কোহলি-রোহিতকে নিয়ে ক্ষোভ সাবেকদের, ‘তারকা সংস্কৃতি’ বন্ধের দাবি
পার্থেই প্রথম টেস্টে একটা সেঞ্চুরি আছে, তাও পুরো সিরিজে ৯ ইনিংস মিলিয়ে রান মাত্র ১৯১। এই হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে বিরাট কোহলির ব্যাটিং পারফরম্যান্স। ও দিকে পারিবারিক ব্যস্ততার কারণে সিরিজের প্রথম টেস্টের আগে দলের সঙ্গেই যোগ দেননি অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
দলে তারকা সংস্কৃতি (স্টার কালচার) আছে বলেই পারফরম্যান্স এবং পারিবারিক কারণে ছাড় পেয়ে থাকেন ভারতের ক্রিকেটাররা—এমনটাই মনে করছেন দেশটির সাবেক ক্রিকেটাররা। ভারতের স্বার্থে তারকা সংস্কৃতি বন্ধ করা দরকার বলে বিসিসিআইকে পরামর্শও দিয়েছেন সুনীল গাভাস্কার, ইরফান পাঠানের মতো সাবেকরা।
গতকাল শেষ হওয়া বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ৩-১ ব্যবধানে হেরেছে ভারত। হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়, গাভাস্কারের মতে সামনের কয়েক দিন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, ‘সামনের ৮-১০ দিন ভারতের ক্রিকেট কোন অবস্থায় আছে সেটা দেখার সময়। বিশেষ করে তারকা সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি পূর্ণ দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসাগত জরুরি বিষয় না হলে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে পূর্ণ সময় দলের জন্য নিবেদিত থাকতে হবে। কেউ যদি পূর্ণ দায়বদ্ধ না থাকে, তাহলে দলে নেওয়া উচিত নয়।’
গাভাস্কারের মন্তব্যটি কোহলি-রোহিতের দিকেই ইঙ্গিত করে। নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত সিডনিতে শেষ টেস্ট খেলেননি বাজে ফর্মের কারণে, আগের তিন টেস্টে মাত্র ৩১ রান করতে পেরেছিলেন তিনি। তার আগে পার্থে প্রথম টেস্ট খেলেননি ভারত থেকে দেরিতে পৌঁছানোয়। ওই সময় দ্বিতীয় সন্তান জন্মের পর স্ত্রীর পাশে থাকতে কয়েক দিন ছুটি কাটিয়েছিলেন তিনি। একই ভাবে গত বছর নিজের দ্বিতীয় সন্তান জন্মের সময় স্ত্রীর পাশে থাকতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টের পুরো সিরিজ মিস করেছিলেন কোহলি।
গাভাস্কারের মতে জাতীয় দায়িত্বের চেয়ে পারিবারিক দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিলে দলে না থাকাই ভালো, ‘আমাদের এমন খেলোয়াড় দরকার নেই, যারা কিছুটা এখানে কিছুটা ওখানে। কাউকে প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করার সময় এসেছে। দলের সাম্প্রতিক ফল হতাশাজনক। আমাদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে ওঠা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা পারিনি।’
আরেক সাবেক ক্রিকেটার ইরফান পাঠানও দলের প্রতি খেলোয়াড়দের পূর্ণ নিবেদনের আহবান জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বিসিসিআইকে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে বলে মনে করেন এই অলরাউন্ডার, ‘ক্রিকেট বোর্ডকে কোনো খেলোয়াড়ের ভক্ত হওয়া বন্ধ করতে হবে। খেলোয়াড়দের বলতে হবে, ভারতের ক্রিকেট সবার ওপরে। হয় ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি পূর্ণ দায়বদ্ধতা থাকবে, নয়তো অন্য কিছুতে অগ্রাধিকার দেবে। দুই দিকই সমানতালে চলতে পারে না। ভারতের ক্রিকেটকে অগ্রাধিকার দিলে তবেই দলের জন্য বিবেচনা করা হবে।’
শুধু ছুটির ক্ষেত্রেই নয়, পারফরম্যান্সের দিক থেকেও তারকা সংস্কৃতি বন্ধ করা দরকার মনে করেন পাঠান। ভারতের কোচেরা সব ক্রিকেটারের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা দরকার বলে মত দিলেও কোহলি-রোহিতের মতো তারকাদের খুব একটা খেলতে দেখা যায় না। এ নিয়ে বেশ ক্ষোভই প্রকাশ করেছেন পাঠান, ‘আমাদের সুপারস্টার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। আমাদের দরকার টিম কালচার। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের নিজের উন্নতি দরকার, দলের উন্নতি দরকার। এই সিরিজের আগেও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা খেলেনি। বিরাট কোহলি শেষ কবে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছে জানেন? এক দশকেরও বেশি হয়ে গেছে।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে কোহলির গড় ১৫ এবং গত পাঁচ বছরে ৩০ গড়েও রান নেই উল্লেখ করে পাঠান আরও বলেন, ‘ভারত ক্রিকেট দলে কি এমন সিনিয়র খেলোয়াড়ের জায়গা আছে? এর বদলে একজন তরুণকে সুযোগ দেওয়া যেত। একজন তরুণকে বলুন, নিজেকে গড়ে তোল। সেও ২৫-৩০ গড়ে রান করে দেবে। এখানে দল বড়, কোনো ব্যক্তি নয়। আমরা যখন কোহলির কথা বলি, সে ভারতের জন্য কী কী করেছে বলি। অনেক পারফরম্যান্সই করেছে। কিন্তু আপনি এখন একই ভুল বারবার করে আউট হচ্ছেন।’