ভারতের বিপক্ষে সেমিফাইনালে বিধ্বস্ত হয়ে এশিয়ান গেমসে সোনার আশা বাদ দিতে হয়েছে গতকালই। আজ ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান, যাদের বিপক্ষে এর আগে ১৬ ম্যাচ খেলে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি জয়ের রেকর্ড ছিল বাংলাদেশ মেয়েদের ক্রিকেট দলের। যাদের বিপক্ষে এর আগের দুটি এশিয়ান গেমসে ফাইনালে হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই পাকিস্তানকেই উড়িয়ে দিয়েছে নিগার সুলতানার দল। হাংজুতে পাকিস্তানকে ৬৪ রানে আটকে দেওয়ার পর বাংলাদেশ জিতেছে ৫ উইকেটে। এবারের এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের প্রথম পদক এটিই।
এবার বাংলাদেশ সরাসরি খেলেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। হংকংয়ের সঙ্গে সে ম্যাচ ভেসে যাওয়ার পর বাছাইয়ে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ যায় সেমিফাইনালে। সেখানে ভারতের কাছে হতাশাজনক হারের পর পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াইটা সহজ হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ স্পিনাররা সেটিকেই বানিয়ে ফেলেছেন একপেশে। তাতেই ২০১৮ সালের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম জয়টি এসেছে।
টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়া বাংলাদেশ পাকিস্তানকে চেপে ধরে শুরু থেকেই। মারুফা আক্তার ও নাহিদা আক্তারের করা প্রথম ২ ওভারের মধ্যেই ফেরেন দুই পাকিস্তানি ওপেনার। শাওয়াল জুলফিকার বোল্ড হন মারুফার লেংথ বল মিস করে, সিদ্রা আমিন ডিপ মিড–উইকেটে মারুফার হাতেই ক্যাচ দেন নাহিদাকে সুইপ করতে গিয়ে।
প্রথম ২ ওভারে ২ উইকেট হারানোর পর পাকিস্তান হয়ে পড়ে খোলসবন্দী। মারুফা ও সানজিদার বলে রানই তুলতে পারেননি তারা, ৩ থেকে ৫ ওভারের মধ্যে ওঠে মাত্র ৩ রান। সে চাপেই আসে পরের উইকেট—সানজিদাকে স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন ৮ বলে কোনো রান করতে না পারা মুনীবা আলী। পাওয়ার প্লেতে ১২ রান তুলতে ৩ উইকেট হারানো পাকিস্তানের ইনিংস গতি পায়নি মাঝের ওভারগুলোতেও। নবম ওভারে সাদাফ শামাসকে ফিরিয়ে সে চাপ আরও বাড়ান রাবেয়া খান। তাঁকে সুইপ করতে গিয়েছিলেন শামাস।
পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক নিদা দার ও নাটালিয়া পারভেজ যোগ করেন ১৮ রান। ২৮ বলের সে জুটিই পাকিস্তান ইনিংসে হয়ে থেকেছে সর্বোচ্চ। নাটালিয়াকে ফিরিয়ে সে জুটি ভাঙেন সানজিদা। ৩৬ রানে ৫ উইকেট হারায় পাকিস্তান। ইনিংসের ১৫তম ওভারে এসে জোড়া আঘাত করেন স্বর্ণা আক্তার—নিদা হন বোল্ড, উম্ম-এ-হানি ক্যাচ দেন অধিনায়ক নিগারের হাতে। পরের ওভারে ডিয়ানা বেগ হন বোল্ড।
৪৯ রানেই ৮ উইকেট হারানোর পরও পাকিস্তান ৬৪ রান পর্যন্ত যায় আলিয়া রিয়াজের ১৮ বলে ১৭ রানের ইনিংসে। শেষ ওভারে তাঁকে থামান স্বর্ণা। এ লেগ স্পিনার বোলিং শেষ করেন ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে। অবশ্য ৩ ওভারে মাত্র ২ রান দেওয়ার পরও পেসার মারুফা বোলিংয়ে আসেননি আর, এ ম্যাচে স্পিনারদের পারফরম্যান্স ছিল এমন দাপুটে।
রান তাড়ায় শামীমা সুলতানা ও সাথী রাণী শুরুটা করেন বেশ ইতিবাচক। ১৩ রান করে সাদিয়া ইকবালের বলে ক্যাচ দিয়ে শামীমা ফিরলেও প্রথম ৫ ওভারে ওঠে ২৭ রান। অবশ্য পাওয়ার প্লের ঠিক পরের ওভারে সাথীকেও হারায় বাংলাদেশ।
এরপর মিডল অর্ডারে একটা হোঁচটই খায় বাংলাদেশ। নাশরা সান্ধুর পরপর ২ ওভারে আউট হন সোবহানা মোস্তারি ও নিগার সুলতানা। বোলিংয়ের মতো ব্যাটিংয়েও এবার শেষ দিকে দায়িত্ব নেন স্বর্ণা। রিতু মনির পর সুলতানা খাতুনকে নিয়ে নিশ্চিত করেন জয়, নিজে অপরাজিত থাকেন ৩৩ বলে ১৪ রান করে। এ ম্যাচে উইকেটের মূল্যই সবচেয়ে বেশি, স্বর্ণার ৪২.৪২ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে প্রমাণ হয়েছে সেটিরই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ৬৪/৯ (আলিয়া ১৭, নিদা ১৪; স্বর্ণা ৩/১৬, সানজিদা ২/১১, মারুফা ১/২)
বাংলাদেশ: ১৮.৫ ওভারে ৬৫/৫ (স্বর্ণা ১৪, শামীমা ১৩, সাথী ১৩; নাশরা ৩/১০, নিদা ১/৬)
ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী