কুনেমানের বোলিং অ্যাকশন বুমরার চেয়ে আলাদা নয়, তবু কেন...

অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার ম্যাথু কুনেমানের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে আইসিসির কাছে অভিযোগ আনা হয়েছেছবি: ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

সম্প্রতি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে ধবলধোলাই করেছে অস্ট্রেলিয়া। সেই সিরিজে সর্বোচ্চ ১৬ উইকেট নিয়েছেন ম্যাথু কুনেমান।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি স্পিনারের বোলিং অ্যাকশন ত্রুটিপূর্ণ মনে হওয়ায় আইসিসির কাছে রিপোর্ট করেছেন আম্পায়াররা। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে আইসিসি স্বীকৃতি বায়োমেকানিকস টেস্টিং সেন্টারে অ্যাকশন পরীক্ষা করাতে হবে। তবে এর আগে তাঁর ঘরোয়া ক্রিকেটে বল করতে বাধা নেই।

আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বোলার বল ছাড়ার সময় ১৫ ডিগ্রির বেশি কনুই বাঁকালে তা অবৈধ। সিরিজে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক, জোয়েল উইলসন ও ক্রিস গ্যাফানির মনে হয়েছে কুনেমান সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে বেশি কনুই বাঁকিয়েছেন। এ কারণে তাঁরা কুনেমানের বিরুদ্ধে ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রোর কাছে অভিযোগ জানান।

শ্রীলঙ্কা–অস্ট্রেলিয়া সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন ম্যাথু কুনেমান
ছবি: এএফপি

মাত্র পাঁচ টেস্ট খেলা কুনেমানের জন্য স্বাভাবিকভাবেই এই খবর বিশাল ধাক্কা হয়ে এসেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক টিম পেইন ২৮ বছর বয়সী স্পিনারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

পেইনের চোখে, যশপ্রীত বুমরা ও কুনেমানের বোলিং অ্যাকশনের মধ্যে ভিন্নতা নেই। কিন্তু বুমরার অ্যাকশন নিয়ে আম্পায়াররা কখনো সন্দেহ প্রকাশ না হলেও কুনেমানকে ‘সহজ লক্ষ্য’ বানিয়ে ফেলেছেন। পেইনের আরেকটি শঙ্কা হলো, অ্যাকশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কুনেমানকে প্রতিপক্ষের সমর্থকেরা হয়তো ‘প্রতারক’ ভাববেন।

এএসইএন রেডিওকে পেইন বলেছেন, ‘আমার মনে হয় বল করার সময় ওর (কুনেমানের) কনুই সামান্য বেঁকে যায়, কিন্তু এমন তো যশপ্রীত বুমরারও হয়। ক্রিকেটে থ্রোয়িংয়ের (চাকিংয়ের) জন্য কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা মোটেও ভালো ব্যাপার নয়। এর অর্থ, আপনার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমার মনে হয় এটা ওর মনোবল ভেঙে দেবে।’

৪০ বছর বয়সী পেইন আরও বলেছেন, ‘ওর পক্ষে এটা সামলানো খুব কঠিন হবে। সম্ভবত ওই দিন সে চূড়ায় থেকে (সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি) মাঠ ছেড়েছিল। কিন্তু হোটেলে ফিরে খবরটা (সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশন) শোনার পর মানসিক অবস্থা তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিল। তখন থেকে ওকে ক্যারিয়ার বাঁচানোর লড়াই করতে হচ্ছে।’

পেইনের মনে হচ্ছে, ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বরতরা ইচ্ছাকৃতভাবে কুনেমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, ‘ক্রিকেটের ইতিহাসে ফিরে যান। এমন অনেককে দেখেছি কুনেমানের চেয়ে অনেক খারাপ বোলিং অ্যাকশন নিয়ে শত শত টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। কুনেমান দুর্ভাগাদের একজন।’

সাইড অ্যাঙ্গেল থেকে বুমরার বোলিং দেখলে চাকিং মনে হতে পারে
ছবি: ফক্স ক্রিকেটের ভিডিও থেকে

ভারতের তারকা ফাস্ট বোলার বুমরার বোলিং অ্যাকশনকে অনেকেই চাকিং বলে থাকেন। কিন্তু আইসিসি এক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বোলিংয়ের সময় বুমরার কনুই বেশি বাঁকছে বলে মনে করা হলেও তা আসলে চাকিং নয়। বরং অতিমাত্রায় প্রসারণ। যেটাকে শরীরবিদ্যার ভাষায় বলা হয় ‘হাইপার এক্সটেনশন’। অর্থাৎ জন্মগতভাবেই বুমরার কনুই স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি প্রসারিত হয়।

আরও পড়ুন

একজন মানুষের হাড়ের সংযোগস্থলগুলো স্বাভাবিক সীমার চেয়ে বেশি নড়াচড়া করলে সেটাকে বলা হয় ‘হাইপারমোবিলিটি’। এই হাইপারমোবিলিটির কারণেই সাইড অ্যাঙ্গেল থেকে বুমরার বোলিং অ্যাকশন অবৈধ মনে হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে সাইড অ্যাঙ্গেল থেকে কুনেমানের বোলিং অ্যাকশনও তেমন মনে হয়েছে।