বাভুমা, বাবর ও তাঁদের ‘বন্ধু’রা
তাসকিন আহমেদের সৌজন্যে শুরুটা সেদিন ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। মাত্র ২ রানেই প্রথম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু পরের গল্পটা আর বাংলাদেশের থাকেনি। রাইলি রুশো আর কুইন্টন ডি কক মিলে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেন। ১৪ চার আর ১০ ছয়ে মাত্র ৮১ বলে তুলে ফেলেন ১৬৮ রান।
শুরুতে যা ছিল খুশির, শেষে গিয়ে সেটিই আক্ষেপ হয়ে ওঠে অনেক সমর্থকের কাছে—প্রথম উইকেটটা যদি অত তাড়াতাড়ি না যেত! টেম্বা বাভুমা যদি আরও কিছুক্ষণ মাঠে থেকে যেতেন!
দক্ষিণ আফ্রিকার পরের ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে। এই ম্যাচ ঘিরে রোহিত শর্মাদের কৌশল কেমন হওয়া উচিত, এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে ভারতীয় নেটিজনদের মধ্যে। তার মধ্যে এক ভারতীয়র পরামর্শ, বাভুমাকে আউট কোরো না। সে যতক্ষণ থাকবে, এক পাশ তো ঠান্ডা থাকবে!
সমর্থকদের এসব ভাবনাকে কেউ কেউ ‘পাগলাটে আবেগ’ বলে উড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা সমর্থকদের পক্ষে। তাসকিনের বলে নুরুল হাসানের কাছে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৬ বলে ২ রান করেন বাভুমা। এ নিয়ে টি–টোয়েন্টিতে সর্বশেষ সাত ইনিংসেই এক অঙ্কের ঘরে আটকেছেন টপ অর্ডার এ ব্যাটসম্যান। এই বছরে তাঁর খেলা ৯টি–টোয়েন্টিতে গড় রান ৯.৭১। ৩০ ম্যাচের টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে একমাত্র যে ফিফটি, সেটি ২০২১ সালের জুলাইয়ে। এরপর ৪০ পার করতে পেরেছেন ১ বার, ৩০ পার করতে পেরেছেন ২ বার। অস্ট্রেলিয়ায় চলমান টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই ম্যাচে সংগ্রহ মোটে ৪ রান!
ফর্মে না থাকলে বাদ পড়াটাই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু বাভুমার বাদ পড়ার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ—তিনিই যে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক।
এবার টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাভুমা একা নন। ‘নন–পারফর্মিং’ অধিনায়ক আরও অনেকেই আছেন। অস্ট্রেলিয়ার অ্যারন ফিঞ্চ, পাকিস্তানের বাবর আজম, বাংলাদেশের সাকিব আল হাসান, শ্রীলঙ্কার দাসুন শানাকা, নেদারল্যান্ডসের স্কট এডওয়ার্ডস, নিউজিল্যান্ডের কেইন উইলিয়ামসনরাও আছেন তালিকায়।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ফিঞ্চের কথাই ধরা যাক। ওয়ানডেতে ভালো করতে পারছিলেন না বলে এক দিনের ক্রিকেটের নেতৃত্ব ছেড়েছেন গত মাসে। টি–টোয়েন্টি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন সব সময়ই। এখনো আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ১৭৩ রান তাঁর।
কিন্তু ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে নেমে কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেলেছেন ফিঞ্চ। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০ রান তাড়া করতে নেমে ১১ বল খেলে আউট ১৩ রানে। পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ছিলেন ৩১ রানে।
ফিঞ্চ নিজেই এই ইনিংস ভুলে যেতে চাইবেন। ১৫৭ রান তাড়ায় ওপেনিংয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত ছিলেন। দলও জিতেছে। কিন্তু মার্কাস স্টয়নিস ১৮ বলে ৫৯ রানের ঝোড়ো ইনিংসটি না খেললে হারের দায় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হতো তাঁকে। ব্যাটিং ভুলে যাওয়া ফিঞ্চ ৩১ রান করতে খেলেন ৪২ বল, স্ট্রাইক রেট ৭৩.৮০!
ফিঞ্চের মতো দুটি ম্যাচ খেলেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমও। গত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাঁর। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা আগের তিন টি–টোয়েন্টির দুটিতেই ফিফটি করেছিলেন বলে এবারও প্রত্যাশা ছিল বিপুল। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে প্রথম বলেই অর্শদীপ সিংয়ের বলে এলবিডব্লু হন বাবর।
‘গোল্ডেন ডাক’ পাওয়ার কারণেই কি না, ‘চাপহীন’ পরের ম্যাচেও কথা বলেনি বাবরের ব্যাট। প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে, রানতাড়ায় লক্ষ্য ছিল ১৩১ রান। কিন্ত ৯ বল খেলে ৪ রানে আউট পাকিস্তান অধিনায়ক। শেষ বলে ১ রানে ম্যাচও হারে পাকিস্তান।
পাকিস্তানকে হারিয়ে গত মাসে এশিয়া কাপের শিরোপা জেতা শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপে খেলছে প্রথম পর্ব থেকে। এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলেছে দলটি; জিতেছে তিনটিতে, হেরেছে দুটি। এই পাঁচ ম্যাচের চার ইনিংসে ব্যাট করে অধিনায়ক শানাকার অবদান মোটে ৪০ রান; তিন ম্যাচে বল হাতে নিয়ে উইকেটই নেই।
প্রথম পর্বে শ্রীলঙ্কার গ্রুপ থেকে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নিয়েছে নেদারল্যান্ডস। দলটির অধিনায়ক এডওয়ার্ডসও খেলে যাচ্ছেন ‘ক্যাপ্টেনস কোটা’য়। পাঁচ ম্যাচে ডাচ অধিনায়কের অবদান ৫৮ রান ও ৪ উইকেট।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার আর নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক উইলিয়ামসনকে নিয়েও চিন্তা থাকতে পারে দলের। বিশ্বকাপ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৫ রানের ইনিংস খেলা বাটলার টুর্নামেন্টে নেমে এখনো রান পাননি। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৮ বল খেলে ১৮, পরের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২ বল খেলে ০। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক উইলিয়ামসন খেলেছেন একটাই ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচে তাঁর দল তুলেছিল ২০ ওভারে ২০০ রান, যেখানে ২৩ বল খেলে অধিনায়কের অবদান ২৩ রান।
এবার আসা যাক বাংলাদেশের গল্পে। অধিনায়কদের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ের সেরা অবস্থান নিয়ে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। অলরাউন্ডারদের শীর্ষ স্থান নিয়ে নামা সাকিব এখন পর্যন্ত দুটি ম্যাচ খেলেছেন। ব্যাট হাতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৯ বলে ৭ রান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪ বলে ১। আর বল হাতে প্রথম ম্যাচে ৩২ রানে ১ উইকেট, পরের ম্যাচে ৩৩ রানে ২ উইকেট!