নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে ডাকা হচ্ছে ‘বিউটিফুল মনস্টার’ নামে। কারণ, স্টেডিয়ামের কাঠামো সুন্দর, কিন্তু উইকেট ভয়ংকর। এ মাঠেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আজ বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে। দুই দলের মধ্যে শক্তিমত্তায় প্রোটিয়ারাই এগিয়ে।
বাংলাদেশের বোলিং ভালো, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং আরও ভালো। আর ব্যাটিংয়ে তারা স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে, ফিল্ডিংয়ে তো অবশ্যই। কিন্তু নিউইয়র্কের কন্ডিশন, উইকেটের চরিত্র দুই দলের শক্তির পার্থক্যটা কমিয়ে আনবে বলে আমার ধারণা।
কয়েক দিন আগেও কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে কারও কোনো প্রত্যাশা ছিল না। বাংলাদেশ যদি শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারে, তাহলে নেপাল ও নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে পরের রাউন্ডে চলে যাবে—সবাই এভাবেই ভেবেছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকা যেহেতু প্রবল প্রতিপক্ষ, আমরা ধরেই নিয়েছি ওরা বাংলাদেশকে হারিয়ে দেবে। কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম দুটি ম্যাচের পারফরম্যান্স দেখে মনে হচ্ছে, কেন নয়? ভালো খেললে বাংলাদেশও জিততে পারে!
দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের দুই ম্যাচে কিছুটা কোণঠাসা হয়েছে। সুযোগটা যদি কাজে লাগাতে পারলে যেকোনো কিছুই হতে পারে। আর এই আত্মবিশ্বাস শ্রীলঙ্কাকে হারানোর ফসল। বাংলাদেশ শুধু খেলার জন্য খেলতে নামবে, তা নয়। বাংলাদেশ জেতার জন্যই খেলবে।
কাজটা সহজ হয় যদি বাংলাদেশ টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠাতে পারে। এখন পর্যন্ত যা দেখলাম, নিউইয়র্কে ১২০ রানও তাড়া করা কঠিন। বাংলাদেশের ম্যাচেও যে একই উইকেট থাকবে, সে নিশ্চয়তা নেই। এ উইকেট নিয়ে আগে থেকে ধারণা করা খুব কঠিন। তাই কন্ডিশন বুঝে পরে ব্যাটিং করা বেশি নিরাপদ। বাংলাদেশ যদি টস জিতে পরে ব্যাটিং করে, দক্ষিণ আফ্রিকাকে কম রানে থামাতে পারে, তাহলে সুযোগ থাকবে। বোলারদের চরম কৃপণ হতে হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা যদি টসে জিতে যায়, আমার ধারণা তারা আগে বোলিংই করবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে খুব ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। এটা আদর্শ টি-টোয়েন্টি উইকেট নয়, এখানে চাইলেও ১৮০ রান করা যাবে না।
এ মাঠে বাংলাদেশ একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। খুব আক্রমণাত্মক ব্যাটিং না করেও ভারতের বোলারদের বিপক্ষে ১২৫-এর মতো রান করেছে। এই উইকেটে এই রান যে খারাপ নয়, তা তো আমরা নিউইয়র্কের সর্বশেষ কয়েকটি ম্যাচেই দেখেছি। তবে এখানে কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিং করাটা হবে বোকামি। ১৬০ রান করতে হবে, সেটা ভেবে নিলে চলবে না। কন্ডিশন বিবেচনা করে ব্যাটসম্যানদের লক্ষ্য বারবার নতুন করে ঠিক করতে হতে পারে।
ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লিটন দাসের দিকে চোখ থাকবে। আগের ম্যাচে সে অত্যন্ত কঠিন একটা ইনিংস খেলেছে। অনেকটা রাগসংগীতের মতোই বলব ইনিংসটাকে। এমন ব্যাটিং সবাই করতে পারবে না। এত চাপের মধ্যে এতটা সঠিক ব্যাটিং করা খুব কঠিন। এই ইনিংসটা তাকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস জোগাবে। আজ তানজিদের সঙ্গে যদি লিটন ওপেন করে, তাহলে সৌম্যর জায়গায় জাকের আলীকে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। এই একটা পরিবর্তন হয়তো আসতে পারে দলে। এই উইকেটে তিন পেসারই খেলবে, সঙ্গে সাকিব ও রিশাদের স্পিন। আশা করি, এই সমন্বয় বাংলাদেশকে এনে দেবে আরও একটি স্মরণীয় জয়।
লেখক: ক্রিকেট কোচ ও বিশ্লেষক।