মাহমুদুলের ‘সেরা ম্যাচ’ জয়ের আনন্দ
দুই ইনিংসে রান করেছেন ৬৯ ও ৬৫। দ্বিতীয় ইনিংসে দলের বিপদে হাত ঘুরিয়ে ২১ রানে নেন ৫ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে পাকিস্তান শাহিনসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ চার দিনের ম্যাচে মাহমুদুল হাসানের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সৌজন্যে ৫ রানের রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে বিসিবি এইচপি দল। এই জয়ে দুই দলের চার দিনের ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।
মাহমুদুলের ১৩ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় অর্জন দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে করা টেস্ট সেঞ্চুরি, যা ছিল প্রোটিয়াদের মাঠে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম শতক। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টেও মাহমুদুল ব্যাট থেকে এসেছিল ৭৮ রানের ঝলমলে ইনিংস।
ব্যাট হাতে দুই ইনিংসেই ৫০ পেরোলেও ডারউইনে বিসিবি এইচপি দল দ্বিতীয় চার দিনের ম্যাচটি জিতেছে মূলত মাহমুদুলের বোলিং নৈপুণ্যে। সে কারণেই এটিকে তিনি বলছেন ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচ। বিসিবির পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় মাহমুদুল বলেছেন, ‘এটা আমার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমার প্রথম ৫ উইকেট। এটাই আমার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং এবং ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচ, যেটাতে আমরা জয় পেয়েছি।’
এইচপির দেওয়া ২৯৬ রানের লক্ষ্যের জবাবে শেষ দিনে জয়ের জন্য পাকিস্তান শাহিনসের দরকার ছিল ১৬০ রান, এইচপির প্রয়োজন ছিল ৬ উইকেট। এর মধ্যে ৪টি উইকেটই এসেছে মাহমুদুলের ‘গোল্ডেন আর্মে’। জয়ের জন্য যখন শাহিনসের ৩ উইকেটে মাত্র ৯ রান দরকার ছিল, তখনই জোড়া আঘাতে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছেন মাহমুদুল।
ম্যাচের সেই রোমাঞ্চকর গল্পটা শুনুন মাহমুদুলের মুখেই, ‘আমাদের মধ্যে ম্যাচটাকে একবারে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ছিল। আমরা শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি, চিন্তা করেছি ১০ উইকেট নেওয়ার পর ম্যাচটা জিতেই আমরা বের হব। আমাদের সবার মাঝে এই বিশ্বাস ছিল, তাই আমরা সফল হয়েছি।’ মাহমুদুল জানিয়েছেন, প্রথম চার দিনের ম্যাচ হেরে যাওয়ার পর পরের ম্যাচটাকে বাঁচা–মরার ম্যাচ হিসেবেই নিয়েছিল এইচপি দল। এমন ম্যাচ জিতে স্বাভাবিকভাবেই তৃপ্তিটা একটু বেশি মাহমুদুলের, ‘ম্যাচটা জেতায় সিরিজে সমতা এসেছে। আমরা খুব খুশি যে ম্যাচটা জিতেছি এবং সিরিজে সমতা ফিরিয়ে দেশে যাচ্ছি।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে সিলেট ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে চার ইনিংসে মাহমুদুল করেছিলেন ১২, ০, ২১ ও ২৪ রান। রান–খরার সে ধারা থেকে বের হয়ে আসার আভাস দিয়েছেন তিনি অস্ট্রেলিয়া সফরে। এবার তা ধরে রাখার পালা, ‘আমার কাজ রান করা। যেখানেই খেলি, সেখানেই পারফর্ম করার চেষ্টা করি। অনেক দিন পর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে খেলেছি। এখানে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব ভালো ছিল, আমি সেটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি।’
আর বোলিং? বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে কাজটা নিয়মিতই করতেন মাহমুদল। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে বা জাতীয় দলে এসেও হাত ঘোরানোর সুযোগ হয়নি। অবশ্য জাতীয় দলের নেটে মাঝে মাঝে তাঁকে অফ স্পিন করতে দেখা যায়। ডারউইনে বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন দলে কোনো বিশেষজ্ঞ অফ স্পিনার না থাকায়, ‘আমি সব সময় চেষ্টা করি নেটে বোলিং করতে। এখন ম্যাচেও সুযোগ এসেছে। আমি নেটে যেটা করি, ম্যাচেও সেটা করার চেষ্টা করেছি।’
চার দিনের ম্যাচের সিরিজ শেষে দেশে ফিরে আসবেন অধিনায়ক মাহমুদুলসহ সাদমান ইসলাম, অমিত হাসান, শাহাদাত হোসেন, মাহিদুল ইসলাম, আইচ মোল্লাহ, হাসান মুরাদ ও রেজাউর রহমান। ওদিকে সাদা বলের সিরিজ খেলতে আফিফ হোসেন, তানজিম হাসান, শামীম হোসেন, আবু হায়দার, আকবর আলী, আলিস আল ইসলাম, জিশান আলম ও মাহফুজুর রহমান অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেছেন।
পাকিস্তান শাহিনস ও নর্দান টেরিটরির সঙ্গে তিন দলের সিরিজ ছাড়াও বিগ ব্যাশের ৭টি দলের সঙ্গে এইচপি খেলবে একটি টি–টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট, যেখানে খেলবে পাকিস্তান শাহিনসও।
আফিফদের শুভকামনা জানিয়ে মাহমুদুল বলেছেন, ‘আমরা শেষ চার দিনের ম্যাচে জয় পেয়েছি। সাদা বলে যারা খেলবে, ওদের জন্য শুভকামনা। তারা যেন এই মোমেন্টামটা ধরে রাখে এবং ৫০ ওভারের সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটা ভালোভাবে শেষ করে।’