বিশ্বকাপে জায়গা পেতে এভাবেই পারফর্ম করতে চান সাইফউদ্দিন
তানজিদ হাসানের অভিষেক রাঙানো অর্ধশত নাকি তাসকিন আহমেদের ৩ উইকেট—কোনটা ম্যাচের সেরা পারফরম্যান্স? গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা শেষে এ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছিল।
মাঠের ওপাশে তখন পুরস্কার বিতরণ পর্ব শুরু হবে হবে করছিল। আরেকজন সাংবাদিক এসে তখন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ৩ উইকেট নেওয়ার কথাটাও মনে করিয়ে দিলেন। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়েকে ৮ উইকেটে হারানোর ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা গেল তাসকিনের হাতে।
এক দিনে যখন তিন পারফরমার, তখন সংবাদ সম্মেলনে কাকে রেখে কে আসবেন, সেটাও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তানজিদ, তাসকিন নাকি সাইফউদ্দিন? কিছুক্ষণ পর দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে কক্ষের দিকে এগোতে দেখা গেল সাইফউদ্দিনকে। ১৮ মাস পর ফিরেই দলের জয়ে অবদান রাখতে পেতে স্বস্তি তাঁর শরীরী ভাষায়। ফিরে দলের জয়ে অবদান রাখতে পারার অনুভূতি জানতে চাওয়া হয় এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারের কাছে।
সাইফউদ্দিনও আবেগটা লুকালেন না, ‘আলহামদুলিল্লাহ, প্রায় ১৮ মাস পর আন্তর্জাতিক মাঠে ফিরলাম। আমার জন্য বিষয়টা কঠিন ছিল।’ বিশ্বকাপ দলে জায়গা নিশ্চিত করার বিষয়টিও এল তাঁর কথায়, ‘যদি আমি বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পেতে চাই, আমার জন্য এই পারফরম্যান্সটার বিকল্প নেই।’ সর্বশেষ দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঠিক আগের সিরিজে বাজে পারফর্ম করে বাদ পড়ার স্মৃতিও স্মরণ করছেন, ‘এর আগে ২০২১-২২ (আসলে ২০২২) বিশ্বকাপে আমি শেষ মুহূর্তে বাদ পড়ি পারফরম্যান্সের কারণে। এ জন্য অনেক সিরিয়াস ছিলাম। পারফর্ম করতে চাচ্ছিলাম।’
বড় টুর্নামেন্টের আগে জাতীয় দলের পেস বোলিং বিভাগে প্রতিযোগিতার উত্তাপও টের পাচ্ছেন সাইফউদ্দিন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম তিন ম্যাচের দলে মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্রামে থাকায় সুযোগ পেয়েছেন সাইফউদ্দিন। শেষ দুই ম্যাচের দলে মোস্তাফিজ ফিরলে জায়গা ধরে রাখতে হলে তাঁকে পারফর্ম করে যেতে হবে।
সাইফউদ্দিন নিজেই বললেন, ‘আজকে অনেক নার্ভাস ছিলাম (হাসি)। এর আগে অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি, তবে নার্ভাস ছিলাম না। আমার জন্য ভালো করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেহেতু দুই ম্যাচ পরে ফিজ আসবে। একাদশ কী হবে না হবে, ম্যানেজমেন্ট জানে। আমি চেষ্টা করেছি ভালো করার। আরও ভালো করতে পারলে ভালো লাগত। আরও ৪টা ম্যাচ বাকি। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।’
সাইফউদ্দিনের মতো স্নায়ুর চাপ অনুভব করার কথা তানজিদেরও। বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ আছে তাঁরও। ছোট্ট রান তাড়ার ম্যাচে তিনি ইনিংসের শুরুটা করেছিলেন দুবার জীবন পেয়ে। এরপর সেই তানজিদই অপরাজিত ৬৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। সাইফউদ্দিনের সংবাদ সম্মেলনে এসেছে তাঁর প্রসঙ্গও, ‘হ্যাঁ, প্রথম ম্যাচ হিসেবে সে (তানজিদ) যে রকম আগ্রাসী ব্যাট করেছে, সত্যিই প্রশংসনীয়। হয়তো সৌম্য ভাই ফিট থাকলে ও সুযোগ পেত না। ও সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। আশা করব, পরের চারটা ম্যাচেও যেন ধারাবাহিক থাকে।’
প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েও সামনের ম্যাচগুলোতে ঘুরে দাঁড়াবে, এমন আভাস দিয়েছেন সাইফউদ্দিন। অভিজ্ঞতাও জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের এই দলটা থেকে এগিয়ে, সেটি মনে করিয়ে দিয়েছেন সাইফউদ্দিন, ‘জিম্বাবুয়ের ৪-৫ জন খেলোয়াড় আছে, যারা অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলে, সেখানে আমরা পিছিয়ে আছি। কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কায় তারা অনেক ভালো একটা সিরিজ খেলেছে। টি-টোয়েন্টিতে আসলে কোনো দলকেই হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই। কিছুদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল হেরে গেছে নেপালের কাছে।’
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জিততে কী করতে হবে, সেটার ছকও কাল খোলাসা হয়েছে। নতুন বলে দুই দলের ব্যাটসম্যানদেরই কষ্ট হয়েছে। তবে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা কঠিন সময়টা টিকে থেকে পার করায় মাঝের ওভারে দ্রুত রান তুলতে পেরেছেন। সাইফউদ্দিনও বললেন, ‘শুরুতে আমাদেরও কষ্ট হয়েছে। জিম্বাবুয়ে সেখানে ভেঙে পড়েছে। ওরা উইকেট বুঝতে ভুল করেছে। এখানে ১৮০ রান অনায়াসে হয়। আমাদের ব্যাটিং যেহেতু ভালো হচ্ছে, বোলিং বিভাগটা ভালো করতে থাকলে ভালো হবে।’