ডানহাতি-বাঁহাতি ব্যাটসম্যানে রিশাদের ‘সমস্যা হয় না’
প্রথম কোনো লেগ স্পিনার হিসেবে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেললেন রিশাদ হোসেন। বিশ্বমঞ্চে আবির্ভাবেই ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে হলেন ম্যাচসেরা।
ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে আজ রিশাদের ঘূর্ণি-জাদুতেই শ্রীলঙ্কার মিডল অর্ডারে ধস নামে। ১৪ ওভারে ৩ উইকেটে ১০০ রান তুলে ফেলা লঙ্কানরা শেষ ৬ ওভারে তুলতে পারে আর মাত্র ২৪ রান, হারায় আরও ৬ উইকেট। ১৫তম ওভারে নিজের শেষ স্পেল করতে আসা রিশাদের বোলিংই আসলে ম্যাচের মোমেন্টাম বাংলাদেশের দিকে নিয়ে এসেছে। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একাধিকবার চাপে পড়লেও শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটের স্বস্তির জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে বাংলাদেশ।
দলের জয়ে বল হাতে দারুণ অবদান রাখতে পারা ও ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নেওয়া স্বাভাবিকভাবই রিশাদের আনন্দে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের শুরুতে নিজের সেই তৃপ্তির কথাই জানালেন দীর্ঘদেহী লেগ স্পিনার, ‘প্রথম ম্যাচেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হতে পেরেছি। সবকিছু মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।’
এবারের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটা হয়েছে ডালাসেই। সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রে ও প্রতিবেশী কানাডার সেই ম্যাচটিও ছিল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের মতোই (স্থানীয় সময়) দিবারাত্রির। যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা ম্যাচে রানবন্যা দেখা গেলেও আজ তেমনটা হয়নি। এ ম্যাচের পিচ ও কন্ডিশন নিয়ে রিশাদ বললেন, ‘আমি শুধু নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি। প্রথম কয়েকটা বল করার পরই বুঝেছি এই পিচে কী হতে পারে। ওই হিসেবেই চেষ্টা করেছি।’
বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে প্রথমবার খেলতে নেমেছেন। তার ওপর যখন নিজের শেষ স্পেল করতে এসেছেন, তখন ক্রিজে থিতু হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যান চারিত আসালাঙ্কা ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা হাত খুলে খেলার অপেক্ষায়। সে সময় কিছুটা স্নায়ুচাপে ভুগেছেন কি না—এমন প্রশ্নে রিশাদের উত্তর, ‘আমি কখনো ভয় নিয়ে বোলিং করি না। চেষ্টা ছিল যখনই বোলিংয়ে আসব, তখনই যেন দলকে উইকেট এনে দিতে পারি, ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারি।’
সাধারণত ক্রিজে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকলে লেগ স্পিনারদের খুব একটা বোলিংয়ে আসতে দেখা যায় না। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন লঙ্কানদের জমে যাওয়া জুটিটা ভাঙতে রিশাদের ওপরই আস্থা রাখেন।
আস্থার প্রতিদান দিয়ে রিশাদ ১৫তম ওভারের প্রথম বলেই উইকেট এনে দেন। ফেরান বাঁহাতি আসালাঙ্কাকে। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বোলিং করতেও তিনি যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, সে কথাটাও বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন, ‘যখন বোলিংয়ে আসি, যখন ডানহাতি-বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নিয়ে ভাবার সুযোগ থাকে না। দল যা চায়, আমি সেটাই করার চেষ্টা করি। ডানহাতি-বাঁহাতি ব্যাটসম্যানে আমার কোনো সমস্যা হয় না।’
রিশাদের ৩ উইকেটের মধ্যে শেষটি ছিল আরেক থিতু ব্যাটসম্যান ধনাঞ্জয়ার। আসালাঙ্কা ও ধনাঞ্জয়ার উইকেট দুটির মাঝে ‘স্যান্ডউইচ’ হয়ে আছে লঙ্কান অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার উইকেটটি।
হাসারাঙ্গাকে আউট করে রিশাদ হ্যাটট্রিকেরও সম্ভাবনা জাগান। তার চেয়েও বড় বিষয়, তিনি উইকেটটি যেভাবে নিয়েছেন, তা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে অনেক দিন লেগে থাকার মতো। একদম জাত লেগ স্পিনারের মতোই বল ফেলেন লেগ স্টাম্পের বাইরে, তা কয়েক ডিগ্রি বাঁক খাওয়ার পর হাসারাঙ্গার ব্যাটে আলতো ছোঁয়া দিয়ে জমা পড়ে স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্য সরকারের হাতে।
৩টি শিকারের মধ্যে সেই আউটকে যে রিশাদ সবার ওপরে রাখবেন, তা অনুমিতই ছিল, ‘স্লিপে (সৌম্য) যে ক্যাচ নিয়েছে, সেটা বেশি আনন্দ দিয়েছে।’
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাটে সহজ জয়ের দিকেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে তাঁদের গড়া ৩৮ বলে ৬৩ রানের জুটি ভাঙতেই বিপদ নেমে আসে। ৯১/৩ থেকে মুহূর্তেই ১১৩/৮-এর দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ।
দ্রুত ৫ উইকেট পতনের একটি ছিলেন রিশাদ নিজেই। অযথা বড় শট খেলতে গিয়ে নুয়ান তুষারার বলে হন বোল্ড। ব্যাটিংয়ে দায়িত্বশীলতা দেখাতে না পারা নিয়ে রিশাদ বলেন, ‘যেটা চলে গেছে, গেছে। সেটা নিয়ে আর ভাবতে চাই না। জিতেছি, তাতেই আলহামদুলিল্লাহ। কখনোই মনে হয়নি (ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যাবে)। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবার বিশ্বাস ছিল। এ রকম হতেই পারে। ইনশা আল্লাহ, পরের ম্যাচে আরও ভালো কিছু হবে।’
বাংলাদেশের এই ম্যাচ আর পরের ম্যাচের মাঝে খুব বেশি সময় নেই। আগামী সোমবার নিউইয়র্কে রিশাদদের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা। লঙ্কাবধের পর প্রোটিয়াবধের ছক কি এখন থেকেই কষবেন? রিশাদের উত্তর, ‘সে ধরনের কোনো পরিকল্পনা নেই। আজকের দিনটা উপভোগ করতে চাই।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কয়েক বছর ধরে নিয়মিতই জেতে বাংলাদেশ। তাতে অবশ্য জয়ের মাহাত্ম্য একটুও কমে যায়নি। লঙ্কানরা তো এখনো বড় দলগুলোর একটি। সাধারণত বড় দলকে হারানোর পর ড্রেসিংরুমে ফিরেই আনন্দের আতিশয্যে ভাসতে দেখা যায় বাংলাদেশ দলকে। তবে রিশাদ জানালেন, আজ উচ্ছ্বাসের মাত্রা অতটা ছিল না, ‘আমরা সবাই স্বাভাবিক আছি। কারণ, এবার আমাদের লক্ষ্য আরও বড়।’
তা কী সেই লক্ষ্য? রিশাদের উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ, সামনে দেখতে পারবেন।’