‘আফগানিস্তানকে কেউ আর হালকাভাবে নেবে না’
লাহোরে গতকাল আফগানিস্তানের কাছে ৮ রানের হারে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ছিটকে পড়েছে ইংল্যান্ড। এ ম্যাচের পর কোনো দল ‘আর কখনো’ আফগানিস্তানকে হালকা চোখে দেখবে না বলে মনে করেন দলটির প্রধান কোচ জোনাথন ট্রট।
বাঁচামরার এই ম্যাচে আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ৩২৫ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাট থেকে এসেছে ১৪৬ বলে ১৭৭ রানের দারুণ এক ইনিংস। তাড়া করতে নেমে জো রুটের ১২০ রানের ইনিংসে ইংল্যান্ড জয়ের পথে থাকলেও শেষ দিকে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায়। জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি ইংল্যান্ড।
আইসিসির বড় টুর্নামেন্টে বড় দলগুলোর বিপক্ষে ধারাবাহিক জয় পাচ্ছে আফগানিস্তান। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠার পথে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে হারায় আফগানিস্তান। এর আগে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তাদের কাছে হেরেছে ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান।
ট্রট মনে করেন, এসব দলীয় সাফল্যে আফগানিস্তান নিয়ে প্রতিপক্ষ দলগুলোর ধারণা পাল্টে গেছে। আফগানিস্তানের এই ইংলিশ কোচ কাল জয়ের পর বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং (কাল রাতে) এখন যা ঘটল, খেলোয়াড়দের বলেছি; আফগানিস্তানকে আর কেউ কখনো হালকাভাবে নেবে না।’
ট্রট বলে যান, ‘আগে সবাই আমাদের ম্যাচের দিকে তাকিয়ে হয়তো ভেবেছেন, ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে এমন কোনো টেস্ট দলের মুখোমুখি হওয়ার চেয়ে এটা সহজ। কিন্তু এই সংস্করণ এবং এই কন্ডিশনে, সেটা আমি মনে করি না। আমি মনে করি, আমাদের খেলা সব ম্যাচই হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং জয়ের লক্ষ্য নিয়ে সব ম্যাচে নামি। অস্ট্রেলিয়াও আমাদের হালকাভাবে নেবে না।’
আফগানিস্তান কোচ অস্ট্রেলিয়ার প্রসঙ্গ তুলেছেন সামনের সূচিতে তাকিয়ে। লাহোরে আগামীকাল গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে ট্রটের দল। এ ম্যাচে হারলেই বাড়ি ফিরতে হবে আফগানিস্তান দলকে। ট্রট এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমি কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনবার খেলেছি। প্রতি ম্যাচেই আমরা লড়াই করেছি। খেলোয়াড়দের (কাল রাত) আজ রাতটা উপভোগ করতে বলব। আগামীকাল (আজ) ঘুম থেকে ওঠার পর এটা নিশ্চিত করব, তারা যেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্রুত প্রস্তুত হয়ে ওঠে। এখন অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেই মনোযোগ, খেলোয়াড়দের ভাবনা এটাই এবং আমি সমর্থকদেরও সে কথাই বলব।’
ট্রট সমর্থকদের প্রশংসাও করেন। কারণ, আফগানিস্তানের সমর্থকেরা তাঁকে হতাশ করেননি। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে প্রচুর আফগান–সমর্থক জমায়েত হয়েছিলেন। পাকিস্তান এমনিতেই আফগানিস্তানের অনেক শরণার্থীর আশ্রয়স্থল। লাহোরে পশতু ভাষার অনেক মানুষেরও বসবাস। ট্রট এ নিয়ে বলেছেন, ‘সমর্থন পাওয়াটা খেলোয়াড়দের জন্য খুব ভালো হয়েছে। কারণ, আমরা বেশির ভাগ সময় আরব আমিরাতে খেলি। পাকিস্তানে থাকা মানে তারা (খেলোয়াড়েরা) যেখান থেকে উঠে এসেছে, তার কাছাকাছি থাকা। আশা করি, শুক্রবার আসন ফাঁকা থাকবে না।’
ইংল্যান্ডকে হারানোর এই রাত খেলোয়াড়েরা ভুলতে পারবেন না বলে মনে করেন ট্রট, ‘খেলোয়াড়দের জন্য এটা বিশাল অভিজ্ঞতা এবং এমন সব রাত তারা ভুলতে পারবে না বলে মনে করি। আইসিসি ইভেন্টে এমন আরও রাত এসেছে আমাদের জন্য এবং সেগুলো শুক্রবারের ম্যাচের জন্য আত্মবিশ্বাস জোগাবে।’
২০২২ সালের জুলাইয়ে আফগানিস্তানের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন ট্রট। তখন আফগানিস্তানকে ক্রিকেটে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে দেখা হতো। মাঝের এ সময়ে বড় দলগুলোকে বড় ইভেন্টে হারিয়ে অনেকটা পথ এগিয়েও এসেছে আফগানিস্তান। তার পেছনে আফগানিস্তানের নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দেরও দারুণ অবদান।
জাদরানের ইনিংসটিই যেমন, যা নিয়ে ট্রট বলেছেন, ‘ইনিংসটি খেলোয়াড় হিসেবে জাদরানের যোগ্যতা দেখিয়ে দিয়েছে। সে দারুণ কিছু শট খেলেছে। তার জন্য আমি সত্যিই আনন্দিত...আশা করি সে এই ফর্ম ধরে রাখতে পারবে। ইনিংসটি তার জন্য স্মরণীয়, অনেক দিন মনে রাখবে। তবে এটাও আশা করি, শুক্রবার যেন এমন কিছুর পুনরাবৃত্তি করতে পারে।’