গুরবাজ–ওমরজাইয়ের ব্যাটে আফগানদের জয়, সিরিজ হারল বাংলাদেশ

সেঞ্চুরি করেন গুরবাজওয়ালটন

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ৫ আর ২। রহমানউল্লাহ গুরবাজ যেন সব জমিয়ে রেখেছিলেন শেষ ম্যাচের জন্য! শারজায় শেষ ওয়ানডেটা সিরিজ নির্ধারণী হয়ে যাওয়ায় সেটার দরকার পড়ল আরও বেশি। বাংলাদেশের ২৪৪ রানের জবাব দিতে নেমে সময়ের দাবি মিটিয়ে আফগান ওপেনার এবার খেললেন ১০১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। আর তাতে শেষ ম্যাচটা ৫ উইকেটে জিতে সিরিজও ২–১–এ জিতে নিল আফগানিস্তান।

আরও পড়ুন

নড়বড়ে শুরুর পরও মাহমুদউল্লাহর ৯৮ বলে ৯৮ আর চোটে পড়া নাজমুল হোসেনের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের সময়োপযোগী ৬৬ রানের ইনিংসে লক্ষ্যটা খারাপ দেয়নি টসে জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ। শারজার উইকেটে যেখানে ২২৫–২৩০ রানকেই জেতার মতো স্কোর মনে হচ্ছিল, সেখানে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে করে ২৪৪।

কিন্তু ম্যাচ জিততে বোলিংটাও তো হওয়া চাই সে রকম। নাসুম আহমেদ কিছুটা বেগ দিয়েছেন আফগান ব্যাটসম্যানদের। উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে মাত্র ২৪ রানই দিয়েছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ২ উইকেট পাওয়া নাহিদ রানাও খারাপ করেননি। কিন্তু বাকি বোলারদের তেমন একটা পাত্তাই দেননি আফগান ব্যাটসম্যানরা। ৮৪ রানে ৩ উইকেট হারালেও কখনো এটাও মনে হয়নি যে ম্যাচে তারা পিছিয়ে।

৯৮ রানের ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ
এসিবি

চতুর্থ উইকেটে গুরবাজ–আজমতউল্লাহ ওমরজাই মিলে ১১১ বলে গড়েন ১০০ রানের জুটি। বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটা ফসকে যায় তখনই। মিরাজের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে জাকিরের ক্যাচ হয়ে গুরবাজ ফিরে গেলেও ষষ্ঠ উইকেটে মোহাম্মদ নবীর সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৫৮ রানের জুটিতে বাকি কাজটা ওমরজাই সেরে ফেলেন ১০ বল বাকি থাকতেই। শরীফুল ইসলামকে লং অফ দিয়ে মারা নিজের পঞ্চম ছক্কায় ম্যাচ শেষ করা ওমরজাই করেছেন ৭৭ বলে অপরাজিত ৭০ রান।

আরও পড়ুন

এর আগে ৭২ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডটা ইনিংস শেষে কেমন হতশ্রী হতে পারে, সে কল্পনাকে চোখ জ্বালা করা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে দিচ্ছিল প্রথম ম্যাচের দুঃস্মৃতি। ৫৩ রানে দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও সৌম্য সরকার আউট হয়ে যাওয়ার পর মিরাজ উইকেটে এসে চলে যেতে দেখেছেন আরও দুই ব্যাটসম্যান জাকির হাসান ও তাওহিদ হৃদয়কেও। নবম ওভারে বিনা উইকেটে ৫৩ থেকে ১৫তম ওভারেই বাংলাদেশের স্কোর ৭২/৪!

উইকেটে নেমে মিরাজ হয়তো ভাবলেন, আরও উইকেট পড়ে যাওয়া রোধে খোলসবন্দী ব্যাটিংই নিরাপদ। অথবা মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে বুঝি এই দ্বিপক্ষীয় সিদ্ধান্তই হলো, ‘ভাই, আপনি মারেন, আমি ঠেকাই।’ শারজার উইকেটের দুই প্রান্তে যুগপৎ দৃশ্যায়িত হতে থাকল টেস্ট আর ওয়ানডের ব্যাটিং। মাহমুদউল্লাহর ৯৮ রান এসেছে ৯৮ বল খেলে ১০০ স্ট্রাইক রেটে, মিরাজ ঠিক উল্টো। ৫৫.৪৬ স্ট্রাইক রেটে ১১৯ বলে করেছেন ৬৬ রান।

গুরবাজ–ওমরজাইয়ের জুটিতে জিতেছে আফগানিস্তান
ওয়ালটন

মাহমুদউল্লাহ রানআউট হয়েছেন একেবারে ইনিংসের শেষ বলে। মাঠ ছাড়ার সময় শরীরী ভাষায় আর মুখের অভিব্যক্তিতে যত না ২ রানের জন্য হতাশা, তার চেয়ে বেশি ছিল ক্লান্তি। দলকে বিপর্যয়ের মুখ থেকে একটু একটু করে দাঁড় করাতে করাতে একপর্যায়ে তিনিও হয়তো ভেবেছিলেন, সেঞ্চুরি কেন নয়! অবশ্য যে পরিস্থিতিতে তিনি ওই ইনিংস খেলেছেন, সে পরিস্থিতিতে তিন অঙ্ক ছোঁয়াটা যেমন ‘মহাকাব্যিক ইনিংসের’ বিশেষণে সিক্ত হওয়া, তেমনি ওই পরিস্থিতিতে দলকে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া ৯৮ রানের ইনিংস খেলার পর ২ রানের আফসোসও আসলে কোনো আফসোস নয়।

আরও পড়ুন

মাহমুদউল্লাহর ইনিংসের ৩টি ছক্কা ও ৭টি চারকে ‘অলংকার’ই বলতে হচ্ছে। কারণ, কখনো সুইপ, কখনো দুই পা এগিয়ে, কখনোবা বানানো শট খেলে মারা চার–ছক্কাগুলোর প্রায় সবই ছিল চোখ আটকে যাওয়ার মতো শটে। ক্যারিয়ারের দিগন্ত দেখতে পাওয়া একজন ব্যাটসম্যানের ব্যাটিংয়ে বয়সের ছায়া পড়বে স্বাভাবিক।

কিন্তু সেই ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ বলেই হয়তো আবহ সংগীতে বেজে চলছিল প্রত্যাবর্তনের গান, যে গানের শুরু প্রতিবারই হয় শেষের বাঁশি শুনে।
তবে শারজায় কাল রাতটা মাহমুদউল্লাহর ছিল না। সেটি হলে তো রাতটা হতো বাংলাদেশেরও!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৪৪/৮ (মাহমুদউল্লাহ ৯৮, মিরাজ ৬৬, সৌম্য ২৪, তানজিদ ১৯, হৃদয় ৭; ওমরজাই ৪/৩৭, নবী ১/৩৭, রশিদ ১/৪০, ফারুকি ০/৪১।)

আফগানিস্তান: ৪৮.২ ওভারে ২৪৬/৫ (গুরবাজ ১০১, ওমরজাই ৭০*, নবী ৩৪*, আতাল ১৪, রহমত ৮; নাহিদ ২/৪০, মোস্তাফিজ ২/৫০, মিরাজ ১/৫৬)।

ফল: আফগানিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ আফগানিস্তান ২–১ ব্যবধানে জয়ী।