২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ভানুকা রাজাপক্ষে কি রাজাপক্ষে পরিবারের কেউ

ভানুকা রাজাপক্ষে। কাল এশিয়া কাপ ফাইনালে ফিফটির পরছবি: এএফপি

কয়েক মাস ধরে শ্রীলঙ্কার ঘরে–বাইরে সবচেয়ে আলোচিত নাম ‘রাজাপক্ষে’। দেশটির রাজনীতিতে প্রায় দুই দশক ধরে আধিপত্য দেখিয়ে এসেছে রাজাপক্ষে পরিবার।

সাম্প্রতিক সময়ে গভীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। ২০১৯ সালেও যে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার, সেই দেশটিকে ২৯০ কোটি ডলার ঋণের জন্য হাত পাততে হয়েছে আইএমএফের কাছে। খাদ্য, জ্বালানিসংকট আর উচ্চ মূল্যস্ফিতিতে বিপর্যস্ত সময় পার করছে শ্রীলঙ্কার জনগণ।

এর জেরে ইতিমধ্যে ক্ষমতা থেকে বিদায় ঘটেছে রাজাপক্ষে পরিবারের। অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে আয়োজক হয়েও এ বছরের এশিয়া কাপ নিজেদের মাটিতে আয়োজন করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা।

এশিয়ান ক্রিকেটের মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে। গতকাল রোববার রাতে দুবাইয়ে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপ জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ৪৫ বলে ৭১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে শ্রীলঙ্কাকে শিরোপা জেতানোর নায়ক রাজাপক্ষে পদবিধারী এক ক্রিকেটার—ভানুকা রাজাপক্ষে।
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, এই রাজাপক্ষে কি শ্রীলঙ্কার বহুল আলোচিত–সমালোচিত রাজাপক্ষে পরিবারের কেউ কিংবা সেই পরিবারের সঙ্গে কোনোপ্রকার সম্পর্ক আছে?

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

এশিয়া কাপের শিরোপা ‘সংকটে পতিত’ শ্রীলঙ্কার জনসাধারণকে উৎসর্গ করেছেন ভানুকা। ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের এশিয়া কাপে খেলারই কথা ছিল না। বছরের শুরুতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন ভানুকা। সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডকে। চিঠিতে পরিবারকে সময় দেওয়ার কথা বললেও মূল কারণটা ক্রিকেটীয়।

গত বছর শ্রীলঙ্কা কোচ মিকি আর্থার খেলোয়াড়দের ফিটনেসে উন্নতি আনতে বেশ কিছু নতুন মানদণ্ড বেঁধে দিয়েছিলেন। ওজন কমানো ও ফিল্ডিংয়ে তৎপরতার মানদণ্ডে ব্যর্থ হন ভানুকা রাজাপক্ষে। একপর্যায়ে দল জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার সমালোচনা করায় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা দিতে হয় তাঁকে।

এ বছরের শুরুতে বোর্ডকে অবসরের চিঠি দেওয়ার পর তাঁকে নিয়ে বৈঠকে বসেন ক্রীড়ামন্ত্রী নমল রাজাপক্ষে। নমলের আরেকটি পরিচয় হলো, তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের ছেলে। নমল কথা বলেন মূলত ভানুকাকে অবসরের থেকে ফেরাতে। শেষ পর্যন্ত সফল হন। অবসরের চিঠি প্রত্যাহার করেন ভানুকা।
তবে এটুকু পড়ে যদি মনে করে থাকেন, ভানুকা রাজাপক্ষে মাহিন্দা রাজাপক্ষে পরিবারের ঘনিষ্ঠ কেউ, তাহলে ভুল হবে।

মার্চ–এপ্রিলের দিকে শ্রীলঙ্কাজুড়ে যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ বড় হতে থাকে, সরকারও শক্তভাবে দমন চালানোর চেষ্টা করে, তখন ক্রিকেটমহলের যাঁরা মুখ খুলেছিলেন, ভানুকা তাঁদেরই একজন।

এপ্রিলে ভারতে আইপিএল খেলার সময় ভানুকা টুইট করেন, ‘যদিও আমি অনেক মাইল দূরে, তবু দেশে থাকা শ্রীলঙ্কানদের যন্ত্রণা অনুভব করতে পারছি, যার মধ্য দিয়ে তারা প্রতিটি দিন পার করছে। এখন নিজেদের কথা বলতে গিয়ে মৌলিক অধিকারও খর্ব হতে দেখছে তারা। কিন্তু ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের কণ্ঠ যখন একসঙ্গে ধ্বনিত হয়, তখন সেটি উপেক্ষা করা যায় না। শ্রীলঙ্কার মানুষের কথা শুনতে হবে। নির্ভয়ে বেঁচে থাকাটা তাদের প্রাপ্য। আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করব, জনগণ আপনাদের শত্রু নয়। তাদের যেকোনো মূল্যে সুরক্ষা দিতে হবে।’