‘দ্বিতীয় আইপিএল’ নিয়ে আসছে সৌদি আরব

সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিসিসিআইয়ের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছেএক্স

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে নিজদের অবস্থান শক্ত করতে ফুটবল, গলফ, বক্সিং, রেসিংসহ আরও অনেক খেলায় অঢেল অর্থ ঢালতে শুরু করেছে সৌদি আরব। এবার দেশটির সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ‘পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড’ (পিআইএফ) ভারতে ‘দ্বিতীয় আইপিএল’ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আইপিএলকে ছাড়িয়ে এটাই হবে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেইল অনলাইন এ সংক্রান্ত এক বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মেইল অনলাইন জানিয়েছে, প্রতিবছরের শরৎকালে (সেপ্টেম্বর–অক্টোবর) নতুন লিগ আয়োজন করতে চায় সৌদি আরব। এটি হতে পারে টি-টেন সংস্করণের। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিসিআই) অনেক দিন ধরে আরেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রতিযোগিতা চালুর বিষয়টি বিবেচনা করে আসছে। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলে গেলে তা আইসিসি তথা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসতে পারে।

আইসিসি তাদের সর্বশেষ তিনটি ছেলেদের টুর্নামেন্ট (২০২১ ও ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ) অক্টোবর-নভেম্বরে আয়োজন করেছে। আগামী বছর থেকে ওই সময়ে নতুন লিগ আয়োজন করা হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সময় আরও সংকুচিত হয়ে আসবে।

এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ফুটবলে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের আদলে চ্যাম্পিয়নস লিগ টি-টোয়েন্টি আয়োজন করা হয়েছিল। এটি বিসিসিআই, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) ও ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকার (সিএসএ) যৌথ মালিকানাধীন ছিল। কিন্তু মাঠে দর্শক টানতে ব্যর্থ হওয়া ও পৃষ্ঠপোষকতায় অস্থিতিশীলতার কারণে আসরটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

আরও পড়ুন

ভারতের অর্থবিষয়ক সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোল সম্প্রতি জানিয়েছে, আগামী বছর থেকে একটি টি-টেন ক্রিকেট লিগ চালু করার কথা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে বিসিসিআই। প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত আছেন—এমন একজন জানিয়েছেন, বিসিসিআই সচিব জয় শাহ প্রস্তাবিত লিগটি নিয়ে অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছেন। সম্ভাব্য পৃষ্ঠপোষকেরা প্রস্তাবিত লিগ নিয়ে ইতিবাচক সাড়াও দিয়েছেন। আগামী বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে লিগ আয়োজনের জন্য সম্ভাব্য সময়ও নাকি খুঁজে পাওয়া গেছে।

এই সংবাদ দেখার পরই মেইল অনলাইনের ক্রীড়া বিভাগ অংশীদারের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। খুব দ্রুতই তারা জানতে পারে, ভারতের নতুন টি-টেন লিগের অংশীদার আর কেউ নয়, সৌদির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড। প্রস্তাবিত লিগটি নিয়ে অংশীদারদের সঙ্গে গত মাসে বিশ্বকাপ চলাকালেই আলোচনা এগিয়ে নিয়েছে বিসিসিআই।

গত এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম সিডনি মর্নিং হেরাল্ডও জানিয়েছিল, সৌদি সরকারের প্রতিনিধিদল নতুন লিগ আয়োজনের ব্যাপারে আইপিএল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে সে সময় বিসিসিআইয়ের পরামর্শ নিয়ে আরব্য উপসাগরীয় অঞ্চলে সৌদি নিজেরাই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট লিগ আয়োজন করতে চেয়েছিল। যেটা তারা গলফের ক্ষেত্রেও করেছে।

সম্প্রচার মানের দিক থেকে এই মুহূর্তে বিশ্বের দ্বিতীয় লাভজনক ক্রীড়া লিগ আইপিএল
বিসিসিআই

পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডেরই অর্থায়নে পেশাদার গলফের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট পিজিএ ট্যুরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে এলআইভি গলফ ট্যুর চালু করেছে সৌদি আরব, যা গলফ বিশ্বকেই দুই ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটের ক্ষেত্রে সেটি হচ্ছে না। বিসিসিআইয়ের সঙ্গে সৌদির প্রতিনিধিদলের আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ায় তারা একত্রে কাজ করতে রাজি হয়েছে।

