তাসকিনের ৭ উইকেট ছেলের, বাবার জন্য গোঁফ
দর্শকহৃদয় জয় করা বড়ই কঠিন কর্ম। যদি তারকা হয়ে থাকেন, এই আপনি তাঁদের হাততালি পাওয়া নায়ক তো পরের মুহূর্তেই তা নন। আপনি উপহাসের পাত্র।
স্বীকৃত টি–টোয়েন্টিতে মাত্র তৃতীয় এবং বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ৭ উইকেট পেয়ে ওয়ান টাইম চায়ের গ্লাস হাতে মাঠ হয়ে তাসকিন আহমেদ আসছিলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলনকক্ষের দিকে।
ঢাকা ক্যাপিটালকে ৭ উইকেটে হারিয়ে একাদশ বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীর প্রথম জয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন। গ্যালারির কাছে আসতেই ‘তাসকিন, তাসকিন’ চিৎকার।
কেউ কেউ গ্রিলের ফাঁক দিয়ে মোবাইল এগিয়ে দিয়ে সেলফির দাবি জানালেন। বিনয়ী হাসিতে তাসকিন তা ফিরিয়ে দেন ‘মোবাইল হাতে নেওয়া নিষেধ’ বলে। প্রত্যাখ্যাত এক সেলফি–প্রত্যাশীর কাছে নায়ক, এরপরই হয়ে গেলেন উপহাসের পাত্র, ‘পরের ম্যাচে মাইর খাইবেন…৪ ওভারে ৬০ রান।’
উপহাসের জবাব তাসকিন দিলেন অট্টহাসিতে। আজ সন্ধ্যাটাই তাঁর জন্য আসলে এমন ঝলমলে ছিল যে সবকিছুতেই আনন্দ খুঁজে নেওয়া যায়। মিনিট দশেকের সংবাদ সম্মেলনটার কথাই ধরুন। সদা হাস্যোজ্জ্বল তাসকিন আরও বেশি প্রাণোচ্ছল, আরও বেশি স্বতঃস্ফূর্ত।
হাসতে হাসতেই ৭ উইকেটের কীর্তি উৎসর্গ করলেন বড় সন্তান তাসফিনকে। তাসফিন যখন আরও ছোট ছিল, টেলিভিশনে খেলোয়াড়–দর্শকদের উৎসব দেখলেই ভাবত বাবা কিছু করেছে। ড্রয়িংরুমে টিভির সামনে তার সেই হাত–পা ছুঁড়ে আনন্দ প্রকাশ ছিল মোহাম্মদপুরের পরিবারটির নির্মল বিনোদনের উৎস।
এখন তো তাসফিনের বয়স ৬ বছর। ক্রিকেটারের ছেলে এই বয়সেই জানে হার–জিত, ভালো খেলা–খারাপ খেলার পার্থক্য। বাবা ভালো খেললে তাসফিন খুশি হয়, খারাপ খেললে তাসফিনের মন খারাপ। কাজেই ৭ উইকেট অর্জনের উপলক্ষটা এমনিতে যেতে দিলেন না তাসকিন, ‘আমি যখন ভালো করি বা উইকেট পাই, আমার ছেলে, আমার বাবা অনেক খুশি হয়। তাদের সমর্থনটা আমার জন্য অনুপ্রেরণা। যেদিন আমি ভালো বোলিং করতে পারি না, সেদিন তাসফিন অনেক মন খারাপ করে। আজ আমি নিশ্চিত, ও অনেক খুশি। তো এটা তাসফিনের জন্যই।’
ছেলের জন্য ৭ উইকেট, তাহলে বাবার জন্য কী? তাসকিনের সাম্প্রতিক হেয়ার স্টাইলটা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন। আগের সেই ছোট ছাঁটে ছাঁটা চুল নয়। ৮০–৯০–এর দশকের সিনেমার নায়কদের মতো বড় চুল, পেছনে ঘাড় পর্যন্ত লম্বা। নাকের নিচে রাখা গোঁফও বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে ইদানীং। এমন দিনে যা হয়, চুল–গোঁফও হয়ে যায় কৌতূহলের বিষয়বস্তু। সেই কৌতূহল মেটাতে গিয়ে তাসকিন গোঁফ–রহস্যের অবগুণ্ঠন খুলে দিলেন, ‘বাবার ছোটকালের একটা ছবি দেখলাম মোচ–টোচ রাখা, তাই ভাবলাম এবার আমিও একটু রেখে দেখি কিছুদিন।’
ক্রিকেটারদের চুল–দাড়ি, প্রিয়জনদের আচার–আচরণের সঙ্গে অনেক সময়ই কুসংস্কার জড়িয়ে যায়। যদিও তাসকিনের দাবি, তাঁর মধ্যে এসব কিছু নেই। হতেই পারে, সবাই তো একরকম নয়। তবে কাকতাল বলে যে কিছু আছে, সেটা বোধ হয় তিনিও মানবেন।
আজ ম্যাচের আগের একটা ঘটনা শুনুন, সংবাদ সম্মেলনে যেটা হাসতে হাসতে তাসকিনই বলেছেন সবাইকে, ‘আজকে একটা মজার ব্যাপার ঘটেছে। আমাদের টিমের ম্যাসিওর আনোয়ার বলছিল, ভাইয়া তুমি আজকে চার উইকেট পাবা। আমি তখন তাকে বলেছি, চাচ্ছিস যেহেতু আল্লাহর কাছে বেশিই চা, ৮ উইকেটও তো হইতে পারে। দেখেন, ৭ উইকেট পেয়ে গেছি আজকেই!’
সপ্তম উইকেট পাওয়ার পর হাতে আরেকটি বল থাকায় সত্যি সত্যি অষ্টম উইকেট হয়ে যেতে পারত তাসকিনের। কিন্তু সেই লোভে পা দেননি তিনি। উইকেটশিকারি বল করতে গিয়ে যদি আবার হাফভলি হয়ে যায়! ছক্কা খাওয়ার ঝুঁকি থাকত তখন। ঢাকার রানটা হয়ে যেত ১৮০। ১৮.১ বলে জেতা ম্যাচটা একটু কঠিন হতে পারত তখন রাজশাহীর জন্য। তার চেয়ে ৭–ই ভালো। বৃহস্পতির তুঙ্গে থাকা সন্ধ্যাটা সপ্তম সুর তুলেই শেষ করলেন তাসকিন।