নিশাঙ্কা-আসালাঙ্কা জুটিতে শ্রীলঙ্কার সিরিজে ফেরা
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৮৬/৭; শ্রীলঙ্কা: ৪৭.১ ওভারে ২৮৭/৭; ফল: শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেটে জয়ী।
শিশিরে বল আজও হাত পিছলে যাওয়ার কথা। বল গ্রিপ করা নিশ্চয়ই সহজ হয়নি তাসকিন–শরীফুলদের। ওদিকে পাতুম নিশাঙ্কা ফিরেছেন স্বরূপে। তাঁর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকলেন চারিত আসালাঙ্কা। মধ্য মার্চেও রাতের কুয়াশা আর বিধ্বংসী এক লঙ্কান জুটিতে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম যেন বাংলাদেশের জন্য ঘরের মাঠ নয়!
বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ২৮৬ রান। সেটা তাড়া করতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার ইনিংস এগিয়ে গেল উত্থান–পতনের মধ্য দিয়ে। নিশাঙ্কা–আসালাঙ্কা জুটির কারণে একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, সহজেই জিতে যাবে তারা। শেষ পর্যন্ত সহজে জিতেছেও। তবে মাঝে ওই জুটির বিচ্ছিন্ন হওয়াই জন্ম দিয়েছিল খানিক টুইস্টের।
বিশেষ করে লঙ্কান ইনিংসের ৩৭ থেকে ৪২তম ওভার পর্যন্ত মাঠ–গ্যালারিতে ভর করেছিল বাড়তি উত্তেজনা। নিশাঙ্কা–আসালঙ্কার ১৮৫ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি ভাঙার পর মনে হচ্ছিল, ম্যাচ কিছুটা হেলে গেছে বাংলাদেশের দিকে। মনে হচ্ছিল, ৫০ ওভারের ক্রিকেট তার সব উত্তেজনা নিয়েই হাজির হতে চলেছে। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত হয়নি। ৪৭.১ ওভারেই ম্যাচ জিতে যায় শ্রীলঙ্কা। সিরিজে ১–১ সমতা ফেরায় ১৮ মার্চের শেষ ওয়ানডেটা এখন রূপ নিল ‘ফাইনালে’।
বাংলাদেশের ২৮৬ রানে সবচেয়ে বড় অবদান তাওহিদ হৃদয়ের। শুরুতে কিছুটা জড়সড় ব্যাটিং করলেও শেষ পর্যন্ত ১০২ বলে করা তাঁর ৯৬ রানেই শ্রীলঙ্কার সামনে ২৮৬ রানের লক্ষ্য দিতে পারে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের কথাই–বা না বলা কেন! ১ ছক্কা ও ১১ বাউন্ডারিতে ৬৬ বলে ৬৮ রান করা সৌম্য তৃতীয় উইকেটে ৫৫ রানের জুটি হয়েছে হৃদয়ের সঙ্গে। পরে মুশফিক (২৮ বলে ২৫ রান) এবং অবিচ্ছিন্ন অষ্টম উইকেটে তাসকিন আহমেদের ১০ বলে ১৮ রান হৃদয়কে সাহায্য করেছে ইনিংস শেষ করে আসতে। হৃদয় সেটা পারলেও আরও একবার শতকের সুবাস নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। গত বছর অভিষেক ওয়ানডেতে ৯২ রান করা এই তরুণ ব্যাটসম্যান আজ ৫ ছক্কা ও ৩ চারে অপরাজিত থেকেছেন ৯৬ রানে।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই লিটন দাসের ‘ডাকের’ পর আগের ম্যাচে অপরাজিত ১২২ রান করা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন ফিরেছেন ৪০ রান করে। ০ ও ১০ রানে জীবন পেয়েছেন তিনি। অবশ্য বাংলাদেশের ইনিংসজুড়েই লঙ্কানদের মিস ফিল্ডিং ছিল দেখার মতো। হৃদয় জীবন পেয়েছেন ৬ রানে, মুশফিক ২৭ রানে। এ ছাড়া গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়েও শ্রীলঙ্কানদের হাত পিছলেছে অনেকবার। তারপরও হৃদয়ের ওই ইনিংসটা না হলে বাংলাদেশকে থেমে যেতে হতো আরও আগেই। তাঁর অপরাজিত ৯৬ রানের সুবাদে হওয়া ২৮৬ রানের স্কোরটা দেখতে বেশ ভালো হলেও চট্টগ্রামের উইকেটে যে আজ তা জেতার জন্য যথেষ্ট ছিল না, সেটা বোঝা গেছে লঙ্কানদের ব্যাটিং দেখেই।
অবশ্য শুরুতে ধাক্কা খেয়েছে তারাও। শ্রীলঙ্কার ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আভিস্কা ফার্নান্ডোকে ফেরান শরীফুল ইসলাম। ৪৩ রানের মধ্যে সফরকারীর হারায় আরও দুই ব্যাটসম্যানকে।
শ্রীলঙ্কারও অবশ্য তখনই হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা নয়। কেনই–বা ছাড়বে! ওপেনার নিশাঙ্কা তখনো উইকেটে। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৬ রানে আউট হয়ে গেলেও এই এক ম্যাচেই নিশ্চয়ই বাংলাদেশে নিয়ে আসা ওয়ানডের ফর্মটা হারিয়ে যায়নি। গত ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ২১০ আর ১১৮ রানের দুটি ইনিংসের স্বাদ এখনো ব্যাটে লেগে থাকার কথা। চট্টগ্রামের উইকেট তো সেই ফর্মকে জীবন্ত করে তোলারই মোক্ষম মঞ্চ!
নিশাঙ্কার ব্যাট লঙ্কানদের হতাশ করেনি। ৩ ছক্কা আর ১৩ বাউন্ডারিতে ১১৩ বলে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেছেন, চতুর্থ উইকেটে আসালাঙ্কার সঙ্গে গড়েছেন ১৮৫ রানের বড় জুটি। পরপর দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে আজ বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা হারিয়ে যায় ওখানেই। তবে ম্যাচের উত্তেজনা জিইয়ে রাখতেই কিনা শ্রীলঙ্কার জয়ের পথে একটু ঝড় এল।
৩৭তম ওভারে মিরাজের বলে স্লগ সুইপ খেলে ডিপ মিডউইকেটে লিটন দাসের ক্যাচ হয়ে ফেরেন নিশাঙ্কা। পরের ওভারেই তাসকিন আহমেদের বলে কট বিহাইন্ড আসালাঙ্কাও। ৯১ রানে থাকা আসালাঙ্কাকে শতকবঞ্চিত করার আনন্দের মধ্যেই তাসকিন উদ্যাপন করলেন আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে নিজের শততম উইকেট পাওয়ার উপলক্ষ।
৩৮তম ওভারে দলকে ২৩৫ রানে রেখে আসালাঙ্কা ফিরে যাওয়ার পর ১২ ওভারে ৫১ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। কিন্তু ক্রিকেটটা তো শুধু রান করার খেলা নয়, উইকেট নেওয়ারও! ৪২তম ওভারে তানজিম সাকিবের বলে জানিত লিয়ানাগের এলবিডব্লু কিছুটা বাঁচিয়ে রাখে বাংলাদেশের আশা। তবে ওই পর্যন্তই। দুনিত ভেল্লালাগে আর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা বাকি পথটা কোনো রকম টেনশন ছাড়াই পার করে দিলেন।