রান তাড়ায় কি কোহলিই সর্বকালের সেরা
কোনো না কোনো মাইলফলক এখন তিনি প্রায় প্রতি ম্যাচেই স্পর্শ করেন বা ছাড়িয়ে যান। বিরাট কোহলি এখন ক্যারিয়ারের এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন, ব্যাট হাতে তিনি নামা মানেই যেন নতুন কোনো কীর্তি।
এই যেমন আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালেও একটা নতুন মাইলফলক পেরিয়ে গেছেন ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ২৬৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে খেলেছেন ৯৮ বলে ৮৪ রানের দারুণ এক ইনিংস। ভারতের জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকাও কোহলির ওই ‘মাস্টারক্লাস’ ইনিংসেরই।
আর এই ইনিংস খেলার পথেই ওয়ানডেতে তাড়া করতে নেমে ৮ হাজার রানের মাইলফলকও পেরিয়ে গেছেন কোহলি। ওয়ানডেতে তাড়া করতে নেমে ৮ হাজারের বেশি রান কোহলি ছাড়া আছে শুধু আর একজনেরই। সেই নামটা অনুমান করাও খুবই সহজ—শচীন টেন্ডুলকার।
৪৬৩ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে ৪৫২ ইনিংসে ব্যাট করেছেন টেন্ডুলকার। এর মধ্যে পরে ব্যাট করেছেন ২৩২ ইনিংসে, তাড়া করতে নেমে তাঁর মোট রান ৮৭২০, গড় ৪২.৩৩। ২৬ ইনিংসে টেন্ডুলকার নিজে অপরাজিত থেকে মাঠ ছেড়েছেন।
তাড়া করতে নেমে আজ ৮ হাজার রানের মাইলফলক পেরোনো কোহলি হয়তো কিছুদিন পর এই তালিকায় টেন্ডুলকারকেও পেরিয়ে যাবেন। তবে এরই মধ্যে কিছু জায়গায় তিনি টেন্ডুলকারের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তাড়া করতে নেমে আজ কোহলি খেলেছেন তাঁর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৭০ নম্বর ম্যাচে ১৫৯ নম্বর ইনিংস। ৩৫ ইনিংসে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়া কোহলির গড় ৬৪.৫০।
এটা যে কতটা অবিশ্বাস্য, তা বোঝা যাবে আরও একটা তথ্য দিলে। তাড়া করতে নেমে অন্তত ৫ হাজার রান করেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কোহলি ছাড়া আর কারও গড়ই ৫০ নয়! ওয়ানডের আরও কয়েকজন কিংবদন্তির সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যাবে এ ক্ষেত্রে কোহলির মাহাত্ম্যটা।
তাড়া করতে নেমে কোহলিরই সতীর্থ ও ভারতের বর্তমান অধিনায়ক রোহিত শর্মা ৬১১৫ রান করেছেন ৪৯.৭১ গড়ে, সনাৎ জয়াসুরিয়া ৫৭৪২ রান করেছেন ২৯.৪৪ গড়ে, দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি জ্যাক ক্যালিসের রান ৪৪.৯৫ গড়ে ৫৫৭৫, ক্রিস গেইল ৫৫৫৯ রান করেছেন ৩৯.৯৯ গড়ে, ৪২.৭১ গড়ে ব্রায়ান লারার রান ৫৪২৫, কুমার সাঙ্গাকারা ৫৪০০ রান করেছেন ৪০.২৯ গড়ে, ৪১.৯৩ গড়ে রিকি পন্টিংয়ের রান ৫০৭৪।
ওয়ানডেতে কোহলির ৫১ সেঞ্চুরির ২৮টি এসেছে পরে ব্যাট করে, যার মধ্যে ২৪টিতেই জিতেছে ভারত। এর ১৪টিতেই তিনি ছিলেন অপরাজিত। অন্যদিকে ওয়ানডেতে ৪৯ সেঞ্চুরির মালিক টেন্ডুলকারের তাড়া করতে নেমে সেঞ্চুরি ১৭টি, যার ১৪টিতেই জিতেছে ভারত। পরে ব্যাট করে রোহিতের ১৬ সেঞ্চুরির ১৩টিতে জয় পেয়েছে তাঁর দল।
আরও একটা জায়গায় কোহলি এরই মধ্যে ওয়ানডের সব কিংবদন্তিকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাড়া করতে নেমে দল জিতেছে এমন ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান তাঁর। ওয়ানডেতে টেন্ডুলকার পরে ব্যাট করে দলকে জেতানো ম্যাচে মোট করেছেন ৫৪৯০ রান। কোহলি এরই মধ্যে ৫৯১৩ রান করেছেন তাড়া করতে নেমে, যা দলের জয়ে ভূমিকা রেখেছে। পরে ব্যাট করে দল জিতেছে এমন ম্যাচে রোহিতের মোট রান ৪৪৭৬, পন্টিংয়ের ৪১৮৬, ক্যালিসের ৩৯৫০।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে কোহলির ব্যাট আরও চওড়া হাসি হেসেছে। আজ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এই প্রতিযোগিতার শেষ চারের ম্যাচ খেললেন কোহলি। প্রতিবারই ব্যাট করেছেন পরে। ২০১৩ সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৫৮, ২০১৭ সেমিফাইনালে বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ৯৬, আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৪ রানে আউট হলেও ভারতের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েই গেছেন।
সব রকম পরিসংখ্যান এটাই বলছে, ওয়ানডেতে রান তাড়ায় কোহলি সর্বকালের সেরাদের মধ্যে এগিয়েও। হয়তো সেরাই। কোহলির নিজের অবশ্য এসব নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচসেরা হয়েও যেমন ভারতীয় এই ব্যাটসম্যান বলেছেন, তাঁর কাছে এসব পরিসংখ্যান আর মাইলফলকের খুব একটা মূল্য নেই এখন। এটাই তাঁর সেরা ইনিংস কি না, এমন প্রশ্নে কোহলির উত্তর, ‘আমি জানি না, এসব ঠিক করা আপনাদের কাজ। আমি কখনো এসবে মনোযোগ দিইনি। এসব মাইলফলক নিয়ে ভাবি না, এগুলো আসলে হয়ে যায়।’
পাকিস্তানের বিপক্ষেও দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়েছিলেন। আজ সেমিফাইনালে দলকে জেতালেও খুব কাছে গিয়ে সেঞ্চুরি পাননি। তবে এ নিয়ে তাঁর কোনো আক্ষেপ নেই, ‘আমার কাছে দলের জয়টাই বড়। বাকি কোনো কিছু এখন আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।’