তামিম কি মোস্তাফিজকে আরেকটু আগে আনতে পারতেন
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০৯ রানের সম্বল নিয়ে এক প্রান্ত থেকে সাকিব আল হাসানকে দিয়ে বোলিং উদ্বোধন করালেন তামিম ইকবাল। অন্য প্রান্তেও শুরুতে স্পিন আনার কথাই ভেবেছিলেন, ক্যাপ খুলে বোলিংয়ের জন্য প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
তবে শেষ মুহূর্তে মত বদলে মিরাজকে সরিয়ে তামিম আনলেন তাসকিন আহমেদকে। প্রথম ওভারেই ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছিলেন সাকিব, আরেকটি উইকেটের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হলো নবম ওভার পর্যন্ত।
সাকিব-তাসকিনের পর আক্রমণে আসা বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম এনে দিয়েছেন পরের দুটি উইকেট। এরপর এলেন মিরাজ। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান, তিনি কোথায়। বাঁহাতি পেসারকে তামিম যখন আক্রমণে আনলেন, ইনিংসের বয়স ২০ ওভার। মানে দুই প্রান্তের বলই ১০ ওভারের পুরোনো।
মোস্তাফিজের ক্ষেত্রে বল পুরোনো হলেও সমস্যা নেই—এমনটি মনে করাই যায়। স্লোয়ার আর কাটার যাঁর প্রধান অস্ত্র, তাঁকে আপনি একটু পরে আনতেই পারেন। পুরোনো বলে বরং তাঁর একটু সুবিধাই।
মোস্তাফিজ যে মিরপুরে বোলিং করতে পছন্দ করেন, সেটি আলাদা করে না বললেও চলে। এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে যে কয়টি ভেন্যুতে কমপক্ষে ৫ ওভার বোলিং করেছেন, গতকালের আগে এমন গড় (১৪.৮৩) ও এমন ইকোনমি রেট (৩.৮৯) নেই আর কোথাও।
সেখানেই কাল ৫ নম্বরে তাঁকে আনলেন তামিম। ৮৩ ম্যাচের ক্যারিয়ারে মোস্তাফিজ পঞ্চম বোলার হিসেবে বোলিংয়ে এলেন মাত্র ষষ্ঠবারের মতো। এর আগে দেশের মাটিতে একবারই এত পরে এসেছিলেন, ২০২১ সালের মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তবে সেবার ১১তম ওভারেই দেখা গিয়েছিল মোস্তাফিজকে। সেটি আবার ছিল ম্যাচের প্রথম ইনিংস।
মানে দেশের মাটিতে ম্যাচে প্রতিপক্ষ যখন রান তাড়া করছে, অধিনায়কেরা বরাবরই মোস্তাফিজের ওপর আগেভাগেই ভরসা রেখেছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের উইকেট ছিল চিরায়ত মিরপুরের উইকেট। মন্থর গতি, অসম বাউন্স, বল যেখানে গ্রিপ করছিল, মিলছিল টার্নের দেখাও।
যদি দুই দলের বোলিং আক্রমণের তুলনা করেন, তাহলে ইংল্যান্ড দলে মোস্তাফিজের সবচেয়ে কাছাকাছি ধরনের বোলার ক্রিস ওকস। এমনিতে সিম আর সুইংয়ের ওপর নির্ভর করলেও এমন উইকেটে স্বাভাবিকভাবেই ক্রস সিম আর কাটারের ওপর নির্ভর করেন। সেই ওকসকে দিয়ে বাটলার গতকাল ইনিংস উদ্বোধন করিয়েছেন, করিয়েছেন টানা ৫ ওভার।
এটা দুর্ভাগ্যজনক। যেকোনো পেসারই নতুন বলের স্বাদ পেতে চায়। তাকে অনেক পরে আনা হয়েছে। হতে পারে কৌশলগত কোনো সিদ্ধান্ত। তবে ও যখন এসেছে, সেখান থেকে ১০ ওভার টানা করলেও ৪০ ওভার হয়ে যায় ইনিংসের। হয়তো শুরুতে স্পিনার উইকেট পেয়েছে, মোস্তাফিজ আরও পরে এসে শেষের দিকের উইকেট তুলে নেবে—এমন গেমপ্ল্যান ছিল।সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন
