চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে বিপিএলে বাংলাদেশের তারকাদের এ কী অবস্থা

এবারের বিপিএলে কি তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিমরা খেলছেন? হুট করে মনে এমন প্রশ্ন তো জাগতেই পারে। না, যাঁরা খেলার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের হয়তো জাগবে না। তবে রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে বসেও তো কিছু দর্শক খেলা দেখেন। যাঁরা ইএসপিএনক্রিকইনফো চেনেন না, চার–ছক্কায় শুধু হাততালি দেন।

খেলোয়াড়দের নামটাও তখন অন্য কারও কাছ থেকে শুনে নেন, তাঁদের মনে এই প্রশ্নটা জাগতে পারে! কারণ, মুশফিকরা যে এবারের বিপিএলে অনেকটাই দর্শক। অন্তত এখন পর্যন্ত!

এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের তালিকাটা দেখুন। আপনার মনেও সন্দেহ থাকবে না। মুশফিক এই তালিকায় কত নম্বরে আছেন জানেন, ৪৩! ৭ ম্যাচে ৪ ইনিংস ব্যাটিং করে রান করেছেন ৭৩। তাতে এক ইনিংসেই ৩৪। মুশফিককে যদিও চোটের সঙ্গেও লড়তে হয়েছে।

হৃদয়, যিনি কি না আগের মৌসুমে বিপিএলে ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ৪৬২ রান করেছিলেন প্রায় ১৫০ স্ট্রাইক রেটে। সেই হৃদয় এবার ৬ ইনিংসে রান করেছেন ১২১। ৪৮ রানের একটি ইনিংস আছে, সেটিও খেলেছেন এমন এক ম্যাচে, যখন তাঁর দলের লক্ষ্য ছিল ২০ ওভারে ১২৬ রান। সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তাঁর ওপরে আছেন আরও ২৯ জন।

রান পাচ্ছেন না মুশফিক
ফরচুন বরিশাল

নাজমুল হোসেন তো আছেন আরও বিপদে। জাতীয় দলের অধিনায়ক ৫ ম্যাচে রান করেছেন ৫৬। দল থেকে বাদও পড়েছিলেন এই বাঁহাতি। শূন্যতে বিপিএল শুরু করা নাজমুল এক অঙ্কের ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছেন। ৯ জানুয়ারি রংপুরের বিপক্ষে ৩০ বলে ৪১ রান করেছিলেন, সেটিকে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবেই দেখতে হচ্ছে। সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের তালিকায় তাঁকে খুঁজে পেতে হলে শুরুটা পেছন থেকেই করতে হবে। তিনি আছেন যে ৪৭ নম্বরে।

বিপিএলে জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানরা

* চোটের কারণে একটি ম্যাচেও খেলেননি সৌম্য

রিশাদ হোসেনই বা কেমন করছেন? অবশ্য ম্যাচ খেলার সুযোগই তো পাচ্ছেন কম। ৭ ম্যাচের মধ্যে সুযোগ পেয়েছেন ৪টিতে। জাতীয় দলের মূল স্পিনার বিপিএলের দলে জায়গা নিশ্চিত না, সেটিও এমন এক বিপিএলে, যেখানে বড় তারকা বলতে কেউ নেই। সুযোগ পাওয়া ম্যাচেও রিশাদ ভালো করতে পারেননি। ৪ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৪টি।

আরও পড়ুন

এই ৪ জনই বিপিএলে খেলেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। ৪ ক্রিকেটারের সেরাটা না পাওয়ার পরও বরিশাল অনেকটা প্লে-অফের পথে। ৭ ম্যাচের মধ্যে তামিম ইকবালের দল জিতেছে ৫টিতেই। কিন্তু বরিশালের প্রভাব না পড়লেও দলের মূল খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা জাতীয় দলে তো প্রভাবে ফেলবেই! সামনেই যে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় আসর।

এমন হাসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে থাকবে তো রিশাদ–নাজমুলের?
প্রথম আলো

যদিও সংস্করণ ভিন্ন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ৫০ ওভারের ক্রিকেটে এরা শুরুতে সময় নিতে পারবেন। পরে দেখেশুনে হাত খুলবেন। এমন কথা স্বাভাবিকভাবেই আসতে পারে। সেই সুযোগটা কী আসলেই পাবেন? বাংলাদেশের তো খেলতে হবে রাওয়ালপিন্ডি ও দুবাইতে।

দুবাইতে গত ৫ বছরে বড় দলগুলো তেমন খেলেনি। এই সময়ে খেলা ২৪টি ওয়ানডেতে ওভারপ্রতি রান উঠেছে ৪.৩১ করে। যদিও এই পরিসংখ্যানে চোখ না দেওয়াই ভালো। খেলা যে ভারতের বিপক্ষে। ভারত ওয়ানডেতে টি-টোয়েন্টির মতোই খেলে। আর বাংলাদেশ যদি ওয়ানডে খেলে ওয়ানডের মতো, তাহলে আর কী হবে! সম্মানজনক হার। বাংলাদেশের বাকি দুটি ম্যাচ আছে রাওয়ালপিন্ডিতে।

আরও পড়ুন

রাওয়ালপিন্ডির উইকেট তো বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দল ঘোষণার দিনে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনের কথাতেই এসেছিল। নিউজিল্যান্ডের করা ৩৩৬ রান কীভাবে হেসেখেলে তাড়া করেছিল পাকিস্তান, সেই উদাহরণ দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক। কী মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা আসলেই কী খুব সময় পাবেন? প্রতিপক্ষ কিন্তু নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তানই। মান বাঁচিয়ে হারতে চাইলে ভিন্ন বিষয়!

বিপিএলে জাতীয় দলের বোলাররা

ভালো খবর বলতে শুধু ওপেনার তানজিদ হাসান অবশ্য রান পাচ্ছেন। ৯ ম্যাচে ২ ফিফটি ও ১ সেঞ্চুরিতে ৩৩০ রান এসেছে তাঁর ব্যাটে। দলে থাকা অন্য দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও পারভেজ হোসেনের কী অবস্থা? সৌম্যর বিষয় ভিন্ন। তিনি তো চোটে পড়ে এখনো মাঠেই নামেননি। আসলে হতাশ করছেন পারভেজ। এত বড় আসরে সুযোগ পেয়েছেন বলে কোথায় না জ্বলে উঠবেন, তা নয়—উল্টো চুপসে গেছেন। ৭ ম্যাচে ১০৩ রান করে চিটাগং কিংসের একাদশ থেকেই বাদ পড়েছেন।

মাহমুদউল্লাহরও সময়টা অনেক ভালো যাচ্ছে, তা নয়। ৪ ইনিংসে রান করেছেন ৮৪, এক ম্যাচেই অপরাজিত ৫৬। মেহেদী হাসান মিরাজ ও জাকের আলীরাও বলার মতো তেমন কিছু করতে পারেননি।

ব্যাটসম্যানদের রান না করার বাতাস অবশ্য বোলারদের গায়ে খুব বেশি লাগেনি। তাসকিন আহমেদ ২০ উইকেট নিয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। নাহিদ রানা (৯), তানজিম হাসানরাও (১১) ভালোই করছেন। মোস্তাফিজও (৯) আছেন তাঁর মতোই। গড়পড়তা!

আরও পড়ুন