ব্রড-অ্যান্ডারসন: এমন জুটি কি আসবে আর
যদি দুজনের ক্যারিয়ারের একসঙ্গে তোলা কোনো ছবি নিজ নিজ বাসায় টাঙাতে চান, তাহলে কোনটি বেছে নেওয়া হবে, সে ব্যাপারে একমত স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসন।
ওভালে চতুর্থ দিন সকালে ব্যাটিংয়ে নামার আগে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা গার্ড অব অনার দিয়েছিল শেষ টেস্ট খেলতে নামা ব্রডকে, সঙ্গী ছিলেন অ্যান্ডারসন। মাঠে ঢুকে একজন জড়িয়ে ধরলেন আরেকজনকে, পেছন থেকে তোলা ছবিতে স্পষ্ট দুজনের জার্সি নম্বর—ব্রডের ৮, অ্যান্ডারসনের ৯। ব্যাটিংয়ে নামার আগে এই ছবি দুজনের কাছেই প্রিয় হয়ে উঠেছে। ছবিটা স্মরণীয় তো বটেই। টেস্টেও যেমন স্মরণীয় হয়ে থাকবে দুজনের বোলিং জুটি। ওভালে শেষ হয়েছে অনেক বিখ্যাত ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারই, ব্রডের অবসরে কাল সেখানে শেষ হলো স্মরণীয় এক বোলিং জুটিরও। টেস্ট ইতিহাসের সফলতম জুটিকে গতকাল একসঙ্গে বোলিং করতে দেখা গেল শেষবারের মতো।
ক্যারিয়ারে দুজন একসঙ্গে খেলে নিয়েছেন ১ হাজার ৩৯ উইকেট। শেন ওয়ার্ন ও গ্লেন ম্যাকগ্রার একসঙ্গে খেলে নেওয়া ১ হাজার ১ উইকেটের রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন আগেই। শুধুই পেসারদের মধ্যে থাকলে কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি অ্যামব্রোস জুটিকে (৭৬২) তো পেছনে ফেলেছেন অনেক দিন আগেই।
ব্যাটিংয়ে ঠিক জুটি গড়ে তোলা রান যেমন, স্বাভাবিকভাবেই বোলিংয়ে তেমন নয়। সফলতম বোলিং জুটি যে বলা হচ্ছে, সেটিও একসঙ্গে খেলা ম্যাচে দুজনের মিলিত উইকেটসংখ্যার ভিত্তিতে। তবে অ্যান্ডারসন ও ব্রড ইংল্যান্ডের নতুন বলের দায়িত্ব ভাগ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে প্রথমবার একসঙ্গে খেলেছিলেন। সিরিজের প্রথম টেস্টে হারের পর স্টিভ হার্মিসন, ম্যাথু হোগার্ডদের মতো অভিজ্ঞদের জায়গায় এসেছিলেন দুজন। শুরুটা ভালোই হয়েছিল, ঘুরে দাঁড়িয়ে সেই সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল ইংল্যান্ড।
এমনিতে ইতিহাসের সফলতম দুই পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড ও জেমস অ্যান্ডারসন। সর্বোচ্চ টেস্ট খেলার তালিকায়ও দুজন আছেন শীর্ষ পাঁচে। যে তালিকায় বাকি তিনজনই (শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং, স্টিভ ওয়াহ) ব্যাটসম্যান। স্বাভাবিকভাবেই পেসার মানে শরীরের ওপর বাড়তি চাপ, চোটের সঙ্গে নিত্য লড়াই। সেসব জয় করে দুজনই উপভোগ করেছেন লম্বা টেস্ট ক্যারিয়ার। এর পেছনে অবশ্য স্বাভাবিকভাবেই আছে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের শুধু এক সংস্করণে খেলে যাওয়া। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে দুজনের কেউই সেভাবে সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলেননি।
দুজনই ক্যারিয়ারের বেশ লম্বা একটা সময় নির্ভর করেছেন বলের মুভমেন্টের ওপর। ইংলিশ কন্ডিশনে দুজনই ছিলেন সমান কার্যকর। অ্যান্ডারসন রিভার্স সুইংকে বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেন, অন্যদিকে ব্রড ঝোঁকেন ওবল সিমের ডেলিভারির দিকে।
লম্বা ক্যারিয়ারে ইংল্যান্ডের বড় ভরসাও হয়েছিলেন তাঁরা দুজন। খুবই স্বাভাবিক, কখনো কখনো হোঁচটও খেয়েছে তাঁদের ক্যারিয়ার। ২০২০-২১ অ্যাশেজের পর তো দল থেকে একসঙ্গে বাদ পড়েন দুজন, তাঁদের শেষও তখন দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। কিন্তু বেন স্টোকস ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ইংল্যান্ডের দায়িত্ব নেওয়ার পর ফেরেন দুজনই। সেই ফেরাও ফেরার মতোই। চোট কাটিয়ে এবারের অ্যাশেজে ফেরা অ্যান্ডারসন নিষ্প্রভ থাকলেও ব্রড ছিলেন বেশ সফল। তবে সেই ব্রডই বিদায় বললেন আগে, ৪১ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন যেখানে অবসর নিয়ে কথা বলছেন না এখনো।
খেলা ছাড়ার পর ব্রড ধারাভাষ্যে আসবেন, তা একরকম ঠিকই হয়ে আছে। দ্য হানড্রেডেও স্কাই স্পোর্টসের কমেন্ট্রি বক্সে থাকবেন তিনি। হয়তো সবকিছু পক্ষে গেলে সামনে ইংল্যান্ডের কোনো ম্যাচে দেখা যাবে দৃশ্যটা—অ্যান্ডারসন বোলিং করছেন আর ধারাভাষ্যে সেটির বিশ্লেষণ করছেন ব্রড। যাঁরা একসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই ছিলেন ইংলিশ পেস বোলিংয়ের অন্য নাম!