আর যেখানে ২০৯ রানের সম্বল মানে বাংলাদেশের উইকেট দরকার নিয়মিত বিরতিতে, সেখানে মোস্তাফিজকে ২১তম ওভার পর্যন্ত ধরে রেখেছেন তামিম। রেকর্ড বলে, মিরপুরে ডেথ ওভারের চেয়েও প্রথম পাওয়ারপ্লেতে বেশি ভালো মোস্তাফিজ। এ মাঠে শেষ ১০ ওভারে মোস্তাফিজ ১৮ উইকেট নিয়েছেন, তবে ওভারপ্রতি খরচ করেছেন ৪.৫২ করে রান। সেখানে প্রথম পাওয়ারপ্লেতে তাঁর ১২ উইকেট আছে, যেখানে ওভারপ্রতি খরচ ৪.৩৪ রান।
সম্বল কম, আবার উইকেটও প্রয়োজন, সঙ্গে মিরপুরের চিরায়ত উইকেট—এমন একটা মঞ্চ মোস্তাফিজের জন্য হতে পারত আদর্শ। অবশ্য যে সময় মোস্তাফিজকে আনা হয়েছে, সেখানেও পার্থক্য গড়ে দেওয়ার সুযোগ ছিল তাঁর। কয়েক ওভার আগে জস বাটলার ফিরে গেছেন, ক্রিজে অপেক্ষাকৃত নতুন উইল জ্যাকস। তবে মোস্তাফিজ ঝলকটা ঠিক দেখাতে পারেননি, শেষ পর্যন্ত ৮ ওভারে ৪২ রান দিয়ে উইকেটশূন্যই থেকেছেন।
ম্যাচ শেষে নাজমুল হোসেন অবশ্য বলেছেন, মোস্তাফিজ ভালো বোলিং-ই করেছেন, ‘যে রানটা করেছিলাম, বোলিংটা যেভাবে শুরু করেছিলাম, ওই রানটা আমরা ডিফেন্ড করার মতো অবস্থায় চলে গেছিলাম। কারণ, ১০০ রানে ৫ উইকেট...ওদের আরও অনেক রান লাগত। আমাদের যে বোলিং আক্রমণ আর উইকেটটা যেমন ছিল, আমার মনে হয় ওখান থেকে ম্যাচটা জেতা সম্ভব ছিল। কোনো একভাবে হয়নি। ফিজ (মোস্তাফিজ) বা তাসকিন ভালো বোলিং করেছে... তিনটা স্পিনারই ভালো বল করেছে। কিন্তু ম্যালান আসলে বেশ ভালো ব্যাটিং করেছে।’
সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন অবশ্য মোস্তাফিজকে এত পরে দেখে বিস্ময়ই প্রকাশ করেছেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। যেকোনো পেসারই নতুন বলের স্বাদ পেতে চায়। তাকে অনেক পরে আনা হয়েছে। হতে পারে কৌশলগত কোনো সিদ্ধান্ত। তবে ও যখন এসেছে, সেখান থেকে ১০ ওভার টানা করলেও ৪০ ওভার হয়ে যায় ইনিংসের। হয়তো শুরুতে স্পিনার উইকেট পেয়েছে, মোস্তাফিজ আরও পরে এসে শেষের দিকের উইকেট তুলে নেবে—এমন গেমপ্ল্যান ছিল।’
‘তবে সেটি কাজ করেনি। তবে আমার মনে হয়, নতুন বলে আনলে সে নিজের দক্ষতা আরেকটু ভালোভাবে দেখাতে পারত। এরপরও পুরোনো বলেও সে নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছে। তবে ডেভিড ম্যালান একটা দিক ধরে রাখার কারণে নতুন ব্যাটসম্যান আসেনি। বাংলাদেশের হারের অন্যতম কারণ এটি।’
দিন শেষে বড় পার্থক্য তো ম্যালানের ব্যাটিং-ই। এমনিতে ২০৯ রানের সম্বল নিয়ে ইংল্যান্ডের এমন ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করাটাই বাংলাদেশের বোলারদের জন্য বড় একটা কৃতিত্ব—সেটি নিয়ে সংশয় থাকা উচিত নয়। ব্যাটিংয়ে যে কিছু রান বাংলাদেশ কম করে ফেলেছে, সেটা নিয়েও দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই বললেই চলে। তবুও ১৭তম ওভারের মধ্যেই ৪ উইকেট তুলে নেওয়ার পর বাংলাদেশ দারুণ এক সম্ভাবনাই তৈরি করেছিল। শেষ পর্যন্ত ম্যালানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে তা হয়নি।
তবে তামিম কি গতকাল উইকেট নেওয়ার অপশন হিসেবে মোস্তাফিজকে আরেকটু আগে বোলিংয়ে আনতে পারতেন? প্রশ্ন সেটিই।
ম্যালানের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে আরও কিছু ব্যাপারও। মোস্তাফিজের এত পরে বোলিংয়ে আসাও হয়তো সেটির একটি।