‘পাকিস্তানের পেসারদের চেয়ে দ্রুতগতির ছিলেন’ নাহিদ-শরীফুলরা

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ভালো করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। অ্যাকশনে নাহিদ রানা। ছবিটি গতকাল তোলাএএফপি

পাকিস্তান পেসারদের তীর্থভূমি। সরফরাজ নওয়াজ থেকে ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতার হয়ে মোহাম্মদ আসিফ, মোহাম্মদ আমিরদের প্রজন্ম শেষে এখন শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহদের সময় চলছে। উইকেট যেমনই হোক, গতিময় বোলিং থেকে সুইং, সিম মুভমেন্ট—এসব অস্ত্রে কখনোই ভাটা পড়েনি পাকিস্তানি পেসারদের। তবে সালমান বাট কথাটা শুনে বলতে পারেন, বটে! তবে যে রাওয়ালপিন্ডিতে ভাটার টানে সবকিছু শুকিয়ে চৌচির হতে দেখলাম!

আরও পড়ুন

কথাটা মজা করে বলা। যদিও বাট মোটেও মজা করেননি। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গতকাল রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানের হারের বিশ্লেষণে দেশটির সাবেক এই অধিনায়ক স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘পিচ কোনো ইস্যু না। সমস্যাটা বোলিংয়ের মানে। বোলিং কোচ বলেছেন, উইকেট তাদের প্রত্যাশানুযায়ী আচরণ করেনি। বোলাররাও বলেছেন, পিচ ভালো ছিল না। এটা কীভাবে যৌক্তিক হয়? বিশেষ করে পাকিস্তান যখন দুই সেশনের মধ্যে অলআউট হয়েছে।’

দলকে প্রয়োজনের সময় উইকেট এনে দিয়েছেন হাসান
এএফপি

বাটের কথাগুলো বোঝা প্রয়োজন। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ১০ উইকেটে হারের ম্যাচে পাকিস্তান দলে কোনো বিশেষজ্ঞ স্পিনার ছিল না। চার বিশেষজ্ঞ পেসার নিয়ে নেমেছে স্বাগতিকেরা। কারণ? অস্ট্রেলিয়ান কিউরেটর টনি হেমিং রাওয়ালপিন্ডির পিচে ঘাস রাখায় টিম ম্যানেজমেন্টের মনে হয়েছিল, এখান থেকে পেস ও বাউন্স পাওয়া যাবে। তাই চার পেসার নিয়ে সাজানো হয় একাদশ।

কিন্তু তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ যখন প্রথম ইনিংসে (৫ উইকেটে ৩১৬) শক্ত ভিতে দাঁড়ানোর পর ভুল স্বীকার করেন পাকিস্তানের সহকারী কোচ ও সাবেক পেস অলরাউন্ডার আজহার মেহমুদ, ‘যেমন চেয়েছিলাম, পিচ তেমন আচরণ করছে না। এ নিয়ে আমাদের কিছুই করার নেই। তবে আমরা পিচ পড়তে ভুল করিনি।’

আরও পড়ুন

মেহমুদের কথার সূত্র ধরে বাটের কথা প্রসঙ্গে পাল্টা প্রশ্ন তোলা যায়। পিচ প্রত্যাশামতো আচরণ করেনি বলেই বাংলাদেশকে প্রথম ইনিংসে অলআউট করতে ১৬৭.৩ ওভার লেগেছে পাকিস্তানের বোলারদের। পাকিস্তানের পেসাররা এই পথে ৯টি উইকেট নিলেও আসল কাজটা পারেননি। দ্রুত অলআউট করে পাকিস্তানকে লিড এনে দিতে পারেননি। এর পাশাপাশি আগা সালমান, সাইম আইয়ু্ব ও সৌদ শাকিলদের স্পিন বোলিং করাও বুঝিয়ে দিয়েছিল, পেসাররা সময়মতো উইকেট এনে দিতে না পারায় বাধ্য হয়েই ‘পার্ট টাইম’ স্পিনারদের দ্বারস্থ হয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ।

এবার প্রশ্নটি তোলা যাক—যে উইকেটে পাকিস্তানের পেসাররা ভুগেছেন এবং সেটাও তাদের ঘরের মাঠ আর শাহিন আফ্রিদি ও নাসিম শাহরা পাকিস্তানি পেস ঐতিহ্যেরও পতাকাবাহক, সেই একই পিচে বাংলাদেশের বোলাররা তাহলে পাকিস্তানকে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে কীভাবে মাত্র ৫৫.৫ ওভারে অলআউট করল?

পাকিস্তানের পেসারদের গতি ও সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
এএফপি

টেস্টে চতুর্থ দিনে শেষ সেশনে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ দিনে দ্বিতীয় সেশনে অলআউট হয় পাকিস্তান। উইকেট তখন একটু ভেঙেছে এবং বাংলাদেশের স্পিনাররা বেশ বাঁকও পেয়েছেন। মোট ৭ উইকেট নেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। আর এর মধ্যেই পেসাররা নিয়েছেন ৩ উইকেট। শুরুর চাপটাও ধরে রেখেছিলেন তাঁরাই। শুধু তাই নয়, টেল এন্ডার নাসিম শাহকে নিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ান পাল্টা লড়াই চালানোর সময় ধারাভাষ্যকারেরা নাহিদ রানাকে খুঁজেছেন। তাঁকে কেন বোলিংয়ে আনা হচ্ছে না, এ নিয়ে অনুযোগও ঝরেছে আমির সোহেল ও নিক কম্পটনের মুখে। কারণ, নাহিদ রানা জোরে বোলিং করেন। একজন ধারাভাষ্যকার তো তখন বলেই ফেলেন, দুই দলের পেসারদের মিলিয়েই নাহিদ রানা সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার।

আরও পড়ুন

পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক বাট এই কথাকেই একটু ঘুরিয়ে বলেছেন। তাতে পাকিস্তানের পেসারদের মেজাজ ধরে রাখা কঠিন হতে পারে, ‘চার পেসার খেলানো, ইনিংস ঘোষণা করা, লাইন ও লেংথ—সবকিছুই ভুল হয়েছে। আমার মনে হয়, এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বোলারদের গড় গতি আমাদের চেয়ে বেশি ছিল। ওদের দেখে আমাদের চেয়ে বেশি ফিট লেগেছে। আমাদের সিনিয়রদের চেয়ে জুনিয়র পেসাররা ভালো করেছে।’

টেস্টে গত দুই বছরে বেশ ভালো করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা
এএফপি

গত দুই বছরে টেস্টে পেস বোলিংয়ে গড় ও স্ট্রাইক রেটে বেশ ভালো করছেন বাংলাদেশের পেসাররা। এ সময় ৯ টেস্টে ৫৭ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা। এ সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ (১৫), নিউজিল্যান্ড (১২) ও পাকিস্তান (১১) বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ম্যাচ খেললেও বোলিং স্ট্রাইক রেটে নাজমুল হোসেনের দলই এগিয়ে। বাংলাদেশের পেসারদের স্ট্রাইক রেট ৫১.১। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫৬.১, নিউজিল্যান্ডের ৫৭.৮ ও পাকিস্তানের ৬৬.৯। এ তালিকায় সবার পেছনে পাকিস্তান। এ সময় পেসারদের বোলিং গড়েও বাংলাদেশের (৩২.৩৮) পেছনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৩৫.৭৪) ও পাকিস্তান (৪০.১৪)।