আর খেলতে চান না—এ মনোভাব নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যাচ্ছেন নিগাররা
সংবাদ সম্মেলনে দলের ম্যানেজার ও নির্বাচক, অধিনায়কের সঙ্গে আনা হলো প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে ডাক পাওয়া অলরাউন্ডার মারুফা আক্তারকেও। বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার বলে নিলেন মারুফাকে আনার উদ্দেশ্যটা, তিনি যে বিসিবির ঘরোয়া ক্রিকেটের ফসল। এরই মধ্যে ১৬ বছর বয়সী মারুফার গল্পটা অনেকেরই জানা, তবে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এলেন এই প্রথম। শুধু জাতীয় দলে প্রথমবার ডাক পাওয়া নয়, মারুফা এই প্রথম দেশের বাইরে সফরেও যাচ্ছেন।
মারুফা রোমাঞ্চিত, তাঁকে ঘিরে রোমাঞ্চ শোনা গেল অধিনায়ক নিগার সুলতানার কণ্ঠেও। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলতে যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ভবিষ্যতে আর এ টুর্নামেন্টে খেলতে চান না তাঁরা! সরাসরিই খেলতে চান বিশ্বকাপে। বাছাইপর্বেও নিজেদের ফেবারিটই মনে করছেন নিগার।
আগামী বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশকে পেরোতে হবে এই বাছাইপর্ব। আট দলের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ যাচ্ছে ফেবারিট হিসেবেই, গত দুবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। নিউজিল্যান্ডে এ বছর হয়ে যাওয়া ৫০ ওভারের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স দিয়ে নিশ্চিত হয়েছে, সামনের উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপের চক্রে থাকছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনাও (এফটিপি)। তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ সেখানে খেলবে আটটি দলের সঙ্গে, যেখানে থাকবে ভিন্ন সংস্করণের সিরিজ।
নিগারদের চোখ সেদিকেই, ‘আমরা আসলে আর বাছাইপর্ব খেলতে চাচ্ছি না। কারণ, এটা বাড়তি একটা সূচি—বাঁচামরার অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়, বিশ্বকাপ খেলতে পারব কি না, সে চাপও থাকে। এফটিপিতে এখন ঢুকে গেছি, এখন অন্য দলগুলোর সঙ্গে ওয়ানডের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিও খেলতে পারব। সিরিজের পাশাপাশি পারফরম্যান্স লক্ষ্য এমন থাকবে, যাতে পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে পারি।’তবে সে লক্ষ্যের জন্য সামনের টুর্নামেন্টের কথাও ভুলে যাচ্ছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘(লক্ষ্য) প্রথমত বলব যে, আইসিসি টি-টোয়েন্টি কোয়ালিফায়ার বলে প্রথম উদ্দেশ্যে থাকবে কোয়ালিফাই করা। আমি বলব দল হিসেবে এই দলটা অনেক দিন ধরে ক্রিকেট খেলছি একসঙ্গে। সে ক্ষেত্রে আমরা একে-অপরকে জানি। আমি মনে করি, আমাদের দলের যে সামর্থ্য আছে, আমরা যদি ধারাবাহিক পারফর্ম করতে পারি, ব্যাটাররা যদি ভালো করতে পারে, আমরাই ফেবারিট হিসেবে থাকব।’
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সর্বশেষ দুটি আসরেরই চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, তার আগেরটিতে আবার রানার্সআপ। সে হিসেবে নিগারের দলকেই ফেবারিট বলতে হয়। যদিও এবার গ্রুপ পর্বেই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকছে আয়ারল্যান্ড, যারা সর্বশেষ তিনবারের মধ্যে দুবারই ফাইনাল খেলছে। তবে নিগার আইরিশদের বিপক্ষেও এগিয়ে রাখছেন নিজেদের, ‘আয়ারল্যান্ড ভালো দল আমাদের বিপক্ষে। কিন্তু তাদের যদি পরিসংখ্যান দেখেন আমাদের বিপক্ষে জয় খুব কম তাদের। সে জায়গা থেকে আমি বলব আমাদের দল ফেবারিট।’
বাংলাদেশ অবশ্য আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলছে না বেশ কিছু দিন ধরেই। এ বছরের শুরুতে কমনওয়েলথ গেমসের বাছাইপর্বের এ সংস্করণে খেলা হয়নি দলটির। ওই টুর্নামেন্টের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩৬ রান তাড়ায় ১১৪ রানেই আটকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ভুগিয়েছে দলের ব্যাটিংই।
এবার ব্যাটিং নিয়ে অবশ্য নতুন আশার কথাই শোনালেন নিগার, ‘সম্প্রতি দুটো লিগ খেলেছি আমরা—এনসিএল ও প্রিমিয়ার লিগ। সেখানে দেখবেন যারা ব্যাটার ছিল, স্কোয়াডে আছে বা স্কোয়াডের বাইরেও অনেকে ছিল—যারা ব্যাটিংটা অনেক ভালো করেছে। শেষ এনসিএলে আমরা বড় শট খেলতে পারে এমন তিন-চারজনকে পেয়েছি। বিশেষ করে সোবহানা (মোস্তারি) আছে, রিতু মনি আছে, জাহানারা আপুও শেষে গিয়ে মারতে পারে। এর সঙ্গে যদি মারুফাকে একাদশে পাওয়া যায়। একসময় যে ঘাটতিটা ছিল—দু-একজন শুধু বড় শট খেলছিল বা ওভার বাউন্ডারি মারছিল। এখন অনেক অপশন আছে আমাদের। এবার ওখানে খুব বেশি ভুগতে হবে না। ব্যাটাররা ভালো অবস্থায় আছে, ফিটনেস ক্যাম্পের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও পাওয়ার হিটিংয়ের অনুশীলন করেছি ইনডোর ও আউটডোরে।’
১৮ সেপ্টেম্বর আবুধাবিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশের। ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে আইসিসির আনুষ্ঠানিক সূচি হলেও বাংলাদেশ আগেভাগেই যাচ্ছে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। ছেলেদের চলমান এশিয়া কাপের কন্ডিশন দেখার পর নিগার বলছেন, ‘আবহাওয়াটা বাজে, মানিয়ে নেওয়া কষ্ট। আয়ারল্যান্ড তো আরও শীতপ্রধান দেশ থেকে আসবে। তবে আমরা “হার্ট অ্যান্ড সোল” চেষ্টা করব মানিয়ে নিতে।’