শরীফুল-রানারাই ওদের ‘শোয়েব-লি’
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে সপ্তাহখানেক ধরেই চলছে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেস বোলিং ক্যাম্প। ৯ পেসারের একটা দলকে নিয়ে প্রতিদিন একাডেমি মাঠের গ্রিনহাউসে কাজ করছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেস বোলিং কোচ নাজমুল হোসেন। আজ বয়সভিত্তিক পর্যায়ের পেসারদের সেই দলটা পেল পেস বোলিংয়ের অন্য রকম শিক্ষা। মূল মাঠে টেস্ট দলের অনুশীলন শেষে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেসারদের সঙ্গে দেখা করলেন পাকিস্তান জয় করে আসা তিন পেসার শরীফুল ইসলাম, নাহিদ রানা ও খালেদ আহমেদ।
পেস বোলিংয়ের খুঁটিনাটি, শৃঙ্খল জীবনযাপন, ক্যারিয়ারের অধ্যায়ের পাঠ কী হওয়া উচিত… এসব নিয়ে খুদে পেসারদের সঙ্গে কথা বলেছেন শরীফুলরা। দেখিয়েছেন বোলিংয়ের কিছু গ্রিপ। মিনিট বিশেকের ছোট্ট সেশনে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেসাররা ছিলেন মন্ত্রমুগ্ধ স্রোতা। আগের প্রজন্মের মতো তাঁদের যে এখন ‘আইডল’ খুঁজতে দেশের বাইরে তাকাতে হয় না! তাসকিন-শরীফুলরাই এখন তাঁদের কাছে শোয়েব আখতার কিংবা ব্রেট লি।
শরীফুলদের কাছ থেকে ফাস্ট বোলিংয়ের পাঠ নেওয়ার পর সেই অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেসার শাহরিয়া আল আমিন বলেন, ‘এক সময় কথা হতো, বাংলাদেশে পেসাররা ভালো করছে না। তাদের উচ্চতা নেই। কিন্তু আমাদের দেশ এখন অনেক ভালো করছে। এখন আর ওই কথাগুলো বোলার সুযোগ নেই। আমার পছন্দ যেমন তাসকিন ভাই।’
কী পরামর্শ পেয়েছেন সিনিয়রদের কাছ থেকে, সেটাও বললেন আল আমিন, ‘একজন পেসার হিসেবে লাইফস্টাইল কেমন হওয়া উচিত, খেলার কোন অবস্থায় কী করা উচিত, ক্যারিয়ারের কোন ধাপে কী করতে হয়…এসব নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। নতুন কোনো স্কিল নিয়ে কাজ শুরু করলে সেটা যেন ধৈর্য ধরে অভ্যাসে পরিণত করে এরপর ম্যাচে প্রয়োগ করি, এটা নিয়ে বলেছেন।’ আরেক পেসার আল ফাহাদও শোনালেন তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘কোন কন্ডিশনে কীভাবে কোন জায়গায় বোলিং করতে হয়, এসব নিয়ে কথা বলেছেন। নাহিদ রানা ভাই গতি নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন।’
কোচ নাজমুল হোসেনের জন্য অভিজ্ঞতাটা ছিল অন্য রকম। শরীফুল, খালেদদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন সাবেক এই পেসারের। তাঁদের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯–এর পেসারদের কথা বলিয়ে দেওয়ার ভাবনাটা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এ নিয়ে দুটি ব্যাচের সঙ্গে কাজ করছি। এখন যারা খেলছে জাতীয় দলে, ওরা ওপরে যাওয়ার আগে টুকটাক আমাদের সঙ্গেই ছিল। ওদেরকে এটাই বুঝিয়েছি, আমাদের সঙ্গে কাজ করে ওরাই এখন জাতীয় দলে ভালো করছে। এখন যারা অনূর্ধ্ব-১৯-এ আছে, তারাও যেন ওদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়, সে জন্য ছেলেদের সঙ্গে শরীফুলদের দেখা করিয়ে দেওয়া। ওরাও যেন দেখে বুঝতে পারে যে সঠিক প্রক্রিয়ায় এগোলে শীর্ষ পর্যায়ে যাওয়া যায়, ভালো করা যায়।’
কোচ নাজমুলসহ জাতীয় দলের পেসাররা জুনিয়রদের সঙ্গে কথা বলার সময় সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের বিষয়টিতে বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন। নাজমুলও সেটাই বললেন, ‘পেস বোলারদের কিন্তু অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। ঘুম, বিশ্রাম, খাওয়া…পেসারদের এসবে কোনো ছাড় দেওয়ার উপায় নেই। একজন ব্যাটসম্যান কিছুটা ছাড় দিলেও সমস্যা হয় না। কিন্তু পেসারদের সে সুযোগ নেই। ওরা এ কথাগুলোই বারবার বলেছে। আর পেসারদের অনেকেই কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে খুব দ্রুতই জাতীয় দলে জায়গা করে নেয়। তাই ওরা যেন ভালোমতো সব শিখে আসে, এসব নিয়ে আলাপ করেছে।’
শরীফুল বোলিংয়ের বাইরে আলাদা করে ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন। পরে প্রথম আলোকে তিনি সেই অভিজ্ঞতা শোনাতে গিয়ে বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে এলে সেই অর্থে বড় দল বলতে কিছু নেই। সবাই প্রায় একই মানের। বাংলাদেশ সেদিক থেকে সব সময় এই পর্যায়ে ভালো দল। আমি নিশ্চিত, এখন যারা আছে তারাও বেশ ভালো করবে। আজ ওদের সঙ্গে কথা বলেও তেমনই মনে হলো। আশা করছি, ওরা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ভালো করে ভবিষ্যতে জাতীয় দলেও ভালো করবে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সমর্থকদের চাওয়াও নিশ্চয়ই শরীফুলের মতোই।