সম্প্রচার মানের দিক থেকে এই মুহূর্তে বিশ্বের দ্বিতীয় লাভজনক ক্রীড়া লিগ আইপিএল। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ফুটবল লিগের (এনএফএল) পরেই আইপিএলের অবস্থান। ভারতের প্রস্তাবিত নতুন লিগে সৌদি বিনিয়োগ করলে একসময় তা এনএফএলকেও ছাড়িয়ে যতে পারে। কারণ, এর সঙ্গে দর্শকের সম্পৃক্ততা আছে।

আরও পড়ুন

ওয়াল্ডোমিটার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান জনসংখ্যা ৩৪ কোটি আর ভারতের ১৪৩ কোটি। বিনিয়োগ বাড়লে জনসংখ্যা বিবেচনায় স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পেরে ওঠার কথা নয়।

সৌদির অর্থায়নে ভারতের নতুন লিগটা যে টি-টেন সংস্করণে হতে চলেছে, সেটা একরকম নিশ্চিত। বিসিসিআই যে বিষয়গুলোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, এর একটি হলো খেলোয়াড়দের বয়সসীমা। নতুন লিগ যাতে আইপিএলে কোনো প্রভাব না ফেলে, সে জন্য শুধু অনূর্ধ্ব-২৩ ক্রিকেটারদের খেলার অনুমতি দিতে চায় বিসিসিআই। এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ তারকাও উঠে আসবে বলে বিশ্বাস তাদের।

সৌদির অর্থায়নে আইপিএলের আদলে আরেকটি লিগ আনতে পারে ভারত
এক্স

২০২২ সাল থেকে ১০ দল নিয়ে ৭৪ ম্যাচের আইপিএল হচ্ছে। ২০২৭ সাল নাগাদ ম্যাচের সংখ্যা বেড়ে ৯৪ হওয়ার কথা। আইপিএলে ম্যাচের সংখ্যা বাড়া মানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের সংখ্যা কমে আসা। এর সঙ্গে নতুন টি-টেন লিগ যদি আলোর মুখ দেখে, তাহলে আইসিসির দুশ্চিন্তা আরও বাড়বে।

এমনিতেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ মানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটারদের মিলনমেলা। নতুন লিগে সৌদির অর্থায়নের কারণে আরও বেশি ক্রিকেটার তাতে আকৃষ্ট হয়ে পড়বেন। শীর্ষ তারকারা সেই লিগে নাম লেখালে হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকাসংকটে ভুগতে শুরু করবে, নয়তো বড় তারকাদের পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু তাঁদের অপেক্ষায় থাকলে বৈশ্বিক সূচি মেলাতেই আইসিসিকে হিমশিম খেতে হবে।  

আরও পড়ুন

আইপিএলের গঠনতন্ত্রে বর্তমান ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বিশ্বের যেকোনো দেশে আরও দল গড়া এবং নতুন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই ১০ ফ্র্যাঞ্চাইজির কেউ যদি আরেকটি দল না গড়ে, তাহলে অন্য যেকোনো শহরের নামে দল কেনা যাবে। মেইল অনলাইন ধারণা করছে, ভারতের টি-টেন লিগে নতুন অনেকেই দল কিনতে চাইবে। এমনকি দলের সংখ্যা আইপিএলের চেয়েও বেশি হতে পারে। সেটা হলে ভারতে বড় পরিসরের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে প্রভাব ফেলবে। এরই মধ্যে হুমকিতে পড়া ওয়ানডে সিরিজ হয়তো আর হবেই না।

২০২১ সালে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মালিকানা কিনে নেয় সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড
এএফপি

বিসিসিআই ও সৌদির এই পরিকল্পনা ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) জন্যও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। এর আগে বিসিসিআই জানিয়েছিল, বিশ্বের নামীদামি তারকাদের আকৃষ্ট করতে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ইংল্যান্ডের দ্য হানড্রেডে দল কিনতে চায়। আর সৌদির পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব ইয়র্কশায়ারেও বিনিয়োগ ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়। সংস্থাটি ২০২১ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মালিকানা কিনে নিয়েছে।

নতুন লিগ আয়োজনের ব্যাপারে জানতে মেইল অনলাইন বিসিসিআই ও পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তবে তাদের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।