বিশ্বকাপে কে অধিনায়ক সাকিব না লিটন—তাঁরা চারজন কী বলেন
বিশ্বকাপের মাত্র দুই মাস বাকি। এর আগে আছে এশিয়া কাপ আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ। এমন সময় অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ এখন একটাই আলোচনা, কে হবেন নতুন অধিনায়ক?
চার সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রিকেট বিশ্লেষক কী বলেন—
দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করে লিটনকেই করা উচিত
গাজী আশরাফ হোসেন
তামিম ইকবালের চোটের মাত্রাটা যখন সবার সামনে এল, তখন পরিস্থিতি অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে একজন খেলোয়াড়ই কিন্তু নিজের শরীরটা সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে। তামিমের ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে। সে বুঝতে পেরেছে, এই চাপটা তার জন্য কঠিন হবে। এখন বিসিবি দুটি পথে চিন্তা করতে পারে, একটা সাময়িক, আরেকটা দীর্ঘমেয়াদি।
এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ যেহেতু সামনে, বিসিবি এই দুই ইভেন্টে সফলতা চাইলে সবচেয়ে ক্ষুরধার মস্তিষ্ককেই নেতৃত্বে চাইবে। তখন সাকিব আল হাসানের নাম আসবে। কিন্তু সাকিবের জন্য তিন সংস্করণের দায়িত্ব নেওয়া কঠিনও হতে পারে। এটা তার শেষ বিশ্বকাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সে ক্ষেত্রে সে নিশ্চয়ই চাইবে, ২০১৯ বিশ্বকাপের মতো বড় কিছু করতে। অধিনায়কত্বের চাপটা তার ওপর না থাকলেই তাই ভালো হবে বলে আমি মনে করি।
সেদিক থেকে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে পারে বিসিবি। তখন লিটন দাসের নাম আসবে আলোচনায়। লিটনের জন্যও অধিনায়কত্ব করতে সুবিধা হবে। দলে তিন-চারজন বড় ভাই থাকবে। তাদের কাছ থেকে সে অনেক কিছু শিখতে পারবে। আমি মনে করি, লিটনকেই ভবিষ্যতের অধিনায়ক হিসেবে এখন থেকেই গড়ে তোলা উচিত।
লিটনকে অধিনায়ক করলে খুশিই হব
আতহার আলী খান
তামিম ইকবালের ক্ষেত্রে যা হলো, তা খুবই দুঃখজনক। অধিনায়ক হিসেবে তামিম দারুণ ছিল। আর ওপেনার তামিমের ব্যাপারে আলাদা করে নিশ্চয়ই কিছু বলার নেই। কিন্তু চোটের সঙ্গে তো আর লড়াই করা যায় না। এটা সবাইকে বুঝতে হবে, মেনে নিতে হবে। কিছু করার নেই। যেকোনো ক্রিকেটারেরই এমন অবস্থায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ফেরা উচিত। এটার ভালো দিকটা দেখুন, সে বুঝেছে পরিস্থিতিটা কী, সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার মনে হয়, সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে দারুণভাবে ফিরে আসবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নতুন অধিনায়ক কে হচ্ছে? ওয়ানডে দলের সহ-অধিনায়ক লিটন দাস। সে হিসেবে লিটনের নাম নিশ্চয়ই আসবে। তার নেতৃত্বে দল ভালোও করেছে। বড় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার যথেষ্ট সামর্থ্য তার আছে। আমরা ভারতকে সিরিজে হারিয়েছি লিটনের অধিনায়কত্বে। লিটনকে অধিনায়ক করলে আমি খুশিই হব।
তবে আমি এটাও বলব, বোর্ড সাকিব আল হাসানকে নিয়েও চিন্তা করতে পারে। সাকিবের পক্ষে শক্ত যুক্তিও থাকবে। আর সেটা কমবেশি সবারই জানা। এখন বোর্ড শেষ পর্যন্ত কোন দিকে যায়, সেটাই দেখার বিষয়।
সাকিবকেই আদর্শ বিকল্প মনে হচ্ছে
ফারুক আহমেদ
বাংলাদেশ ওয়ানডে দলটা তামিম ইকবাল ভালোই গুছিয়ে নিয়েছিল। এরপর যা হলো, তা আমাদের জন্য ভালো হয়নি, এটা আমি আগেও বলেছি। বিশ্বকাপে তামিমই বাংলাদেশের জন্য আদর্শ অধিনায়ক হতে পারত। কিন্তু এখন যেহেতু সেটা হচ্ছে না, আপনাকে সেরা বিকল্পটাই বেছে নিতে হবে। আর সামনে যেহেতু অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুটি টুর্নামেন্ট আছে, আমাদের এখন স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনাই করা উচিত।
অবশ্যই সাকিব আমাদের সেরা বিকল্প। সে অভিজ্ঞ, পারফর্মারও। সব সময়ই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। সবকিছুই তার মধ্যে আছে। জাতীয় দলকে আরও অনেক কিছু দেওয়ার মতো সামর্থ্য সাকিবের আছে। সে খুবই চালাক ও বুদ্ধিদীপ্ত। সে অনেকবার সেটা প্রমাণ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা, সে পারফর্মার। অধিনায়ক যখন পারফর্ম করে, তখন তা নেতৃত্ব দিতেও সাহায্য করে। এই মুহূর্ত সাকিবকেই আদর্শ বিকল্প মনে হচ্ছে।
পরে হয়তো আমরা দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা করতে পারব। সাকিব যদি না চায়, সে ক্ষেত্রে লিটন দাসকে নিয়েও চিন্তা করতে পারি। এর মধ্যেই সে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছে। দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজনও সে। এর মধ্যে কয়েকটি সিরিজে অধিনায়কত্বও করেছে। স্বাভাবিকভাবেই তার নাম আলোচনায় থাকবে।
আমি তো শুধু সাকিবকেই দেখি
নাজমূল আবেদীন
তামিম ইকবালের অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটাকে সাহসী বলতেই হয়। সিদ্ধান্তটা সঠিক ও অধিনায়কোচিত। সে দলের কথাটা ভেবেছে। এখন বোর্ডের পক্ষে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়াটা সহজ হবে। আমি নিশ্চিত, সে চোট থেকে ভালোভাবে ফিরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার জন্য মরিয়া হয়ে আছে।
তামিম দায়িত্ব ছাড়ায় অধিনায়ক হিসেবে শুধু সাকিব আল হাসানকেই দেখি। আমাদের তারকা ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধু সাকিবেরই বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা আছে। সে তারকা ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছে, গড়পড়তা ক্রিকেটার হিসেবেও খেলছে। সে-ই একমাত্র তারকা ক্রিকেটার, যাকে বেঞ্চেও থাকতে হয়েছে। এই অভিজ্ঞতার কারণে সে জানে, বিভিন্ন সময়ে খেলোয়াড়রা কিসের ভেতর দিয়ে যায়।
অনেক বড় বড় অধিনায়কের অধীনে খেলার সুযোগ হয়েছে সাকিবের। এই অভিজ্ঞতা আমাদের দেশে অন্য কারও নেই। সাকিব খুব দ্রুত শিখতেও পারে। এসব কারণেই একটা ক্রিকেট মাঠের চারদিক থেকে সবকিছু দেখে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া সাকিবের জন্য অনেকটাই সহজ। তাই সাকিবকেই অধিনায়ক হিসেবে চাইব। সে এর মধ্যেই দুটি সংস্করণের অধিনায়ক। সেখানে দল সম্প্রতি ভালোও করেছে। ওয়ানডেতেও সাকিব সেটা করতে পারবে।