ডেভিড ওয়ার্নার আউট হতে পারতেন ম্যাচের প্রথম বলেই। অন্তত এমন বিশ্বাস নিয়েই তাঁর বিরুদ্ধে এলবিডব্লু চেয়ে রিভিউ চেয়েছিল পাকিস্তান। তবে বল ব্যাটের কানায় লাগায় ওয়ার্নারকে তখন চিন্তা করতে হয়নি।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে অবশ্য আউট প্রায় হয়েই গিয়েছিলেন। শাহিন আফ্রিদির শর্ট লেংথ বলে ক্যাচ তুলেছিলেন মিড অনে। তবে সহজতম সেই ক্যাচ ফেলে তাঁকে ‘জীবন’ দেন উসামা মির। শেষ পর্যন্ত ওয়ার্নারের ‘জীবন’ই কেড়ে নিয়েছে পাকিস্তানের তৃতীয় জয়ের সম্ভাবনা। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক বাবর আজমের উপলব্ধি ছিল এমনটাই।
বেঙ্গালুরুতে কাল অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তানের হারের ব্যবধান ৬২ রানের। ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শের দুই সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া তুলেছিল ৯ উইকেটে ৩৬৭ রান। যা তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের ইনিংস থামে ৩০৫ রানে। ইমাম উল হক আর আবদুল্লাহ শফিকের উদ্বোধনী জুটি ১৩৪ রান এনে দিলেও লক্ষ্যটা বড় বলেই শেষ পর্যন্ত ‘দম’ ধরে রাখতে পারেনি পাকিস্তান। আর বড় লক্ষ্যটা বড় হয়ে যাওয়ার পেছনে শুরুতেই ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলে দেওয়ার কথাই বলেছেন বাবর, ‘প্রথম ৩৪ ওভার আমরা বোলিং এবং ফিল্ডিং ভালো করিনি। এটা আমাদের ক্ষতি করেছে। আমরা ওয়ার্নারের ক্যাচ মিস করেছি। এ ধরনের ব্যাটসম্যানের ক্যাচ মিস হলে সুযোগটা কাজে লাগাবেই।’
ওয়ার্নার সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন ১২৪ বলে ১৬৩ রান করে। ১৪ চার ও ৯টি ছয়ে গড়া ইনিংস খেলে যখন মাঠ ছাড়েন, দল ততক্ষণে ৪২.২ ওভারে ৩২৫ রান পেয়ে গেছে। ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পাওয়া ওয়ার্নারের মুখেও ছিল শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার কথা, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল শুরুটা দেখেশুনে খেলা, বিশেষ করে প্রথম ছয় ওভার। যখন থিতু হয়ে হয়ে গেলাম, তখন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করা।’ ওয়ার্নার থিতু হয়েছেন মূলত জীবন পাওয়ার পরই। ক্যাচ দেওয়ার আগে মিচেল মার্শকে নিয়ে তুলেছিলেন ২৬ বলে ২২ রান। কিন্তু ওই বলের প্রথম পাওয়ার প্লেতে পরের ৩৪ বলে তোলে ৬০ রান।
ওয়ার্নার তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২০তম শতকটা পেয়েছেন ৮৫ বলে। তবে থামেননি সেখানেই। আর থামেননি বলেই অনন্য কিছু রেকর্ড নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় তিনটি ইনিংসই এখন ওয়ার্নারের। ২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৭৮ আর ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৬৬ রান আছে বেঙ্গালুরুর ১৬৩–এর ওপরে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপে তিনটি দেড়শোর্ধ্ব রানের ইনিংসও একমাত্র ওয়ার্নারেরই, আর কারও দুটিও নেই।
এ ছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের দেড় শ ছাড়ানো ইনিংস এখন ৭টি, এর চেয়ে বেশি আছে শুধু রোহিত শর্মার (৮)। এত এত কীর্তির জন্ম হয়েছে যে ম্যাচে, সেই ম্যাচের অধিনায়ক প্যাট কামিন্স তাই জয়ের কৃতিত্ব দিলেন ওয়ার্নারকে, ‘ম্যাচের সুর তৈরি করে দিয়েছে, যেখান থেকে আমরা খেলাটাকে নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছি।’