সমীকরণটা পরিষ্কার। কানপুর টেস্ট বাঁচাতে হলে বাংলাদেশ দলকে ব্যাট করতে হতো কমপক্ষে দুই সেশন। ততক্ষণে যদি দেড়-দুই শ লিড হয়ে যায়, তাহলে শেষ সেশনে রোমাঞ্চকর কিছুই হয়তো অপেক্ষা করত ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য। কিন্তু তা হয়নি। প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রান করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানে রানে অলআউট। ভারতের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৯৫ রান। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৩৪.৪ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৫ রান তোলা ভারতের এ লক্ষ্য টপকাতে ঘাম ঝরাতে হয়নি। ১৭.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত। বৃষ্টি ও ভেজা আউটফিল্ডের কারণে প্রায় আড়াই দিন খেলা না হওয়ার পরও ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টের পর কানপুরেও ভারতের এই জয়ে বাংলাদেশের ধবলধোলাইয়ে শেষ হলো টেস্ট সিরিজ।
প্রথম ইনিংসের মতো গতিময় ছিল ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসও। ছোট লক্ষ্যটাকে দ্রুত তাড়া করার আভাস দিচ্ছিলেন অধিনায়ক রোহিত। তবে ১ বাউন্ডারিতে ৭ বলে ৮ রানে রোহিত আউট হলেও প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ ৭২ রান করা জয়সোয়াল টিকে ছিলেন। শুভমান গিল ৬ রানে আউট হলেও মারকুটে ব্যাটিংয়ে আজ ৪৫ বলে খেলেছেন ৫১ রানের ইনিংস জয়সোয়াল। বিরাট কোহলি অবশ্য শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন। ৩৭ বলে ২৯ রান করেছেন কোহলি। পন্ত অপরাজিত ছিলেন ৪ রানে। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ আজ নিয়েছেন ২ উইকেট, তাইজুল ১টি।
এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে আগের দিন ২ উইকেটে ২৬ রান তুলে দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। ভারতের চেয়ে পিছিয়ে ছিল ২৬ রানে। আজ বাংলাদেশ ভারতকে কত রানের লক্ষ্য দিতে পারে এবং ভারতইবা সেটা পেরোতে পারে কি না, অথবা বাংলাদেশকে ভারত অলআউট করতে পারবে কি না—আজ ছিল এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার দিন। কিন্তু সম্ভাব্য রোমাঞ্চকর দিনটাকে সাদামাটা করে তোলে বাংলাদেশের ব্যাটিং। আরও একবার ব্যাটসম্যানরা ‘আত্মহত্যা’ করলেন বাজে শট খেলে।
সাদমান ইসলামের ১০১ বলে ৫০ রানের ইনিংসটি ছিল বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। ভালো খেলতে খেলতে তিনি আলগা শটে আউট হলে বাংলাদেশ ইনিংসে ‘লড়াই’ বলতে আর কিছু বাকি ছিল না। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মুমিনুল দিনের শুরুতেই অশ্বিনের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন লেগ স্লিপে। যে সুইপ শটটা প্রথম ইনিংসে খুব ভালো খেললেন, সেই শট খেলতে গিয়েই মুমিনুল আউট।
নাজমুলও চেন্নাইয়ে রিভার্স সুইপটা বেশ ভালো খেলেছেন। আজ তিনিও সে শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন, বোলার জাদেজা। লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানও জাদেজার বলে আলগা শট খেলে আউট হন। বুমরায় স্থায়ী হয়নি মিরাজের ইনিংস। মুশফিক কিছুক্ষণ লড়াই করলেও লাঞ্চ বিরতির ঠিক আগের বলে বুমরার স্লোয়ারে মারতে গিয়ে বোল্ড হন। ৩৭ রান আসে তাঁর ব্যাট থেকে। বুমরা, জাদেজা ও অশ্বিন—তিনজনই নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২৩৩ ও ৪৭ ওভারে ১৪৬ (সাদমান ৫০, মুশফিক ৩৭, নাজমুল ১৯; বুমরা ৩/১৭, জাদেজা ৩/৩৪, অশ্বিন ৩/৫০)। ভারত: ২৮৫/৯ ডি. ও ১৭.২ ওভারে ৯৮/৩ (জয়সোয়াল ৫১, কোহলি ২৯*; মিরাজ ২/৪৪, তাইজুল ১/৩৬)। ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী। সিরিজ: ২–ম্যাচ সিরিজে ভারত ২–০–এ জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: যশস্বী জয়সোয়াল। ম্যান অব দ্য সিরিজ: রবিচন্দ্রন অশ্বিন।