গাভাস্কার, কপিল, কুম্বলে, টেন্ডুলকার—গ্রিন পার্কের জাদুঘরে গেলে সাক্ষাৎ হবে সবার সঙ্গে
কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়াম মিডিয়া সেন্টার পার হয়ে একটু ভেতরে গেলেই বিশাল একটা ভবন। দূর থেকে দেখলে যেটিকে জাদুঘরের মতো মনে হয়। গ্রিন পার্ক স্টেডিয়ামটাই অবশ্য একটা জাদুঘর। ভারত স্বাধীন দেশ হওয়ার আগে থেকেই এখানে খেলা হচ্ছে। স্টেডিয়ামের বেশভূষায় এখনো সেই পুরোনো ছাপ যেন রয়ে গেছে।
গ্যালারি, বসার ব্যবস্থা, খোলা প্রেসবক্স, সংগঠকদের চিন্তাভাবনা—সবকিছুতেই পুরোনো আমেজ। এমন একটা স্টেডিয়ামের মধ্যে আবার জাদুঘর! যার নাম রাখা হয়েছে ‘পার্ক মিউজিয়াম’।
কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে গেলাম বিশাল ওই ভবনের দিকে। ঢুকতে গিয়েই দেয়ালে দেয়ালে সাজানো ব্যানারগুলোর লেখা পড়ছিলাম। ওই দেয়ালের পাশ ঘেঁষে গেলে এই মাঠে ঐতিহাসিক ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সগুলো মনে পড়ে যাবে। এই যেমন বড় করে “জাম্বো’স রেকর্ড” শিরোনামে অনিল কুম্বলের এই মাঠে ১৫ ম্যাচে ৭৮ উইকেটের রেকর্ডটি উল্লেখ করা আছে।
‘ইটস্ সানি আউট হেয়ার’ লিখে সুনীল গাভাস্কারের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করা অপরাজিত ২৪৬ রানের ইনিংসের কথা বলা হয়েছে। ১৯৮৩ সালের সেই ডাবল সেঞ্চুরিটি কানপুরের গ্রিন পার্কে এখনো সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত টেস্ট ইনিংসের রেকর্ড। এই মাঠে সবচেয়ে বেশি রানও সুনীল গাভাস্কারের। ১৮ ম্যাচে ২৯৮০ রান করার সেই কীর্তির কথা লেখা আছে ’সান ইজ অলওয়েজ শাইনিং’ শিরোনামের নিচে।
কানপুরে সেই সেরা সময়ের ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো স্মৃতি থাকবে না, তা হয় নাকি! এই মাঠে একমাত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া আর কোনো দল ভারতকে হারাতে পারেনি। সোনালি যুগের ক্যারিবীয়রা সেটা করে দেখিয়েছে দুই–দুইবার। ১৯৮৩ সালে এখানে ৭ উইকেটে ৬৫৭ রান করে ভারতের বিপক্ষে কোনো দলের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছিল ক্যারিবীয়রা। ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ভিভ রিচার্ডস।
জাদুঘরের ভেতরে যেতে অবশ্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হলো। নিরাপত্তার দায়িত্বে দাঁড়িয়ে আছেন একজন, তিনি সাংবাদিকদের ভেতরে যেতে দেবেনই না। উত্তর প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তাকে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করার পর তিনি ভেতরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। ঢুকতেই একটু ধাক্কা লাগল। বাইরের জীর্ণশীর্ণ আবহের সঙ্গে অন্দরমহলের কোনো মিল নেই। বরং বেশ গোছানো, পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ক্রিকেটের স্মৃতিচারণার এক দারুণ মঞ্চ এই ‘পার্ক মিউজিয়াম’।
ভেতরে ঢুকতেই সৈয়দ কিরমানি, কপিল দেবের সঙ্গে মহিন্দর অমরনাথের একটা পুরোনো ছবি দেখলাম। ইমরান খানের ওয়ার্ম আপ করার ছবিটা পাশেই। আরও অনেক পুরোনো ছবির মধ্যে নবজ্যোত সিং সিধুর সঙ্গে শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটিং উদ্বোধনে নামার ছবিটা চোখে পড়ল। ফারুক ইঞ্জিনিয়ারের সেঞ্চুরি উদ্যাপনের ধূসর একটা ছবি, সঙ্গে বাঁধাই করা পেপার কাটিংয়ের সামনে ক্রিকেট–ভক্ত হলে আপনি কিছুক্ষণ নিশ্চয়ই দাঁড়াবেন।
পার্ক মিউজিয়ামে সেই যুগের ক্রিকেটারদের সঙ্গে এই যুগেরও একটা সেতু খুঁজে পাবেন। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সিরিজের বেশ কিছু ছবি দেয়ালে ঝুলছিল। গ্রায়েম স্মিথ, এবি ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলারা সেই ছবিগুলোর মধ্যমণি। নিউজিল্যান্ডের কেইন উইলিয়ামসনকেও খুঁজে পাওয়া গেল বেশ কয়েকটি ছবিতে। যেহেতু ভারতের মাঠ, আইপিএলের স্মৃতিচিহ্ন তো থাকবেই।
নিয়মিত আইপিএলের ম্যাচ না হলেও ভেন্যুর সংকটে পড়লে বিসিসিআই এ মাঠে কিছু আইপিএলের ম্যাচ আয়োজন করেছে, সেটাও আইপিএলের শুরুর দিকে। আইপিএল যুগে ক্রিকেট দেখে বড় হওয়া সমর্থকেরা মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের জার্সিতে শচীনের সঙ্গে সনাৎ জয়াসুরিয়ার ছবি দেখে ছোটবেলায় ফিরে যেতে পারেন।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর জার্সিতে অনিল কুম্বলে, কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে গৌতম গম্ভীরের ছবিও সেই কাজটা করবে। গ্রিন পার্কের গ্রিন মিউজিয়ামে মিনিট দশেকের জন্য ঘুরে এলে ক্রিকেট ইতিহাসের ছোট্ট একটা পাঠ হয়ে যাবে সহজেই।