বিপিএল ফাইনালে চোখ থাকবে যাঁদের ওপর
চট্টগ্রাম না বরিশাল? প্রাচ্যের ভেনিস না বার আউলিয়ার দেশ—বিপিএলে শেষ হাসি হাসবে কারা? উত্তর জানা যাবে আজই। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ছয়টায় ফাইনালে মুখোমুখি হবে চিটাগং কিংস ও ফরচুন বরিশাল।
ফাইনালে ওঠার পথে দুই দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় প্রয়োজনের মুহূর্তে পারফর্ম করেছেন। ফাইনালেও চোখ থাকবে তাঁদের ওপর। শেষ লড়াইয়ের আগে আসুন একবার চোখ বুলিয়ে নিই তাঁদের ওপর।
চিটাগং কিংস:
আলিস আল ইসলাম:
চিটাগং কিংসের এই স্পিনার এবার বিপিএলে তাঁর দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। তবে চিটাগং ফাইনালে উঠেছে তাঁর ব্যাটিংয়ে ভর করে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে চোট নিয়েও ৭ বলে তাঁর ১৭ রানের অপরাজিত ‘ক্যামিও’ ইনিংসে খুলনা টাইগার্সকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে চিটাগং। অর্থাৎ চিটাগংয়ের ব্যাটিংয়ে ভালোভাবে ফিনিশ করতে আটে কিংবা নয়ে ভালো ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা আছে আলিসের। বরিশালের শক্তিশালী ব্যাটিংয়ের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে আলিসের রহস্য–স্পিন। নতুন বলে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারলে আলিসের কাছ থেকে রান তুলতে হাঁসফাঁস করতে পারে বরিশাল। ১৩ ইনিংসে ৬.৩২ ইকোনমি রেটে ১৫ উইকেট নিয়েছেন আলিস।
খালেদ আহমেদ:
এবার বিপিএলে চিটাগংয়ের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। নতুন বলে উইকেট এনে দেওয়ার পাশাপাশি শেষ দিকেও উইকেট নিয়েছেন এই পেসার। এবার তাসকিন আহমেদের গড়া বিপিএলের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ছুঁতে আরও ৫ উইকেট চাই খালেদের। তবে ৫ উইকেট নেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে রান যেন বেশি না দিয়ে ফেলেন, সেটাও তাঁকে মাথায় রাখতে হবে। ১৩ ইনিংসে ২০ উইকেট নেওয়া খালেদের ইকোনমি ৮.৫৮।
শামীম হোসেন:
এবার বিপিএলে সর্বোচ্চ ১০ রান সংগ্রাহকের মধ্যে সেরা স্ট্রাইক রেট শামীম হোসেনের। পাঁচে কিংবা ছয়ে নেমে ইনিংস কিংবা ম্যাচ ভালোভাবে শেষ করায় দারুণ করছেন এই বাঁহাতি। মিরপুরে এই বরিশালের বিপক্ষেই প্রথম কোয়ালিফায়ারে ৪৭ বলে ৭৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন। ফাইনালে আজ তাঁর কাছ থেকে তেমন একটি ইনিংসই দেখতে চাইবে চিটাগং।
খাজা নাফা:
খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ৪৬ বলে ৫৭ রানের ভালো একটি ইনিংস খেলেন পাকিস্তানি এ ওপেনার। লিগ পর্বে সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষেও ৩০ বলে খেলেন ৫২ রানের দারুণ এক ইনিংস। ফাইনালে আজ খাজার কাছ থেকে তেমনই এক ইনিংসে প্রত্যাশায় থাকবে চিটাগং।
পারভেজ হোসেন:
বিস্ফোরক ওপেনার হিসেবে ভাবা হলেও এবার বিপিএলে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১২৩.২২। তবে ব্যাটে যে আগুন ঝরাতে পারেন সেটাও সবার জানা। লিগ পর্বে এই বরিশালের বিপক্ষেই ১৮২.৯২ স্ট্রাইক রেটে ৪১ বলে করেছিলেন ৭৫। ফাইনালে পারভেজের কাছ থেকে তেমনই এক ইনিংস চাই চিটাগংয়ের।
ফরচুন বরিশাল:
ডেভিড ম্যালান:
সর্বশেষ চার ম্যাচেই রান পাওয়ায় ধারাবাহিক এই ইংলিশ বাঁহাতি। চিটাগং কিংসের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলেন ২২ বলে ৩৪ রানের অপরাজিত ইনিংস। তার আগের ম্যাচে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলেন ৩৪ বলে ৬৭ রানের ইনিংস। ঢাকা ক্যাপিটালের বিপক্ষে করেন অপরাজিত ৩৭ ও খুলনার বিপক্ষে ৬৩। ফর্মে থাকায় ম্যালানের ব্যাটে তাকিয়ে বরিশাল। চিটাগংয়ের বিপক্ষে নিজের শেষ দুই ম্যাচে যেহেতু রান পেয়েছেন, তাই ফাইনালে তাঁকে নিয়ে আশা করতেই পারে বরিশাল।
মাহমুদউল্লাহ:
বড় ম্যাচে ভালো করার সুনাম আছে বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের একজন মাহমুদউল্লাহর। চিটগংয়ের বিপক্ষে তাঁর খেলা সর্বশেষ ম্যাচে ২৬ বলে ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন। ফাইনালে তাঁর কাছ থেকে এমন ইনিংসের আশায় থাকবে বরিশাল। পাঁচে কিংবা ছয়ে নেমে মাহমুদউল্লাহর ইনিংস ভালোভাবে শেষ করা কিংবা ম্যাচ জেতানো ইনিংসের প্রত্যাশায় থাকবে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।
কাইল মায়ার্স:
ফাইনালে এই ক্যারিবিয়ান পেস অলরাউন্ডার হতে পারেন বরিশালের বড় ভরসা। ৬ ম্যাচে ৫ ইনিংসে ১৮১.১১ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ১৬৩ রান। বল হাতে ৬ ইনিংসে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ইকোনমি অবশ্য একটু বেশি—৭.৭৮। তবে নতুন বলে বরিশালের হয়ে নিয়মিতই বোলিং করেন। মায়ার্স ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলে বিপদে পড়তে পারে চিটাগং।
জিমি নিশাম:
নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার জিমি নিশামকে দলে ভিড়িয়ে ফাইনালের আগে শক্তি বাড়িয়েছে বরিশাল। দেশে–বিদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে এই পেস অলরাউন্ডারের। বড় ম্যাচে কী করতে হয়, সেটাও তাঁর ভালোভাবে জানা আছে।
তাওহিদ হৃদয়:
তামিম ইকবাল ও ডেভিড ম্যালানের পর এবার বিপিএলে বরিশালের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তবে তাওহিদ হৃদয়ের প্রথম কোয়ালিফায়ারের পারফরম্যান্সের জন্য ফাইনালে তাঁকে নিয়ে আলাদা করে পরিকল্পনা করতে পারে চিটাগং। সে ম্যাচে ৫৬ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন হৃদয়। ফাইনালেও এমন একটি ইনিংস খেলতে পারলে চিটাগং বিপদে পড়তেই পারে।