সেই ‘ভুঁড়িওয়ালা’ সরফরাজই শোয়েবের সুর পাল্টে দিলেন
সেটি ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১০৫ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। সরাসরি অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের দিকে আঙুল তুলেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার, ‘সরফরাজ আহমেদ টস করতে আসার সময় তার ভুঁড়ি দেখা গেছে। মুখও ফুলে গেছে। এত আনফিট অধিনায়ক আমি এর আগে দেখিনি। নড়াচড়াও সেভাবে করতে পারে না, উইকেটকিপিংয়েও সমস্যা হয়।’
শুধু কি তা–ই, সে বিশ্বকাপে সরফরাজকে ‘ঘিলুহীন’ও বলেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম ডেলিভারির রেকর্ড গড়া শোয়েব। ২০২৩ সালে এসে কী দেখা গেল? করাচি টেস্টের পঞ্চম দিনে সেঞ্চুরি করলেন সরফরাজ, তাতে পাকিস্তান প্রায় জিতেই যেত, যদি শেষ দিকে উইকেট না পড়ত। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান যে ড্র করতে পেরেছে, সেটিও সরফরাজের কারণেই।
অথচ সরফরাজের সেই কঠিন সময় মনে করে দেখুন—অধিনায়কত্ব হারালেন, ছিটকে পড়লেন দলের বাইরে, পানি টানলেন সতীর্থদের জন্য, কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কিংবা কোনো খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে যোগ্যতাবলে ফিরলেন জাতীয় দলে, তারপর সেঞ্চুরি করে মুছে ফেললেন সেসব দিন। এ–ই না হলে প্রত্যাবর্তন!
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের জন্য ৩১৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল পাকিস্তান। ৭৭ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর উইকেটে আসেন সরফরাজ। প্রায় ৫ ঘণ্টা ব্যাট করে ১৭৬ বলে ১১৮ রানের ইনিংসটি দিয়ে সরফরাজ পাকিস্তানকে হারের চোখরাঙানি থেকে জয়ের সুবাস পাইয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দলে জায়গা হারানোর পর মনে রাখার মতো প্রত্যাবর্তনই হলো তাঁর।
দুই টেস্টের এই সিরিজে ১ সেঞ্চুরি, ৩ ফিফটিসহ সর্বোচ্চ রান করা (৩৩৫) সরফরাজই সিরিজসেরা। মোহাম্মদ রিজওয়ান বাজে ফর্মের জন্য বাদ পড়ায় এবারের সিরিজে কপাল খুলেছিল তাঁর। সুযোগটা কী দারুণভাবেই না কাজে লাগালেন!
সরফরাজ গতকালের এই সেঞ্চুরিকে তাঁর ‘ক্যারিয়ারের সেরা’ বলে মনে করেন। ওদিকে শোয়েব আখতারের কথার সুরও পাল্টে গেছে সরফরাজকে নিয়ে। কাল টুইট করেন, ‘ক্রিকেটে আমার দেখা অন্যতম শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন। চরম মানসিক শক্তির পরিচয় দেওয়ায় সব প্রশংসা সরফরাজের। চার বছর পর ফিরে এমন কিছু করা মোটেই সহজ নয়।’
পাকিস্তানের প্রধান নির্বাচক শহীদ আফ্রিদিও সরফরাজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। কালই প্রশ্ন উঠেছে, এমন প্রত্যাবর্তনের পর সরফরাজ তিন সংস্করণের দলে থিতু হতে পারবেন কি না?
আফ্রিদি সংবাদ সম্মেলনে এর জবাবও দিয়েছেন, ‘সাইফি খুব ভালোভাবেই ফিরেছে এবং দারুণ খেলেছে। কিন্তু মোহাম্মদ রিজওয়ান প্রস্তুত আছে এবং ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সে আমাদের প্রধান উইকেটকিপার। রিজওয়ান চোট পেলে কিংবা ক্লান্ত থাকলে বিকল্প ভাবা যাবে। কারও টেস্ট পারফরম্যান্স দিয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে বিচার না করাই ভালো।’