ঘরের মাঠে টেস্টের ব্যাটিং বিভীষিকা যেন পিছু ধাওয়া করল শারজাতেও। আজ আফগানিস্তানের ২৩৫ রান তাড়া করতে গিয়ে একপর্যায়ে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ১২০। নাজমুল হোসেনের দলের জয়টাই তখন সম্ভাব্য ফল বলে মনে হচ্ছিল।
কিন্তু এরপরই ব্যাটসম্যানদের অদ্ভুত ব্যাটিংয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। মাত্র ২৩ রানে শেষ ৮ উইকেট হারিয়ে ৯২ রানের হার, তাতে ম্লান হয়ে গেল মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের বোলিং–কৃতিত্ব। তিন ম্যাচের সিরিজে আফগানিস্তান এগিয়ে ১–০তে।
বিপর্যয়ের শুরু ইনিংসের ২৬তম ওভারে নাজমুলের আউটের পর। মোহাম্মদ নবীর স্পিনে বারবার পরাস্ত হচ্ছিলেন অধিনায়ক, রান বের করতে পারছিলেন না। একপর্যায়ে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন হাশমতউল্লাহ শহীদির হাতে। তিনবারের চেষ্টায় ক্যাচটি নেন আফগান অধিনায়ক। ৬৮ বলে ৪৭ রানে থেমে যান নাজমুল।
এরপর যেন ভোজবাজির মতোই ঘটে গেল সবকিছু। এক আল্লাহ গজনফরের স্পিনের সামনেই লুটিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। তাঁকে যেন পড়তেই পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা! ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ওপেনার তানজিদ হাসানের উইকেট নেওয়া গজনফর পরে নিয়েছেন বাংলাদেশের শেষ সাত উইকেটের পাঁচটি।
২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে নিজের সেরা বোলিংটাই করলেন এর আগে কখনো ৫ উইকেট না পাওয়া গজনফর। শুধু ৩৩তম ওভারেই ফিরিয়েছেন মুশফিকুর রহিম, রিশাদ হোসেন ও তাসকিন আহমেদকে। রিশাদ ও তাসকিন কে তো পরপর দুই বলে! লেগ স্পিনার রশিদ খান নিয়েছেন ২ উইকেট।
৩৫ রানে আফগানিস্তানের ৪ উইকেট তুলে নিয়ে বোলিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। বিপর্যয় সামলে ‘স্বাগতিকেরা’ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সামনে ২৩৬ রানের লক্ষ্য দিতে পেরেছে হাশমতউল্লাহ শহীদি ও মোহাম্মদ নবীর সৌজন্যে। ষষ্ঠ উইকেটে শহীদি ও নবী ১০৪ রানের জুটিতে লেখেন ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। ফিফটি করেন দুজনই।
শুরুতে টিকে থাকার চেষ্টাটাই বেশি করতে হয়েছে বলে ৪১তম ওভারে মোস্তাফিজের চতুর্থ শিকার শহীদির ৫২ রানের ইনিংস খেলতে লেগেছে ৯২ বল। কিন্তু তাসকিনের বলে তানজিদের ক্যাচ হওয়ার আগে নবীর ৮৪ আসে ৭৯ বলে, যাতে চার বাউন্ডারির সঙ্গে ছিল তিনটি বিশাল ছক্কাও।
গত সেপ্টেম্বরে এই শারজাতেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে আফগানিস্তান। আত্মবিশ্বাসের তাই কমতি ছিল না তাদের। আজ টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন অধিনায়ক শহীদি। উদ্দেশ্য ছিল শারজার ছোট মাঠের ব্যাটিং কন্ডিশনে বড় লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে বাংলাদেশের জন্য কাজ কঠিন করে তোলা। শেষ পর্যন্ত খুব বড় লক্ষ্য না দিয়েও জয়ের লক্ষ্যটা পূরণ হয়েছে তাদের।
আফগানদের পরিকল্পনা শুরুতে হোঁচট খেয়েছিল বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের কারণে। প্রথম ৪ উইকেটের ৩টিই নিয়েছেন তিনি, পরে আরও ১টি। ৪ উইকেট নিয়েছেন আরেক পেসার তাসকিন আহমেদও। ওয়ানডেতে এক ম্যাচে বাংলাদেশের দুই পেসারের ৪ উইকেট করে পাওয়া এই প্রথম।
রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে শুরুটা তাসকিনের হাত ধরে। তবে আফগানদের ভালো কিছুর প্রত্যাশা ছিল অভিষেক ওয়ানডে খেলতে নামা ইমার্জিং এশিয়া কাপের সেরা খেলোয়াড় সেদিকউল্লাহ আতালের কাছে। তিনে নামা রহমত শাহর সঙ্গে জুটিতে সে রকম কিছুর আভাসও দিচ্ছিলেন ২৩ বছর বয়সী বাঁহাতি ওপেনার। চতুর্থ ওভারের শেষ ২ বলে তাসকিনকে পরপর দুই বাউন্ডারি মারেন দারুণ দুই পুল আর হুক শটে। তাসকিনেরই পরের ওভারে সেদিকউল্লাহ তাঁর তৃতীয় বাউন্ডারিটি পেয়েছেন মিড অফ দিয়ে তুলে মেরে।
রহমত শাহর সঙ্গে আতালের দ্বিতীয় উইকেট জুটি যখন মোটামুটি জমে যাচ্ছিল, তখনই মোস্তাফিজের আঘাত। সেটিও নিজের পরপর ২ ওভারে। ইনিংসের অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে এসে মোস্তাফিজ ফেরান রহমত শাহকে। দশম ওভারে আফগানিস্তানের রানটা ৩৫-এ রেখেই সেদিকউল্লাহকে করলেন এলবিডব্লু, এরপর মুশফিকের ক্যাচ বানিয়েছেন আজমতউল্লাহ ওমরজাইকেও।
তবু শেষ হাসি আফগানিস্তানেরই। বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্যটা যদিও খুব বড় ছিল না, তবে শারজায় এর আগে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে আট ম্যাচ খেলে জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবার কোনো ভেন্যুতে হওয়া ৩০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচেও বাংলাদেশ পারেনি ব্যর্থতার সেই মরূদ্যানে ফুল ফোটাতে। উল্টো ব্যাটিং ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ‘উপহার’ দিল হতাশার এক রাত।