বিপিএলে কোন দলের অনুসারী কত
‘ঘিরে লিয়েছে মামুর ব্যাটারা-পচা শামুকে কেটেছে পা! ভয়ংকর হয়ে ফিরবে জয়ের লড়াই, ইনশা আল্লাহ।’—রংপুর রাইডার্সের ফেসবুক পোস্ট এটি। এবারের বিপিএলে রংপুর হারতে অভ্যস্ত নয়। জিতেছে টানা ৮ ম্যাচ। সেই ধারা ভাঙে গত পরশু দুর্বার রাজশাহীর কাছে হারের মধ্য দিয়ে। তাতেই ফেসবুক পোস্টে এমন কড়া প্রতিক্রিয়া রংপুরের।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তির্যক, মজার ও বুদ্ধিদীপ্ত পোস্ট যে শুধু রংপুর রাইডার্স করছে তা নয়, মাঠের মতো এখানকার লড়াইয়েও আছে অন্য সব দলের অংশগ্রহণ। আর মাঠের লড়াইয়ের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ময়দানেও আছে শক্তির পার্থক্য। কারও অনুসারী অনেক বেশি, কারও–বা তুলনামূলক কম।
অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে অনুসারীর সংখ্যায় রংপুর রাইডার্সের ধারেকাছেই কেউ নেই। ২৪ তারিখ সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেসবুকে রংপুরের অনুসারী ২৪ লাখ। এত বেশি ব্যবধানে এগিয়ে রংপুর প্রথম যে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফ্র্যাঞ্চাইজির অনুসারী এর অর্ধেকও নেই।
রংপুরের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অনুসারী আছে বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশালের। তামিম ইকবালের দলের অনুসারী ৭ লাখ ২২ হাজার। এর পরের নামটা সিলেট সিক্সার্স, তাদের অনুসারী ৬ লাখ ৭ হাজার। খুলনা টাইগার্স, চিটাগং কিংস ও ঢাকা ক্যাপিটালসের অনুসারী সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি। ঢাকার ৩ লাখ ৯৪ হাজার, খুলনার ৩ লাখ ৫২ আর চিটাগংয়ের ৩ লাখ ৩০। ৭ দলের মধ্যে ফেসবুকে সবচেয়ে কম অনুসারী দুর্বার রাজশাহীর—১ লাখ ২৪ হাজার।
সব দলের মধ্যে রংপুর রাইডার্সের ফেসবুক অনুসারী অনেক বেশি হওয়ার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, রংপুরের পেজটি সবচেয়ে পুরোনো। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে খেলা পেজটি প্রতিটি আসরের আগে থেকেই বেশ সক্রিয় থাকে। রংপুরের পারফরম্যান্সের ভূমিকাও আছে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি। এই দলে টানা একাধিক মৌসুমে খেলেছেন সাকিব আল হাসান, খেলেছেন ক্রিস গেইলও। এ ছাড়া এবারের বিপিএলের আগে অ্যান্টিগায় অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সুপার লিগে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল দলটি।
২০০৯ সাল থেকে ফেসবুকে সক্রিয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির অনুসারী ১ কোটি ৪০ লাখ। একই বছর চালু হওয়া রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ফেসবুক পেজের অনুসারী ১ কোটি।
রংপুর রাইডার্স পেজের বয়স প্রায় ১০ বছরের তুলনায় অন্য দলগুলোর নতুনই। যেমন চিটাগং কিংস, ঢাকা ক্যাপিটালস ও দুর্বার রাজশাহীর ফেসবুক পেজ খোলাই হয়েছে ২০২৪ সালে। সেটাও শুরুর দিকে নয়। এই দলগুলোর মধ্যে সবার আগে ফেসবুক পেজ খুলেছে রাজশাহী, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪। চিটাগং ও ঢাকা আরও পরে। বাকি তিন দলের মধ্যে সবার আগে ফেসবুক পেজ খুলেছে খুলনা টাইগার্স, ২০১৯ সালের নভেম্বরে। ফরচুন বরিশাল ২০২০ আর সিলেট স্ট্রাইকার্স ২০২২ সালে।
এই সব কটি ফ্র্যাঞ্চাইজি যে টুর্নামেন্টে খেলে, সেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ–বিপিএলেরও একটি ফেসবুক পেজ আছে। বর্তমানে সক্রিয় থাকা পেজটি খোলা হয়েছিল ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপিএলের ভেরিফায়েড পেজে অনুসারী ৮ লাখ ৪ হাজার, যা রংপুর রাইডার্সেরই তিন ভাগের এক ভাগ!
২০১২ সালে বিপিএল শুরুর ৪ বছর আগে শুরু হয়েছে ভারতের আইপিএল। ২০০৯ সাল থেকে ফেসবুকে সক্রিয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির অনুসারী ১ কোটি ৪০ লাখ। একই বছর চালু হওয়া রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ফেসবুক পেজের অনুসারী ১ কোটি। অন্য দলগুলোরও কাছাকাছি। এ তো গেল ফেসবুকের কথা। ইনস্টাগ্রামে মুম্বাইয়ের অনুসারী তো ফেসবুকের চেয়েও বেশি—দেড় কোটি। কিন্তু বিপিএলের রংপুরের রাইডার্সের কত জানেন? ১৩ হাজার ৭০০। বাকি দলের অবস্থা নিজেই বুঝে নিন।
ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের তুলনায় বাংলাদেশে সাত ভাগের এক ভাগ। সে অনুসারে অনুসারী কমই থাকার কথা। আয়োজনে, তারকার দ্যুতি আর টাকার খেলায় আইপিএলের সঙ্গে অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের তুলনাও চলে না। কিন্তু তুলনা করার মতো যে মানদণ্ড—দীর্ঘদিন একই ফ্র্যাঞ্চাইজির একই নামে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ—সেখানেও বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ছে বিপিএল।
যেসব ফ্র্যাঞ্চাইজি এই বছর খেলছে, তাদের কয়টি আগামী বছর থাকবে, সেটাই তো নিশ্চিত নয়; বরং সব কটি যে থাকবে না, সেটাই নিশ্চিত। তাহলে এত অনুসারী আসবে কোথা থাকে?