ভারত-সমস্যার সমাধান আসলে কোথায়
ভারত সফর মানেই সবকিছু বেশি বেশি। ভালো করলে প্রশংসা বেশি, খারাপ করলে সমালোচনাও। বাংলাদেশ দলের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত খারাপের পাল্লাটাই বেশি। ২০১৭ সালের হায়দরাবাদ টেস্ট, ২০১৯–এর লজ্জার পর ২০২৪। সর্বশেষ তিনটি ভারত সফর থেকে ইতিবাচক কিছু খুঁজতে গেলে ২০১৯ সালের সফরের একটি টি-টোয়েন্টি জয়, আর কিছু ব্যক্তিগত সাফল্য।
কাল জাতীয় দলের এক ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল বাংলাদেশ দলের এই ভারত–সমস্যা নিয়ে। কথায় কথায় তিনি ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের ওয়ানডে রেকর্ডটা মনে করিয়ে দিলেন। ২০১৪ সালের পর যে ৫০ ওভারের খেলায় ঘরের মাঠে ভারতের কাছে সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ! তবে তাঁর যুক্তি যে খুব শক্ত নয়, সেই ক্রিকেটারও তা বোঝেন। ক্রিকেটীয় শক্তিতে ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে যে রাত–দিনের পার্থক্য!
শুধু ব্যাটিং নয়, ভালো উইকেটে খেললে সেটা আমাদের বোলিংয়েও উন্নতি করতে সাহায্য করবে। ওরা বোলিংয়ে আরও বেশি বুদ্ধিদীপ্ত হবে, বৈচিত্র্য শিখবে।
লম্বা সফর শেষে দলের কোচিং স্টাফ সদস্যদের মধ্যে এখন এসব নিয়েই আলোচনা। বেশি আলোচনা দলের ব্যাটিংটা নিয়ে। ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্পের কাছে মুঠোফোনে এবারের ভারত সফর নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ক্রিকেটারদের মতো তিনিও ভালো উইকেটে খেলার অভ্যাসের ওপরই জোর দিলেন।
তাঁর যুক্তি, ‘শুধু ব্যাটিং নয়, ভালো উইকেটে খেললে সেটা আমাদের বোলিংয়েও উন্নতি করতে সাহায্য করবে। ওরা বোলিংয়ে আরও বেশি বুদ্ধিদীপ্ত হবে, বৈচিত্র্য শিখবে। ভালো উইকেটে বোলারদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেও শিখতে হবে। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের তো দেখছেনই, কতটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলে। কারণ, ওরা উইকেট কেমন আচরণ করবে, সেটা জানে এবং উইকেটের ওপর তাদের প্রচণ্ড আস্থা। ওরা এসব উইকেটে খেলেই বড় হয়েছে।’
ব্যাটিং কোচের দৃষ্টিতে এবারের ভারত সফরের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এটাই, ‘এটাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আমাদের ছেলেদের ঘরের মাঠে যতটা সম্ভব ভালো উইকেটে অনুশীলনের সুযোগ করে দিতে হবে। মাথায় এটা রাখতে হবে যে এমন চ্যালেঞ্জ আসতে পারে।’ সিরিজজুড়ে একই কথাই বলে এসেছেন নাজমুল হোসেনরাও।
সুযোগ–সুবিধা যে একেবারেই নেই, হেম্প অবশ্য তা মানতে রাজি নন। জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি ছিলেন বিসিবির হাই পারফরম্যান্স বিভাগের (এইচপি) প্রধান কোচ। এইচপি দল নিয়ে বেশির ভাগ সময় ঢাকার বাইরেই ক্যাম্প করেছেন। বাংলাদেশের প্রায় সব মাঠই তাঁর দেখা।
সে অভিজ্ঞতা থেকেই হেম্প বললেন, ‘তখন আমি মিরপুরে ছিলামই না। রাজশাহী ও বগুড়ায় সময় কাটিয়েছি। খুব ভালো উইকেট সেখানে, বল জোরে যায় আর বাউন্সিও। সিলেটের উইকেটটাও ভালো। আমি মনে করি, আমাদের সেই সুযোগ–সুবিধা আছে, যা আমাদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করতে পারে। অল্প সময়ের জন্য হলেও আমি ঢাকার বাইরে ওই সব ভেন্যুতে যেতে চাইব।’
নিজের দীর্ঘ কাউন্টি ক্যারিয়ারের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমি বড় হয়েছি সাউথ ওয়েলসে, সেখানে উইকেট স্লো অ্যান্ড লো ছিল। কিন্তু আমাকে তো খেলতে হবে। তাই আমি পুরো অফ সিজন ইনডোরে অনুশীলন করে ভালো উইকেটে ব্যাটিংয়ের সেই আত্মবিশ্বাসটা অর্জন করতাম। বোলিং মেশিনে গতিময় উইকেটের নেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাটিং করতাম। এমন অনেক উপায়ই আছে।’
কোচ হিসেবে তিনি চান ভবিষ্যতে সব ধরনের উইকেটে খেলার প্রস্তুতি নিক বাংলাদেশ, ‘সব ধরনের উইকেটের জন্যই প্রস্তুত হতে হবে। যেমন ধরুন, যার সঙ্গেই কথা বলি, সবাই বগুড়ার উইকেটের প্রশংসা করে। সেটাই নাকি দেশের সেরা উইকেট। আমি বলছি না বগুড়াকেই আমাদের কেন্দ্র বানাতে হবে। কিন্তু আপনি সেখানে প্রস্তুতি নিতে পারেন। সিলেটও হতে পারে। আপনাকে মিরপুরেও খেলতে হবে। তাই সেখানেও খেলার প্রস্তুতি নিতে হবে।’
হেম্পের শেষ কথা—যা আছে, তা–ই নিয়ে লড়তে হবে। এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই বাংলাদেশের। পরেরবার ভারতে এলে উইকেট, সুযোগ–সুবিধার একই যুক্তি ধোপে টিকবে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বাংলাদেশ দলের এখন যেভাবেই হোক সামনে এগোনো ছাড়া আর কোনো পথ নেই।