যে ৫ ভুলে কোহলি–রোহিতদের এমন পরিণতি
২০১১ সালের পর আরও ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও আর কোনো বিশ্বকাপের দেখা পায়নি ভারত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গতকাল ১০ উইকেটে উড়ে যাওয়ার পর ভারতের সেই অপেক্ষা আরও বাড়ল। কিন্তু কোথায় ভুল হলো? ফেবারিট হিসেবেই তো বিশ্বকাপ মিশনে গিয়েছিলেন রোহিত-কোহলিরা। বিশ্বকাপে ভারতের করা পাঁচটি ভুল বের করার চেষ্টা করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। সেগুলোই এখানে তুলে ধরা হলো—
লেগ স্পিনার ছাড়াই...
যুজবেন্দ্র চাহাল সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ভারতের অন্যতম সেরা স্পিনার। তবে ভারতীয় দল বিশ্বকাপে চাহালের চেয়ে অভিজ্ঞ রবিচন্দ্রন অশ্বিনকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। চাহালকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে এলেও অশ্বিনের ওপর ভরসা রেখেছিলেন রোহিত শর্মা। এর আগে গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও চাহালের ওপর ভরসা রাখতে পারেনি ভারত। সেই ব্যর্থতার পর অনেকেই ভেবেছিল, ভারত হয়তো ভুল থেকে শিক্ষা নেবে। যদিও তা হয়নি।
চাহালকে না খেলানো যে ভুল ছিল, তা তো আদিল রশিদ ও শাদাব খানের পারফরম্যান্সেই প্রমাণিত। ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানকে ফাইনালে তোলায় দারুণ ভূমিকা রেখেছেন এই দুজন। অথচ ভারতীয় দলে চাহালের অন্তর্ভুক্তি লেগ স্পিনারের অভাব দূর করার সঙ্গে ম্যাচ জেতানোর মতোও কার্যকর হতে পারত।
হয়তো ব্যাটিংয়েও অবদান রাখতে পারেন বলে অশ্বিনের ওপর বেশি নির্ভর করেছে ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচজেতানো শট এবং বাংলাদেশে বিপক্ষে শেষের দিকে চার ও ছক্কা মারা তো সে কথাই বলে। তবে এটিও তো খারাপ বার্তা যে ভারতকে জিততে একজন স্পিনিং অলরাউন্ডারের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে! যা অন্যদের ব্যর্থতাকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
পাওয়ারপ্লেতে যত গন্ডগোল
গত বছর বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের হারের পর একটি কথা বেশি শোনা যাচ্ছিল, ‘ভয়।’ যে রোহিত শর্মা শুরুতেই ভারতকে উড়ন্ত শুরু এনে দিতেন, তিনিও এখন নড়বড়ে। কোনো এক অজানা আতঙ্কে যেন নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। যে কারণে বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচেই সেভাবে পাওয়ারপ্লেকে কাজে লাগাতে পারেনি ভারত।
প্রথম ৬ ওভারে ভারতের সর্বোচ্চ রান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১ উইকেট ৪৬ রান। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেটি ছিল ৩ উইকেটে ৩১ রান, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১ উইকেটে ৩২ রান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২ উইকেটে ৩২ রান, বাংলাদেশের বিপক্ষে ১ উইকেটে ৩৭ রান এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ৬ ওভারে গতকাল ভারতের রান ছিল ১ উইকেটে ৩৮ রান।
শুরুর এই মন্থরগতির ব্যাটিং সুপার টুয়েলভে ভারতকে বিপদে না ফেললেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে আর শেষ রক্ষা হয়নি। হারেই শেষ হয়েছে ভারতের বিশ্বকাপ অভিযান।
কার্তিক-পন্তকে নিয়ে দ্বিধা
বলা হয়, টি-টোয়েন্টি তারুণ্যের খেলা। যদিও ভারত পুরো বিশ্বকাপটা অভিজ্ঞ দিনেশ কার্তিক নাকি তরুণ ঋষভ পন্ত—কাকে খেলাবে, সেটা নিয়ে দ্বিধাতেই কাটিয়ে দিল। ফিনিশার হিসেবে কার্তিক নিজেকে প্রমাণ করলেও ৩৭ বছর বয়সী কোনো খেলোয়াড়ের ওপর ভরসা রাখা ঝুঁকিপূর্ণই ছিল, যা বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে বেশ ভালোভাবেই চোখে পড়েছে।
তবে এর চেয়েও যা বড় হয়ে ওঠে, তা হলো দলের সিদ্ধান্তহীন মনোভাব। টেস্ট ক্রিকেটে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে নিজেকে প্রমাণ করছেন পন্ত। তাঁর সামর্থ্যও কারও অজানা নয়। তবে পন্তের সুযোগ এসেছে কার্তিকের ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর, যা ভারতীয় দলের জন্যও ইতিবাচক ফল বয়ে আনেনি।
লোকেশ রাহুলকে আঁকড়ে ধরা
ছয় ম্যাচে দুই ফিফটিকে প্রথম ধাক্কায় ভালো বলেই মনে হতে পারে। তবে আরেকটু গভীরভাবে তাকালে লোকেশ রাহুলের পারফরম্যান্সের দুর্বলতা বেশ ভালোভাবেই ধরা পড়ে। বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ফিফটি করলেও বাকি চার ম্যাচে দুই অঙ্কই স্পর্শ করতে পারেননি এই ওপেনার।
তুলনামূলক সমশক্তির তিন দল পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন এই ওপেনার। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯ এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন ৫ রান। তার ওপর দলের নিঃশর্ত আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি এই ওপেনার। আর ভারতীয় দলও ওপেনিং নিয়ে টুর্নামেন্টে ‘আউট অব দ্য বক্স’ ভাবতে পারেনি, যার খেসারত তাদের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েই দিতে হয়েছে।
গতিময় ফাস্ট বোলারের অভাব
যশপ্রীত বুমরা না থাকায় ভারতীয় বোলিং লাইনআপে একটা ঘাটতি শুরু থেকেই ছিলই। যদিও ভুবনেশ্বর কুমার ও অর্শদীপ সিংও ভালোই করছিলেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে নিয়মিত ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার বেগে বল করার মতো ফাস্ট বোলার না থাকা ভুগিয়েছে ভারতকে। চোটাক্রান্ত বুমরার জায়গায় মোহাম্মদ শামিকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিল ভারত।
গত বছরের নভেম্বরের পর যিনি আর কোনো টি টোয়েন্টি খেলেননি। অথচ ভারত চাইলে উমরান মালিকের মতো এক্সপ্রেস গতির পেসারকে সুযোগ দিতে পারত। কদিন আগে উমরানকে দলে না নেওয়ায় ভারতীয় দলের সমালোচনা করেছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরামও।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতীয় বোলাররা যখন স্টেডিয়ামছাড়া হচ্ছিলেন, তখন কি উমরানের কথা মনে পড়েছে দ্রাবিড়-রোহিতদের! কে জানে! তবে গতিময় একজন বোলার কিছুটা হলেও পার্থক্য গড়ে দিতে পারতেন বলে বিশ্বাস অনেকের।