ভারত সফরের আগে ‘ভারতীয়’ বলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার লড়াই
নতুন বলে শরীফুল ইসলামের বোলিং মানেই ফুল লেংথ আর সুইং। ইনিংসের শুরুতে তাঁর কাছে দলের চাওয়া থাকে এটাই। সে জন্য অনুশীলনেও সে দক্ষতাটা ঝালিয়ে করে নিতে হয়। পাকিস্তান সফর থেকে ফেরার পর দুই দিনের বিশ্রাম নিয়ে আজ অনুশীলনে ফিরে শরীফুল সেটাই করছিলেন। তবে এদিন একটু ভিন্নতা ছিল। শরীফুলের হাতে ছিল এসজি বল। এখনো সাদা বলের ক্রিকেটেই আটকে থাকা রিশাদ হোসেনের মতো দু–একজনকে বাদ দিলে সবার হাতেই তা–ই। সাদা বলের বোলার পরিচয় ঝেড়ে ফেলে টেস্টেও সাফল্য পাওয়া হাসান মাহমুদের হাতেও।
বলটা কেন লেখার শুরুতেই আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল? কারণ, বাংলাদেশের টেস্ট বোলারদের এখন দ্রুত এসজি বলে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। ভারত নিজেদের দেশে টেস্ট ক্রিকেটে হাতে বানানো এই বল ব্যবহার করে থাকে। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে বোলারদের তাই এটির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা খুব জরুরি।
বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরে খেলা হয়েছে যে কোকাবুরা বলে, তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভারতের এসজি। কোকাবুরার চেয়ে খাড়া সিম, কিছুটা ভারীও। বলের উজ্জ্বলতা ধরে রাখাটাও একটু কঠিন। যে কারণে ফিল্ডারদের বলটাতে বাড়তি যত্ন করতে হয়। এসজির আরেকটা অদ্ভুত চরিত্র আছে। বলটি ইনিংসের একেবারে শুরুতে সুইং না করলেও ৫-৬ ওভার পর সুইং শুরু হয়। এসজি বলের দ্রুত নরম হয়ে যাওয়ার দুর্নামও আছে।
এর আগে এসজি বলে খেললেও বাংলাদেশ দলের জন্য এবারের অভিজ্ঞতাটা অনেকটা নতুনই। কারণ, গত ২৫ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পাকিস্তান সফরের প্রস্তুতি ক্যাম্পে কোকাবুরা বল ব্যবহার করেছেন বোলাররা। পাকিস্তানে খেলেও এসেছেন এই বলে। যে কারণে এসজি বল হাতে নিয়ে একটু নতুন–নতুনই লেগেছে তাঁদের কাছে। অনুশীলন শেষে টেস্ট দলের পেসার খালেদ আহমেদ নিজের গাড়িতে ওঠার সময় মজা করে বলছিলেন, ‘বল তো ভারী ভারী মনে হচ্ছিল। অনেক দিন পর এসজি ধরলাম।’ শরীফুল বললেন, ‘এসজি বলে শেষ কবে খেলেছি মনে নেই। কোকাবুরার সঙ্গে পার্থক্য হচ্ছে সিমে। এসজির সিম বেশ খাড়া।’
বিসিবির ভিডিও বার্তায়ও ভারত সফরের প্রস্তুতির কথা বলতে গিয়ে বলের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন শরীফুল, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে, আরও ভালো হবে আশা করি। বল যেহেতু একটা ফ্যাক্ট, আমরা খেলেছি কোকাবুরা বলে। এখন খেলব এসজিতে, এটার সঙ্গে আমরা যত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারব, ততই আমাদের জন্য ভালো। সুতরাং আমরা বলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে আমরা হয়তোবা ভালো একটা ফল পাব ইনশা আল্লাহ।’
প্রতিপক্ষ ভারত নিয়ে তাঁর কথা, ‘ভারত তুলনামূলক টেস্টে পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে থাকা দল। ওরা বড় একটা দল। আমার মনে হয় বড় দলের সঙ্গে যদি আমরা ভালো করি, তাহলে বিশ্ব আমাদের দেখবে। ভারত সিরিজটা ভালো করলে আমাদের ভালো লাগবে। আমরা চেষ্টা করব, যেভাবে অনুশীলন করছি, সেভাবে ফল যেন আসে। আমরা চেষ্টা করব, আমরা যেন জয় দিয়ে শুরু করতে পারি। কারণ, আমরা একটা ভালো সিরিজ শেষ করেছি, আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আছে...সেভাবে চেষ্টা করব।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানেই মানিয়ে নেওয়ার পরীক্ষা। ভারতের কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার আগেই তাই এসজি বলে মানিয়ে নিতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের। এ বছরের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আবার খেলা হবে ডিউক বলে। ক্রিকেটারদের সে জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুত হতে হবে। কাল অনুশীলনে টাইগার্সের বোলিং কোচ তারেক আজিজ পেসারদের সঙ্গে এসজি বল নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করেছেন। তিনিই মনে করিয়ে দিলেন চার মাসে তিন রকমের বলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পরীক্ষার কথা, ‘পাকিস্তানে খেললাম কোকাবুরায়। এখন এসজি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলা হবে ডিউকে। এখানে কে কত দ্রুত মানিয়ে নেয়, সেটার ওপর সাফল্য নির্ভর করবে।’
পাকিস্তান সফরের আগে যথেষ্ট সময় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ভারত সফরের আগে তা পাচ্ছে না। ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের বিমান ধরার আগে তিন-চার দিনের অনুশীলন যথেষ্ট কি না, সময়ই তা বলে দেবে।