এবার খাজাকে ব্যাট থেকে সরাতে হলো ঘুঘুর স্টিকার

নতুন ব্যাট থেকে ঘুঘুর স্টিকার সরিয়ে নেন উসমান খাজাএক্স

উসমান খাজা যে ব্যাট নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন, তাতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু ইনিংসের মাঝপথে ব্যাট পরিবর্তন করতে গিয়ে বেঁধেছে বিপত্তি। পরিবর্তিত ব্যাটে ছিল একটি ঘুঘু পাখির স্টিকার।

ঘুঘুটি একটি জলপাই গাছের শাখায় বসে আছে—স্টিকারটি ছিল এমন। বহুকাল আগে থেকেই মানুষ ঘুঘুকে শান্তি ও নির্মলতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। প্রাচীন গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীতেও এর উল্লেখ আছে। এটিকে এখন মানবাধিকারের প্রতীকও মনে করা হয়।

কিন্তু আইসিসির আইন অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া খেলোয়াড় এবং ম্যাচ অফিশিয়াল বার্তাসংবলিত কোনো পোশাক ও সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারবেন না। তাই স্টিকারটি ব্যাট থেকে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হন খাজা।

অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসের ১৯তম ওভারে ব্যাট পরিবর্তন করেন উসমান খাজা
এএফপি

আজ নিউজিল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়ার ওয়েলিংটন টেস্টের তৃতীয় দিনে সকালের সেশনে এই ঘটনা ঘটেছে। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে গতকাল ২ উইকেটে ১৩ রান তুলে দিন শেষ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। খাজা অপরাজিত ছিলেন ৫ রানে। ৩৭ বছর বয়সী ওপেনার কাল যে ব্যাট দিয়ে খেলেছেন, আজও সেটা নিয়েই নেমেছিলেন।

কিন্তু ১৯তম ওভারে সেই ব্যাটে চিড় ধরলে নতুন ব্যাট চেয়ে পাঠান খাজা। একাদশের বাইরে থাকা ম্যাট রেনশ খাজার কিট ব্যাগ থেকে একাধিক ব্যাট নিয়ে মাঠে যান। সেখান থেকে তিনি একটি ব্যাট বেছে নেন। কিন্তু তাতে ঘুঘুর স্টিকার থাকায় ব্যাটিং চালিয়ে যেতে পারতেন না। বাধ্য হয়ে স্টিকারটি তুলে ফেলেন।

আরও পড়ুন

নতুন ব্যাট দিয়ে খেলতে নেমে বেশি দূর এগোতে পারেননি খাজা। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে অফ স্পিনার গ্লেন ফিলিপসের বলে চড়াও হতে গিয়ে ব্যক্তিগত ২৮ রানে স্টাম্পড হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসও বেশি দূর এগোয়নি। পার্ট টাইমার ফিলিপসেরই ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে (৫/৪৫) সফরকারীরা ১৬৪ রানে অলআউট হয়ে নিউজিল্যান্ডকে জয়ের ৩৬৯ রানের লক্ষ্য দেয়।

গ্লেন ফিলিপসের বলে স্টাম্পড হন উসমান খাজা
এএফপি

খাজার সঙ্গে আইসিসির মতবিরোধ নিকট অতীত। এর শুরুটা গত বছর ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংসতায় প্রতিবাদমুখর হন খাজা। ফিলিস্তিনিদের প্রতি আকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে পার্থে সিরিজের প্রথম টেস্টে স্লোগানসংবলিত জুতা পরে খেলতে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার। জুতায় লেখা ছিল ‘স্বাধীনতা একটি মানবাধিকার’ ও ‘সবার জীবনই গুরুত্বপূর্ণ’।

আরও পড়ুন

কিন্তু বিষয়টিকে ‘রাজনৈতিক’ ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করে খাজাকে স্লোগানসংবলিত লেখা নিয়ে খেলার অনুমতি দেয়নি আইসিসি। বাধ্য হয়ে সাদা টেপ দিয়ে স্লোগান দুটি ঢেকে রাখতে হয় তাঁকে। পরে খাজা কালো বাহুবন্ধনী পরে খেলতে নামেন। এতেও আপত্তি তোলে আইসিসি।

মেলবোর্নে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামার আগে আবার আলোচনায় আসেন খাজা। এবার কোনো স্লোগান বা কালো বাহুবন্ধনী নয়, নিজের ব্যাটে ও জুতায় শান্তির প্রতীক পায়রার স্টিকার লাগিয়ে বক্সিং ডে টেস্ট খেলার ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু খাজাকে সেই অনুমতিও দেয়নি আইসিসি।

গত ডিসেম্বরে পার্থ টেস্টে কালো বাহুবন্ধনী পরায় উসমান খাজাকে তিরস্কার করেছিল আইসিসি
এক্স

সতীর্থ মারনাস লাবুশেনকে ধর্মীয় প্রতীক ইগলের স্টিকার পরে খেলার অনুমতি দেওয়া হলেও শান্তির প্রতীক পায়রায় আইসিসির আপত্তি কেন—এ নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিলেন খাজা। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন দ্বিচারিতার সমালোচনা করেছিলেন তিনি।

সে ঘটনায় আইসিসি খাজার বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিল এবং ন্যূনতম শাস্তি হিসেবে ভর্ৎসনাও করেছিল। খাজা আপিল করলেও আইসিসি তাঁর সব যুক্তিতর্ক প্রত্যাখ্যান করে শাস্তি বহাল রাখে।