দাস প্রথার সঙ্গে সংযোগ থাকায় লর্ডসের স্ট্যান্ডের নাম বদলে যেতে পারে
লর্ডসের উত্তর-পশ্চিম কোণে ভিক্টোরিয়ান আমলের প্যাভিলিয়নের পাশেই ওয়ার্নার স্ট্যান্ড। যাঁর নামে এই গ্যালারির নামকারণ, তাঁর সঙ্গে লর্ডসের সংযোগ স্টেডিয়ামটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ‘৭০ বছরব্যাপী’।
খেলোয়াড়, ক্রিকেট প্রশাসক ও সম্পাদক হিসেবে নানা রকম ভূমিকা ‘গ্র্যান্ড ওল্ডম্যান অব ইংলিশ ক্রিকেট’ নামে খ্যাতিমান স্যার পেলহাম ওয়ার্নারের। ৮৯ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে পরপারে পাড়ি জমানো ওয়ার্নারের নামে লর্ডসে ১৯৫৮ সালে বানানো হয়েছিল ওয়ার্নার স্ট্যান্ড। ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম ‘টেলিগ্রাফ’ জানিয়েছে, দাস প্রথার সঙ্গে সংযোগ থাকায় এই স্ট্যান্ডের নাম পাল্টানো হতে পারে।
ইংলিশ ক্রিকেটে বর্ণবাদসূচক বৈষম্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে ক্রিকেটের আইন প্রণয়নকারী সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। এই প্রতিবেদন পাওয়ার পর ওয়ার্নার স্ট্যান্ডের নাম ‘পর্যালোচনাধীন’ আছে বলে জানিয়েছে ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’।
এমসিসি চেয়ারম্যান ব্রুস কার্নেগি ব্রাউন সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা (নাম) সরিয়ে নিতে চাই এবং ক্লাব হিসেবে পর্যালোচনাধীন রাখতে চাই। ট্রেন্টব্রিজে স্টুয়ার্ট ব্রডের নামে গ্যালারি আছে। এটি বর্তমান কিংবদন্তিদের সঙ্গে তরুণদের সেতুবন্ধের জন্য ভালো।’
টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমসিসি চেয়ারম্যান বলেছেন, ওয়ার্নার স্ট্যান্ডের নাম তাদের (এমসিসি) ‘পর্যালোচনায় রাখা উচিত’। এমসিসিকে এ বিষয়ে ‘খুব সতর্ক হতে হবে’ বলেও মন্তব্য করেন ব্রুস কার্নেগি ব্রাউন।
ইংল্যান্ড, মিডলসেক্স ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন ওয়ার্নার। ১৫ টেস্টের (১৮৯৯-১৯১২) ক্যারিয়ারে অধিনায়কত্বও করেছেন ইংল্যান্ডের। নির্বাচকদের প্রধান এবং কুখ্যাত সেই ‘বডিলাইন’ সিরিজে (১৯৩২-৩৩) ইংল্যান্ড দলের ম্যানেজারও ছিলেন।
দাস প্রথা বিলোপের প্রায় ৭০ বছর পর ১৮৭৩ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোয় জন্ম ওয়ার্নারের। তাঁর পূর্বপুরুষ দাস ব্যবসায় জড়িত ছিলেন।
টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে চিনি উৎপন্ন করে, এমন অর্থকরী ফসল চাষাবাদ করে অর্থের মুখ দেখেছিল ওয়ার্নারের পরিবার। তাঁর দাদা কর্নেল এডওয়ার্ড ওয়ার্নারের ত্রিনিদাদ ও ডমিনিকায় তামাক ও চিনি উৎপন্নকারী ফসলের ভূসম্পত্তি ছিল। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আসা দাসরা সেখানে কাজ করত। দাস প্রথা বিলোপের পর সরকারের পক্ষ থেকে ওয়ার্নার পরিবারকে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছিল।
দাস ব্যবসার সঙ্গে পেলহাম ওয়ার্নারের সরাসরি সংযোগ নেই। যদিও ইংল্যান্ডে অভিযোগ উঠেছে, তিনি এই ব্যবসা থেকে উপকৃত হয়েছেন। যদিও ব্রাউন এমসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ২০২১ সালে সংস্থাটি জানিয়েছিল, ওয়ার্নার স্ট্যান্ডের নাম পাল্টানো হবে না। কারণ, দাস ব্যবসার সঙ্গে তাঁর সরাসরি সংযোগ ছিল না।
কিন্তু ক্রিকেটে সাম্যতা আনতে গঠিত স্বাধীন কমিশন (আইসিইসি) গত জুনে অ্যাশেজে লর্ডস টেস্ট শুরুর আগে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল, সেখানে এমসিসির সমালোচনার পাশাপাশি ওয়ার্নারের সঙ্গে দাস ব্যবসার সংযোগের ব্যাপারটিও সামনে টেনে আনে। আইসিইসি প্রতিবেদনে এমসিসির সদস্যদের বলা হয়েছিল, ‘অতীতচারী, আভিজাত্যবাদী এবং যাঁরা ক্রিকেট খেলেন, সমাজের সেই বড় অংশের প্রতিনিধি নন (ওয়ার্নার)।’
এমসিসির বর্তমান চেয়ারম্যান কার্নেগি ব্রাউন ইংল্যান্ডের ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান লয়েডস অব লন্ডনেরও চেয়ারম্যান ছিলেন। দাস ব্যবসার সঙ্গে সংযোগ থাকায় ২০২০ সালে এই প্রতিষ্ঠান জনসমক্ষে ক্ষমাও চেয়েছিল।
এমসিসি চেয়ারম্যান ব্রাউন এ নিয়ে বলেছেন, ‘দাস প্রথার সঙ্গে এমসিসির সংযুক্ত থাকার ব্যাপারে আমরা একটি পর্যলোচনা করেছিলাম। ক্ষতিকর কিছু পাইনি। দাস প্রথা থেকে এমসিসি কিংবা লর্ডসে টাকা আসার যোগসূত্রটা খুবই কম। লয়েডস অব লন্ডনে আমি এর চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম, যেখানে আমাদের (প্রতিষ্ঠান) সম্মতিতেই দাসবাহী কার্গোগুলো আটলান্টিক পার হতো।’