরে গেলেও অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই মনে করেন হায়দরাবাদই ২০২৪ আসরের সেরা দল ছিল। দলটি নতুন করে দেখিয়েছিল, কীভাবে টি-টোয়েন্টি খেলতে হয়!

ট্রাভিস হেড ও অভিষেক শর্মা
বিসিসিআই

পরিসংখ্যান থেকেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাক। হায়দরাবাদের হয়ে গত মৌসুমে ওপেন করেন ট্রাভিস হেড ও অভিষেক শর্মা। এই জুটি ওভারপ্রতি রান তুলেছেন ১৩.৪৬ করে। দুই ওপেনার মিলে ছক্কা মেরেছেন ৭৪। অভিষেক তো বলই খেলেছেন ২৩৭টি, যেখানে ছক্কা ৪২টি, চার ৩৬টি। দুজনের জুটি থেকে রান এসেছে ৬৯১, সেটিও প্রায় ৫০ গড়ে।

এবার কেমন করবেন ক্লাসেন?
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ

গত আসরেই পাওয়ারপ্লেতে ১২৫ রান তুলেছেন হেড-অভিষেক, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্ব রেকর্ড। দলটি পাওয়ারপ্লেতে ৮০ রানের বেশি তুলেছে চারবার। আর তাদের ব্যাটে ৬০, ৬৫ রান এসেছে আরও বেশ কয়েকবার। পাওয়ারপ্লেতে এমন রান তোলা মানে বেশির ভাগ দলের কাছে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত শুরু। আর এটিকেই হায়দরাবাদ বানিয়ে ফেলেছিল স্বাভাবিক ঘটনা। হেড-অভিষেকের পর আবার হাইনরিখ ক্লাসেন ঝড় তুলতেন। তিনি গত মৌসুমে মেরেছিলেন ৩৮টি ছক্কা।

আরও পড়ুন

ছক্কায় ছক্কায় হায়দরাবাদ আইপিএলে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ড ভেঙেছে কয়েকবার। আইপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ চারটি স্কোরই এসেছে ২০২৪ সালে। এর মধ্যে তিনটিই হায়দরাবাদের, সর্বোচ্চ ২৮৭। বোঝাই যাচ্ছে, বোলারদের ওপর রীতিমতো ঝড় চালিয়েছিলেন হায়দরাবাদের ব্যাটসম্যানরা।

ভারতে গিয়ে ২০ ওভারে ২৯৭ রান খরচ করেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা
এএফপি

এই ঝড়ের প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও। তোপটা এসেছিল বাংলাদেশ দলের ওপরই। গত সেপ্টেম্বরে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে গিয়ে একটি ম্যাচে ২০ ওভারে ২৯৭ রান খরচ করেছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। ভারত এরপর নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ২০ ওভারে তোলে ২৮৩ রান।

এবারের আইপিএলে ৩০০ রানের কথা বারবার শোনা যাচ্ছে। এটি করতে সবচেয়ে ফেবারিট হায়দরাবাদই! এমন চিন্তাভাবনা দলটির মধ্যেও আছে। কাল একটি অনুষ্ঠানে হায়দরাবাদ অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ভক্তদের তিন আঙুল দেখিয়ে ৩০০ রানের লক্ষ্যের কথাও জানিয়েছেন। এমন ইশারা করে অবশ্য পাশে থাকা হেডের দিকে তাকিয়েছেন কয়েকবার। কাজটা যে হেডদেরই করতে হবে! আর এর শুরুটা হচ্ছে আজ।

আরও পড়ুন