৬ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি—পারভেজ ইমন নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন
একটা সময় প্রতিশ্রুতিশীল নতুন ওপেনারের আলোচনায় তাঁর নামটাই আগে আসত। বিশেষ করে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ৪২ বলে সেঞ্চুরি করার পর, যা ছিল টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের দ্রুততম সেঞ্চুরি। এরপর ভাগ্য দোষে হোক, কিংবা সীমিত সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার কারণে, অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপজয়ী ওপেনার পারভেজ হোসেন (ইমন) চলে গেলেন আড়ালে।
সবার দৃষ্টির আড়াল থেকে আবারও আলোচনায় আসতে কী লাগে? নিজের কাজ করা, মানে পারফরম্যান্স। পারভেজ সেটা ঠিকই করে যাচ্ছেন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আজ মোহামেডানের বিপক্ষে পেয়েছেন সেঞ্চুরি। যা চলতি লিগে ৬ ইনিংসের মধ্যে তাঁর তৃতীয় সেঞ্চুরি। বাকি তিন ইনিংসের মধ্যে ফিফটিও আছে একটিতে।
এবারের প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন প্রাইম ব্যাংকে। প্রথম ম্যাচে শাইনপুকুরের বিপক্ষে ৭ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে পরের ম্যাচেই খেলেছেন ১২৯ বলে ১৫১ রানের ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ ইনিংস। ৯ চার ও ৮ ছক্কায় এই বিধ্বংসী ইনিংস খেলার পরের ম্যাচেই সিটি ক্লাবের বিপক্ষে করেছেন ১১৪ বলে ঠিক ১০০। সেদিন তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৫টি ছক্কা। এরপর সেঞ্চুরিতে দুই ম্যাচের বিরতি। তবে এর প্রথমটিতে খেলেছেন ৭৫ বলে ৫০ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে ১৩ রান করার পর আজ আবার সেঞ্চুরিতে ফিরেছেন।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে পারভেজ সেঞ্চুরি করেছেন ১০০ বলে। ইনিংসের ৪৩তম ওভারে আউট হওয়ার আগে করেছেন ১১১ বলে ১১০ রান। ছক্কা মেরেছেন ৬টি, চারও ৬টি । সেঞ্চুরির তিন ইনিংসে পারভেজ ছক্কা মেরেছেন মোট ১৯টি। না, এটা কোনো রেকর্ড নয়। তবে পারভেজের ইনিংসের ছক্কাগুলোকে আলাদা করে উল্লেখ করা ছক্কা মারায় তাঁর সহজাত সামর্থ্য বোঝাতে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ইচ্ছেমতো ছক্কা মারার ব্যাটসম্যান যে খুব বেশি নেই।
ছক্কা মারার সামর্থ্য যেহেতু সহজাত, টি-টোয়েন্টিতে তো আরও ভালো করার কথা। তা সদ্যসমাপ্ত বিপিএলে পারভেজ কেমন করেছেন? বিস্ময়করই বলতে হবে, এবারের বিপিএলে পারভেজ অনেকটা দর্শকের ভূমিকাতেই ছিলেন।
খুলনা টাইগার্সের ডাগআউটে বসে অনূর্ধ্ব ১৯ দলের সতীর্থ তাওহিদ হৃদয়, তানজিদ তামিমদের বিপিএল মাতানো দেখেছেন, বলতে পারেন এভাবেও। পুরো টুর্নামেন্টে পারভেজ ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৪টি। দুটিতে ছিল ত্রিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ২৪ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলার পর দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ৩০ বলে ৪০ রান। এরপর চট্টগ্রামের বিপক্ষে একটি ম্যাচে ৬ রান করে আউট হলে আর খেলার সুযোগ পাননি।
সুযোগের প্রসঙ্গ যখন এসেছে, তখন বলতেই হচ্ছে পারভেজ জাতীয় দলেও সুযোগ পেয়েছেন কম—মাত্র একটি ম্যাচেই। ২০২২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে অভিষেক হয়েছিল টি-টোয়েন্টিতে। অভিষেক ম্যাচে ২ রানে আউট হওয়ার পর আর কখনো সুযোগ পাননি। পারফরম্যান্সের কারণেই বাদ পড়েছেন, এটা বলা খুব সহজ। তবে এক ম্যাচ দিয়ে কি এটির মূল্যায়ন হয় নাকি! সেই যে বাদ পড়লেন, এর পর থেকে আড়ালেই চলে গেলেন পারভেজ। সম্ভাব্য একটা কারণ হয়তো কোচিং স্টাফে অদলবদল। দুর্ভাগা ছাড়া কী–ই বা বলবেন!
ভাগ্য অবশ্য ওভাবে পারভেজকে কখনোই সহায়তা করেনি। বঙ্গবন্ধু কাপে ৪২ বলে সেঞ্চুরি করে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক পেয়েছিলেন। চোটের কারণে ছিটকে যান। সেই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের পারফরম্যান্সের জোরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রাথমিক স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছিলেন পেসার শরীফুল ইসলামও। এরপর সেই বছরই তিন সংস্করণেই অভিষেক হয়ে যায় শরীফুলের। সেই শরীফুল এখন দলের প্রধান পেসার। সেই সময়ে পারভেজ চোটে না পড়লে তাঁর গল্পটাও এমন সুখকর হতে পারত।
পারভেজের নামটা আরও একবার জোরালোভাবে আলোচনায় আসে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির পর। তারপরও বিশ্বকাপের পরপরই পাকিস্তান সিরিজের প্রথম দুই টি-টোয়েন্টির দলে জায়গা পাননি। তা নিয়ে তখন অনেক আলোচনা হয়েছিল। সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টির স্কোয়াডে অবশ্য ডাক পেয়েছিলেন। তবে তাঁকে খেলানো হয়নি।
পারভেজ যখন আলোচনার বাইরে চলে গেছেন, তখনই আলোচনায় উঠে এসেছেন তানজিদ। সৌম্য সরকারের কনকাশন বদলি হিসেবে নেমেও সর্বশেষ ম্যাচেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছেন ৮৪ রানের ইনিংস। এর আগে বিপিএলে খুলনার বিপক্ষে এক সেঞ্চুরিসহ করেছেন ৩৮৪ রান। পারভেজের প্রসঙ্গে তানজিদকে টেনে আনার কারণ, এই দুই তরুণ ব্যাটসম্যানের খেলার ধরন অনেকটাই এক রকম—আক্রমণাত্মক। এরই মধ্যে পারফর্ম করে নিয়মিত ওপেনার হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে গেছেন তানজিদ। পারভেজ এখন আলোচনাতেই নেই। সেখান থেকে আবার ওপেনিং নিয়ে স্বপ্ন দেখতে হলে তাঁকে বিশেষ কিছুই করতে হবে। প্রিমিয়ার লিগে ৬ ম্যাচে ৩টি সেঞ্চুরি করে পারভেজ হোসেন ইমন কি তেমন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছেন!