তানজিদের ভাগ্যের চাকা ঘুরছে আবারও
সময়টা নিশ্চয়ই মনে আছে?
তামিম ইকবাল নেই। হুট করেই অবসর নেওয়ার পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও চোটের কারণে তিনি শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে শুরু হতে যাওয়া এশিয়া কাপ থেকে নিজের নাম সরিয়ে নেন। তামিমের শূন্যতা পূরণে নির্বাচকেরা গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ৯১ স্ট্রাইক রেটে সর্বোচ্চ ৯৩২ রান করা মোহাম্মদ নাঈম শেখকে দলে ফিরিয়ে আনেন। তাঁর সঙ্গে ডাক পড়ে আরেক বাঁহাতি তরুণ তানজিদ হাসানের। বাঁহাতি এই ওপেনারের প্রিমিয়ার লিগটাও খারাপ যায়নি। ১১ ম্যাচে ৪৭৪ রান করেন, স্ট্রাইক রেট ৯৩।
দুজনকে দলে নেওয়ার আরেকটি যুক্তি ছিল। প্রিমিয়ার লিগের পরেই শ্রীলঙ্কার ইমার্জিং এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সফল দুই ব্যাটসম্যান ছিলেন তানজিদ ও নাঈম। নাঈম ৪ ইনিংসে ১২৫ রান করেন ৯৯ স্ট্রাইক রেটে, সমান ইনিংসে তানজিদের রান ১৭৯, স্ট্রাইক রেট ছিল ১১৬। উদীয়মানদের সেই এশিয়া কাপ থেকে বড়দের এশিয়া কাপে প্রথম সুযোগটা আসে নাঈমের। কিন্তু এশিয়া কাপের শেষের দিকে এসে নাঈমের জায়গায় সুযোগ আসে তানজিদের।
কে জানত, অদৃষ্ট তখন থেকেই তানজিদের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্রনাট্য নিয়ে অপেক্ষা করছিল! বড় কোনো ইনিংস না খেলেও ছোট ছোট ‘ক্যামিও’ তানজিদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেয়। পাল্লেকেলে, কলম্বোর পর মিরপুরের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তানজিদের জায়গা হয়ে যায় ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলে। বড় কোনো সাফল্য ছাড়াই তানজিদ ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সব কটি ম্যাচ খেলেন, সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন ভারতের বিপক্ষে।
বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে দল থেকে তানজিদকে বাদ দেওয়া হয়। সে সফরে ওপেনার হিসেবে সৌম্য সরকারকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সৌম্য শতক করে আস্থার প্রতিদানও দেন। মনে হচ্ছিল, অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও সাদা বলের ক্রিকেটে লিটন দাসের নিয়মিত সঙ্গী হবেন সৌম্য। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজেই ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে সৌম্যর জায়গায় সুযোগ পেয়ে যান তানজিদ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সে ম্যাচে ৮১ বলে ৮৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ে অবদান রাখেন তানজিদ।
সৌম্য এখনো চোট থেকে পুরোপুরি সুস্থ হননি। এদিকে আরও একটি বিশ্বকাপের ‘অডিশন’ দিচ্ছেন তানজিদ। আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য জাতীয় দল খুঁজছে বিকল্প ওপেনার। নাম আছে দুজনের—তানজিদ ও পারভেজ হোসেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে দলে আছে দুজনেই। গতকাল প্রথম ম্যাচে দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়ে গেল তানজিদের। ছোট্ট রান তাড়ায় নেমে ব্যক্তিগত ৩ ও ৪ রানের সময় জীবন পেয়েও তানজিদ ৪৭ বলে ৬৭ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ শেষ করে এসেছেন।
সেই মাঠে—জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম—যেখানে দেশের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচে তানজিদের ব্যাট থেকে এসেছে ৮৪ রান। একই মাঠে সর্বশেষ বিপিএলে সেরা সময়টা কাটিয়েছেন তানজিদ। টুর্নামেন্টে চতুর্থ সর্বোচ্চ ৩৮৪ রান করেন তানজিদ, যার ২৪০-ই এসেছে এই মাঠে। সেটাও মাত্র ৪ ইনিংসে। ওহ হ্যাঁ, জহুর আহমেদে তানজিদের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি কী করে ভুলবেন! খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে গত ২০ ফেব্রুয়ারি তানজিদের ব্যাট থেকে এসেছে ৬৫ বলে ১১৬ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। এবার বিশ্বকাপে জায়গা করে নেওয়ার পরীক্ষাটাও পছন্দের মাঠে দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তানজিদ।
তানজিদ অবশ্য কাল ম্যাচ শেষে টি-স্পোর্টসকে বলেছেন ভিন্ন কথা, ‘সে রকম নয়। যেকোনো মাঠে ভালো খেললেই সেটা বিশেষ হয়ে যায়। তাই আমি সেভাবে চিন্তা করি না। চিন্তা করি, যে মাঠেই খেলি না কেন, যেন দলের জন্য ভালো কিছু এনে দিতে পারি।’ তবে তানজিদ এড়িয়ে গেছেন প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনার বিষয়টি, ‘সামনে বিশ্বকাপ না কী আছে, তা নিয়ে চিন্তা করি না। আমি শুধু আমার স্বাভাবিক ব্যাটিংটা করার চিন্তা করেছি। আমি আমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলেছি। আমি সাধারণত যে জায়গায় বল পেলে শট খেলি, ঠিক তা–ই করেছি।’
তানজিদ নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেললেও ভাগ্যও যে তাঁর হয়ে লড়ছে সেটাও পরিষ্কার।