২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ভারতের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৮৪ ম্যাচ খেলেছেন প্রাভিন কুমার। নিয়েছেন ১১২ উইকেট। আইপিএলে পাঁচটি ভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে ১১৯ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাও আছে এ পেসারের। এমন কেউ বিস্ফোরক দাবি করে বসলে হেলাফেলা করার উপায় নেই।
প্রাভিন কুমার অতীতে বেশ কয়েকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল, তিনি নাকি নিয়মিত মদ্যপান করতেন। ৩৭ বছর বয়সী সাবেক এ পেসার এই অভিযোগ অস্বীকার না করলেও দাবি করেছেন, সব সতীর্থই মদ পান করতেন; কিন্তু দোষারোপ করা হতো শুধু তাঁকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্য লালনটপকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরও দাবি করেছেন, তাঁর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই দলের কেউ এ অপচেষ্টা চালিয়েছে।
সাক্ষাৎকারে প্রাভিন কুমার বলেছেন, ‘ভারতীয় দলে খেলার সময় কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটার আমাকে বলত, “মদ খেয়ো না, এটা কোরো না, ওটা কোরো না।” কিন্তু সবাই মদ (অ্যালকোহল) পান করত, বদনাম হতো শুধু আমার। কেউ একজন আমার নামে উল্টাপাল্টা কথা ছড়াত। বলত, “পিকে (প্রাভিন কুমার) তো মদ পান করে।”’
কোন সিনিয়র ক্রিকেটাররা তাঁকে উপদেশ দিতেন—এমন প্রশ্নে সাবধানী প্রাভিন, ‘ক্যামেরার সামনে আমি কারও নাম নিতে চাই না। কিন্তু সবাই জানে, কে আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।’
ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২০১২ এশিয়া কাপই প্রাভিনের ওয়ানডে ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে। ওই টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য, পাকিস্তানের বিপক্ষে আরও মার খেয়েছেন—১০ ওভারে ৭৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। মাঝে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৫৬ রানের ৩ উইকেট নিলেও ৪৯তম ওভারে ১৪ রান দিয়ে ম্যাচ একরকম বাংলাদেশের হাতে তুলে দেন।
এশিয়া কাপ শেষ হওয়ার কয়েক দিন পর ভারতীয় দল দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে যায়। সেই ম্যাচেও ভালো করতে পারেননি প্রাভিন, ২ ওভারে দেন ২২ রান। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করলেও জাতীয় দলে আর কখনো ডাক পড়েনি। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালে ৩১ বছর বয়সে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
প্রাভিন জানিয়েছেন, সতীর্থ তাঁর বদনাম করায় ও জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর তিনি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। এমনকি আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন, ‘বেশির ভাগ সময় মনমরা হয়ে থাকতাম। এমন হতো আমি টানা ৫ ঘণ্টা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ক্যারিয়ারে এত কিছু অর্জন করার পরও যখন দেখলাম কেউ আমাকে ডাকছে না, আমি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিছুদিনের জন্য হরিদ্বারে (হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র স্থান) গিয়েছিলাম।’
সাক্ষাৎকারে বল টেম্পারিং নিয়েও বিস্ফোরক দাবি করেছেন প্রাভিন, ‘সব দলই কমবেশি বল টেম্পারিং করে। পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা একটু বেশিই করে। এখন তো মাঠে অনেক বেশি ক্যামেরা থাকে, সবকিছুই নজরদারিতে রাখা হয়। কিন্তু আগে এটা (টেম্পারিং) প্রচুর করা হতো। ওরা (পাকিস্তানিরা) বলের একদিক আঁচড়াতে থাকে। তবে বল শুধু টেম্পারিং করলেই হয় না, দলের কাউকে এর সুবিধা নিতে জানতে হয়। বলের একদিক আঁচড়ে কারও হাতে বল তুলে দিলেই রিভার্স সুইং হবে না। সেই বোলারেরও দক্ষতা থাকতে হবে।’